Meteorological Department predicts relief from intense heat : উত্তরবঙ্গজুড়ে তীব্র গরমের প্রকোপে যখন জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই আশার আলো দেখাচ্ছে আবহাওয়া দপ্তরের সাম্প্রতিক পূর্বাভাস। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির অনুপস্থিতি ও ক্রমাগত বেড়ে চলা তাপমাত্রা মানুষকে এমনভাবে নাজেহাল করে তুলেছে যে শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গাতেই যেন একটাই আর্তি শোনা যাচ্ছে, “একটু বৃষ্টি পড়ুক!” শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদা, দিনহাটা, আলিপুরদুয়ার থেকে শুরু করে উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর—প্রতিটি জেলাতেই রোদ যেন ত্রাসের রূপ নিয়েছে। শহরাঞ্চলে দিনের বেলায় রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা পড়ে থাকছে, দুপুর ১২টার পর থেকে লোকজন যেন ঘর ছেড়ে বেরোতে সাহস পাচ্ছে না। বহু দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতার দেখা নেই, হাটে-বাজারে বিকিকিনি প্রায় নেই বললেই চলে। গণপরিবহনে যাত্রীসংখ্যাও কমেছে চোখে পড়ার মতো।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসক ডা. সৌম্যজ্যোতি দে জানিয়েছেন, “প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্রতার কারণে মানুষ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ছে, শরীরে জলশূন্যতা দেখা দিচ্ছে, তাই আমরা নাগরিকদের বেশি করে জল পান করতে, তেলঝাল জাতীয় খাবার এড়িয়ে হালকা খাবার খেতে এবং ছাতা-টুপি ব্যবহার করে বেরোবার পরামর্শ দিচ্ছি।” শিলিগুড়ির রিকশাচালক সুভাষ দাস বলেন, “এই রোদে তো সকাল ১১টার পর কাজ করা যায় না, মাথা ঘুরে যায়, গাড়ি ফেলে ছায়ায় বসে থাকতে হয়।” এদিকে আবহাওয়া দপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অঞ্চলভেদে কিছু কিছু জায়গায় হালকা
বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও ভারী বর্ষণের কোনো সম্ভাবনা নেই। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিক তপন সরকার জানিয়েছেন, “উত্তরবঙ্গে একটি নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও সেটা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে মাঝারি থেকে হালকা বৃষ্টি হতে পারে কিছু এলাকায়, ফলে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে গরম থেকে।” এই খবরে যদিও কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সাধারণ মানুষ, কিন্তু শহরজুড়ে যে চরম গরমের যন্ত্রণা চলছে, তাতে বৃষ্টির জন্য প্রহর গোনা ছাড়া উপায় নেই।
বর্তমানে শিলিগুড়ির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসে আর্দ্রতা ৮১ শতাংশ, জলপাইগুড়িতে তাপমাত্রা ৩৮.৫, কোচবিহারে ৩৭.৮—এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শিশুরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারছে না, অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, বাজারে বিদ্যুৎচাহিদা বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, বহু এলাকায় লোডশেডিং-এর সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। “ছোট ছেলেকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছি, বাইরে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে,” বললেন জলপাইগুড়ির গৃহবধূ শর্মিষ্ঠা রায়। পরিবেশবিদদের মতে, এই ধরনের দীর্ঘ গ্রীষ্ম ও অনিয়মিত বৃষ্টি জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রভাব।
তাদের দাবি, যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে তাহলে কৃষিকাজ, চাষবাস এবং পানীয় জলের উৎসগুলিও সংকটে পড়তে পারে। এক কৃষক মানিক সরকার জানালেন, “এই গরমে জমিতে জল দেওয়া যাচ্ছে না, সেচের পাম্প চালাতে বিদ্যুৎ পাচ্ছি না, ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে।” সবমিলিয়ে উত্তরবঙ্গে বর্তমানে গরমের যে দুর্বিষহ পরিস্থিতি চলছে, তা শুধু শারীরিক অস্বস্তিই নয়, আর্থ-সামাজিকভাবে প্রচুর প্রভাব ফেলছে। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু জেলায় জল বিতরণ ও সচেতনতামূলক প্রচার শুরু হয়েছে বটে, তবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা—এতকিছুর পরেও যেন প্রকৃতি একটু সদয় হয় এবং এক পশলা বৃষ্টিতে মাটির সঙ্গে সঙ্গে প্রাণেও ফেরে স্বস্তি। বাতাসে এখন একটাই গন্ধ—বৃষ্টির অপেক্ষার, চোখে একটাই প্রার্থনা—মেঘ জমুক, আকাশ কাঁদুক, শহর জুড়ে হাওয়ায় ফিরুক একটু শান্তির ছোঁয়া।