Tuesday, July 22, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদেশট্রাক উল্টে ৯ টি গরুর মৃত্যু,উদ্ধার ১৫ টি গরু

ট্রাক উল্টে ৯ টি গরুর মৃত্যু,উদ্ধার ১৫ টি গরু

9 cows die in truck overturn, 15 cows rescued : পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারী থানার অন্তর্গত পালসিট সংলগ্ন ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে আজ সকাল থেকেই চরম চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে, যখন জাতীয় সড়কের পাশে পরপর ৯টি গরুর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাটি ঘটে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার ফলে, যেখানে একটি গরু বোঝাই ট্রাক বর্ধমান থেকে কলকাতার দিকে যাওয়ার সময় অপর একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে পড়ে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। দুর্ঘটনার তীব্রতা এতটাই ছিল যে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অন্তত ৯টি গরুর এবং গুরুতর আহত অবস্থায় থাকা আরও ১৫টি গরুকে স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ মিলিতভাবে উদ্ধার করে।

ট্রাকটি সম্পূর্ণভাবে দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং তার নিচেই চাপা পড়ে যায় গবাদি পশুগুলি। সকালে জাতীয় সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষজন প্রথমে ঘটনাটি দেখতে পেয়ে চিৎকার করে আশপাশের মানুষ ও পুলিশকে খবর দেয়। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় মেমারী থানার পুলিশ এবং শুরু হয় উদ্ধার কাজ। ক্রেন ডেকে এনে উল্টে থাকা ট্রাকটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, এবং গরুগুলির মৃতদেহ গাড়ি থেকে নামানো হয়। ঘটনাস্থলেই দেখা যায় অনেক গরু নিঃশব্দে পড়ে রয়েছে, আর বাঁচা গরুগুলিও চরম আতঙ্কে চিৎকার করছে। আহত গরুগুলিকে কাছাকাছি একটি খামারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই গরুগুলি কোথা থেকে আসছিল ও কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তার তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রায়ই রাতে বা ভোরবেলায় এই ধরনের গরু বোঝাই ট্রাক জাতীয় সড়ক দিয়ে ছুটে যায় এবং অধিকাংশ সময়ই গাড়িগুলির অবস্থা খুবই খারাপ থাকে, চালকরাও অনেক সময় ক্লান্ত বা অঘুমন্ত থাকেন, ফলে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। একজন স্থানীয় দোকানদার বললেন, “আমরা এমন ঘটনা এর আগেও দেখেছি।

ট্রাকগুলো এত গরু বোঝাই করে যে সামান্য ব্রেক ফেল করলেই বিপদ। প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার।” ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে জাতীয় সড়কে বেশ কিছুক্ষণের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক করতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। দুর্ঘটনার খবর শুনে পশুপ্রেমী সংগঠনগুলিও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং প্রশ্ন তুলেছে, গরু পরিবহনের ক্ষেত্রে কি কোন নিয়ম মানা হচ্ছে না? একজন পশু অধিকারকর্মী, অনন্যা সেন জানান, “এভাবে গরু পরিবহন সম্পূর্ণ অমানবিক এবং আইন বিরুদ্ধ। এমনকি পশুরাও জীবন্ত প্রাণ। ট্রাকে গাদাগাদি করে, জলহীন ও বাতাসহীন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যার ফলেই এমন মৃত্যু ঘটছে।” পশু কল্যাণ বোর্ডের পক্ষ থেকেও এই ঘটনার তদন্ত চাওয়া হয়েছে বলে খবর। এই দুর্ঘটনার জেরে প্রশাসনকেও নড়েচড়ে বসতে দেখা গেছে।

মেমারী থানার ইনচার্জ জানিয়েছেন, “গরুগুলি কোন জায়গা থেকে আনা হচ্ছিল, তাদের মালিক কে, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কি না এবং পরিবহনের অনুমতি ছিল কিনা সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এই ঘটনার ফলে পশু পরিবহনের আইন ও নিয়মাবলী কতটা মানা হচ্ছে, তা নিয়েও বড় প্রশ্ন উঠে গেছে। অনেকেই দাবি করছেন, রাতে বা ভোরবেলায় গোপনে গরু পাচার বা অবৈধ পরিবহনের জন্যই এমন ট্র্যাজেডি ঘটছে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, এখনই পাচারের কথা বলা যাচ্ছে না, তবে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক স্থানীয় বৃদ্ধার কথায়, “এই গরুগুলিও প্রাণী, ওরাও ব্যথা পায়, ভয় পায়। চোখের সামনে এতগুলো প্রাণীকে মরতে দেখে মনটা ভারী হয়ে গেল।” এমন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই যেন আজকের সমাজে অনেক বেশি প্রয়োজন। যাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

কেউ বলছেন, “ট্রাক উল্টে রাস্তায় পড়ে থাকায় যদি আরেকটা বড় গাড়ি এসে ধাক্কা মারত, তাহলে আরও বড় দুর্ঘটনা হতে পারত।” প্রশাসনের দায়িত্ব এখন শুধু দুর্ঘটনার তদন্ত নয়, পাশাপাশি ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া। যেমন—গরু পরিবহনের সময় গাড়ির স্বাস্থ্য, চালকের লাইসেন্স ও অভিজ্ঞতা, নিরাপদ বেঁধে রাখা, ঠিকঠাক বায়ু চলাচল এবং পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা—এসব দেখতে হবে। শুধু দোষারোপ নয়, মানুষ, প্রশাসন, এবং আইন সবার একযোগে কাজ করলেই এই ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। ঘটনাটি আরও একবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, প্রাণীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা কতটা উদাসীন। ৯টি গরুর মৃত্যু শুধু একটি সংখ্যাই নয়, এটি একটি প্রাণহানির ট্র্যাজেডি, যার পেছনে রয়েছে মানুষের অবহেলা, গাফিলতি এবং নিয়ম না মানার প্রবণতা।

এখন দেখার, প্রশাসন এই ঘটনার কতটা স্বচ্ছ তদন্ত করে এবং ভবিষ্যতের জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আপাতত, উদ্ধার হওয়া ১৫টি গরুর চিকিৎসা চলছে এবং পুলিশ গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এখনও পর্যন্ত কোন স্থানীয় বাসিন্দা বা চালকের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি, তবে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘটনার ভিডিও ও ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গেছে, এবং মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। এখন সময় এসেছে গরু বা যে কোনও পশু পরিবহনকে নিয়ন্ত্রণে এনে, তাদের প্রতি আরও মানবিকতা দেখানোর—কারণ তারা কথা না বললেও, তাদের প্রাণের মূল্য কম নয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments