Governor visits Benachiti Market in Durgapur : পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের এই সফর যেন এক অনন্য উদাহরণ হয়ে রইল জনসংযোগের। রাজনীতির উচ্চসিংহাসন থেকে নেমে এসে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা, বাজার ঘুরে দেখা এবং নিজে হাতে সবজি কেনা—সব মিলিয়ে দুর্গাপুরবাসীর কাছে এই ঘটনা স্মরণীয় হয়ে থাকল। ধানবাদ সফরের আগে রাজ্যপালের এই সফর রাজনৈতিক মহলেও সাড়া ফেলেছে।
ঘটনায় বিবরণ
অন্ডালের কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আগমন ঘিরে উপচে পড়া ভিড় জমে যায়। সেখানেই রাজ্য আইন ও বিচার বিভাগীয় মন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতি কুশল বিনিময় করেন। তারপরেই রাজ্যপাল সোজা চলে যান দুর্গাপুরের অন্যতম জনপ্রিয় বাজার, বেনাচিতি মার্কেটে। এই বাজারেই বিভিন্ন ফল ও সবজির দোকানে গিয়ে তিনি পরিদর্শন করেন।
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল। তাদের সমস্যার কথা মন দিয়ে শোনেন। তিনি বলেন, “সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলে বাজারের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায়। তাই আমি নিজে এখানে এসে তাদের সঙ্গে কথা বললাম।” বাজারে রাজ্যপাল নিজে হাতেই কিছু সবজি কেনেন এবং সাধারণ মানুষের হাতে ছোট ছোট চকলেট তুলে দেন, যা দেখে খুশি হন অনেকেই, বিশেষ করে শিশুরা।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
এই সফর নিয়ে সরকারি পক্ষ থেকে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না এলেও, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করার মধ্যে এক অন্যরকম বার্তা থাকে। রাজ্যপাল আজ যেভাবে বাজারে গিয়ে মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, তা প্রশংসনীয়।”
স্থানীয় মতামত
বেনাচিতি বাজারের এক সবজি বিক্রেতা, কমল ঘোষ বলেন, “এই প্রথমবার আমাদের বাজারে একজন রাজ্যপাল এলেন। উনি আমাদের সঙ্গে বসে কথা বললেন, হাসলেন। এটা খুব ভালো লাগল।”
একজন ক্রেতা, অঞ্জলি মণ্ডল বলেন, “রাজ্যপাল চকলেট দিলেন আমার মেয়েকে। মেয়েটা খুশিতে লাফাচ্ছিল। একজন বড়মাপের নেতা এমন করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে খুশি হয়, সেটা আজ বোঝা গেল।”
বিশ্লেষণ
এই সফর নিছক প্রটোকল বা সৌজন্য সফর নয়, বরং এক নতুন ধরণের নেতৃত্বের ইঙ্গিত। বাজারে যেভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল কথা বললেন, তা মনে করিয়ে দেয় জনসংযোগমূলক প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি। বাজারের বর্তমান অবস্থা, মূল্যবৃদ্ধি, কৃষকদের কষ্ট, ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ—সবই রাজ্যপালের চোখে পড়েছে। যদিও এই সফরে কোনো সরকারি ঘোষণার কথা শোনা যায়নি, তবুও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে বাস্তব পরিস্থিতির কিছুটা হলেও ধারণা নেওয়া গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
রাজ্যপালের এই সফর প্রশাসনিক স্তরে কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে তার এই সরাসরি উপস্থিতি সম্ভবত রাজ্য সরকারের কাছে বাজার ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র তুলে ধরবে। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলেই আশাবাদী অনেকেই।
উপসংহার
দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে রাজ্যপালের এই সফর সাধারণ মানুষের কাছে একটি আনন্দঘন অভিজ্ঞতা হয়ে রইল। যেখানে রাজ্যপাল নিজে এসে সবজি কিনলেন, চকলেট বিতরণ করলেন এবং মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনলেন—এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে, এখনও রাজনীতি এবং প্রশাসনে মানবিকতার স্থান রয়েছে। এই সফর শুধুই একটি রাজনৈতিক ঘটনাচক্র নয়, এটি একধরনের বার্তা—মানুষের পাশে থাকাই শাসকের আসল কর্তব্য।