Tuesday, July 22, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যনিম্নচাপের ঘূর্ণিতে কাঁপবে দক্ষিণবঙ্গ

নিম্নচাপের ঘূর্ণিতে কাঁপবে দক্ষিণবঙ্গ

South Bengal to be shaken by low-pressure system:বাঙালির বর্ষাকাল মানেই একদিকে ভেজা ভেজা আনন্দ, অন্যদিকে প্রকৃতির ভ্রুকুটি। দক্ষিণবঙ্গের আকাশে ফের কালো মেঘ জমেছে। আবারও এক নিম্নচাপের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগরের উপর। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যের আবহাওয়া দফতর সতর্কতা জারি করেছে—এই নিম্নচাপের ঘূর্ণির প্রভাবে আগামী ক’দিন দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ, দমকা হাওয়া আর প্রবল বৃষ্টির এমন পূর্বাভাসে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন দুশ্চিন্তা, তেমনই প্রশাসনিক স্তরেও তৈরি হয়েছে সতর্কতা।আবহাওয়া দফতরের সূত্রে জানা গেছে, বুধবার থেকেই উত্তর বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। সেটিই ধীরে ধীরে নিম্নচাপে রূপান্তরিত হতে চলেছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে। এই নিম্নচাপের জেরে বুধবার থেকে রবিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম—এই চার জেলায় ঝোড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। হাওয়ার গতি ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই হালকা বৃষ্টি হয়েছে এবং আগামী কয়েকদিন তা বাড়বে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।উত্তরবঙ্গেও আবহাওয়ার একটা প্রভাব পড়বে। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার—এই পাঁচ জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গেই বইবে দমকা হাওয়া, যার গতিবেগও থাকবে ৩০–৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার মধ্যে।

দক্ষিণবঙ্গের সম্ভাব্য বন্যা বা দুর্যোগ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার মৎস্যজীবীদের জন্য সমুদ্রে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই থেকে কার্যকর হবে এই নির্দেশ। এই সময়কালে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমুদ্রে না পাঠানোর জন্য প্রশাসনের তরফে বারবার প্রচার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এবং সংশ্লিষ্ট মহকুমা অফিসগুলিকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জলমগ্ন এলাকা চিহ্নিত করে আগেভাগেই পাম্প মেশিন এবং উদ্ধার সামগ্রী মজুত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপের পূর্বাভাস পেয়ে চিন্তায় পড়েছেন নদী তীরবর্তী এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। মৎস্যজীবীদের অনেকেই জানালেন, এই সময়ে সমুদ্রে না যেতে পারলে আয়ের দিক থেকে ক্ষতি হবে। পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা উপকূলের এক মৎস্যজীবী বললেন, “বৃষ্টি হলে মাছ পাওয়া যায় বেশি, কিন্তু ঘূর্ণিঝড় থাকলে যেতে পারি না। এবারও তিন চারদিন সমুদ্রে না গেলে আমাদের অনেক টাকার লোকসান হবে।”অন্যদিকে শহর কলকাতায় ভিজে ভিজে অফিস যাতায়াত, রাস্তায় জল জমে যানজট—সব মিলিয়ে সাধারণ নাগরিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়ী মহল বলছে, গত কয়েকদিন ধরেই বিক্রি কমেছে। বৃষ্টি শুরু হলে আরও সমস্যা হবে।

2Q==

বিগত কয়েকবছরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার ধরণ অনেকটাই পাল্টে গেছে। হঠাৎ ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ, ঝড়বৃষ্টি যেন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিছুদিন আগেই বঙ্গোপসাগরের ওপর সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল ত্রাস ছড়িয়েছিল সমুদ্র উপকূলে। এবারও তারই ধারাবাহিকতায় এই নিম্নচাপ। যদিও এটি বড় কোনো ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা এখনই নেই, তবু সতর্ক থাকতে হবে বলেই মত আবহাওয়াবিদদের,শহর কলকাতার তাপমাত্রাও মঙ্গলবার রেকর্ড করেছে ২৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৬৮ থেকে ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা এমন বৃষ্টিপূর্ণ আবহাওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় শহরের তাপমাত্রা থাকবে ২৮ থেকে ৩৩ ডিগ্রির মধ্যে।আগামী কয়েকদিন দক্ষিণবঙ্গে অব্যাহত থাকবে বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়ার প্রকোপ। কলকাতা সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতেও বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হবে। শহরের একাধিক এলাকায় জল জমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে বেহালা, পাটুলি, গড়িয়া, নিউটাউন—এই এলাকায় আগেভাগেই ম্যানহোল পরিষ্কার ও পাম্পিং স্টেশন প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা পুরসভা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments