Procession in support of Bratya Bose in Dum Dum:-মদমের রাজপথ যেন এদিন এক অন্য চেহারা নিল। মিছিলের সারি, পতাকা, স্লোগানে মুখর জনতা—সব মিলিয়ে মঙ্গলবার দমদম থেকে নাগেরবাজার হয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত এক শক্তিশালী বার্তা ছড়িয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। দমদমের বিধায়ক তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নির্দেশে আয়োজিত এই মিছিলে শুধু দলীয় কর্মী বা সমর্থকরাই ছিলেন না, পা মেলান সাধারণ মানুষও। মূলত ১ থেকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত দমদম ও দক্ষিণ দমদম পৌরসভার আওতাধীন এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা এই মিছিলে অংশ নেন। উদ্দেশ্য একটাই—২১ জুলাই শহীদ দিবসের প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রতিবাদ জানানো ভিন্রাজ্যে বাঙালিদের উপর লাগাতার হেনস্তার বিরুদ্ধে এবং সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে।সকাল থেকেই নাগেরবাজার মোড়ে জমায়েত হতে থাকেন মানুষ। কারো হাতে ছিল শহীদ দিবসের ব্যানার, কারো হাতে ‘বাঙালি মানে অবহেলার প্রতীক নয়’ লেখা পোস্টার। পতাকার ঢেউয়ে ঢেকে গিয়েছিল রাস্তার দুই ধারের ফ্লাইওভার। মিছিলে সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ এবং মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ততা। অনেকেই হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাঁটছিলেন, যেখানে লেখা ছিল “আমরা বাঙালি, মাথা নত করব না”, “ভিন রাজ্যে বাঙালির রক্ত বয়ে যাবে না আর।”
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/08/bratya.jpg)
মিছিলের শুরুতেই ছিলেন দমদম পৌরসভার পৌর উপ-প্রধান বারুন নট্ট, দক্ষিণ দমদম শহর তৃণমূল সভাপতি রাজু সেন শর্মা (সুকান্ত), পৌর প্রতিনিধি, অঞ্চল নেতৃত্ব এবং হাজার খানেক কর্মী ও সমর্থক। পথচলতি মানুষের একাংশও এই মিছিল দেখে থেমে দাঁড়িয়ে পড়েন, কেউ মোবাইলে ভিডিও করেন, কেউ আবার স্লোগানেও গলা মেলান।এই প্রসঙ্গে পৌর উপ-প্রধান বারুন নট্ট বলেন, “ব্রাত্য বসুর নেতৃত্বে দমদম সবসময় প্রতিবাদী চেতনার জায়গা থেকে দাঁড়ায়। ভিন্রাজ্যে বাঙালিদের যেভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, সেটা আর বরদাস্ত করা হবে না। পাশাপাশি আমরা ২১ জুলাই শহিদ দিবসের জন্য সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে তোলার কাজ করছি। এই মিছিল তারই অঙ্গ।”রাজু সেন শর্মা জানান, “তৃণমূল কংগ্রেস একমাত্র দল যারা বাঙালির সম্মান ও অধিকারের কথা বলে। যেভাবে অন্যান্য রাজ্যে আমাদের ভাইবোনেরা নিগৃহীত হচ্ছেন, তার প্রতিবাদ আজ দমদমের মানুষ রাস্তায় নেমে করেছেন। ধর্মতলার শহিদ দিবসে এই আওয়াজ আরও জোরালো হবে।”
মিছিল চলাকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল যথেষ্ট আঁটসাঁট। দমদম থানার পুলিশ, ট্রাফিক কর্মী, সিভিক ভলান্টিয়াররা গোটা রুটজুড়ে ছিলেন। যানচলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও, মানুষ এই মিছিলকে ‘সত্যিকারের প্রতিবাদ’ বলে অভিহিত করেছেন।স্থানীয় বাসিন্দা সুকন্যা রায় জানান, “বাঙালি হয়েও আজ অনেক জায়গায় আমাদের অপমানিত হতে হয়। রাজনীতি নিয়ে যতই বিতর্ক হোক, আজকের এই মিছিলটা বলল—আমরা একসাথে থাকতে চাই, আমাদের প্রাপ্যটা চাই।”মিছিল শেষ হয় দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের সামনে এসে, যেখানে সংক্ষিপ্ত সভা করেন তৃণমূল নেতারা। সেখানে বলা হয়, এই আন্দোলন একদিনের নয়—আগামী দিনে ধর্মতলার মঞ্চে গর্জে উঠবে গোটা দমদম, তিলোত্তমা কলকাতা এবং বাংলার প্রতিটি কোণ।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে অসম, দিল্লি, ওড়িশা সহ একাধিক রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষদের উপর আক্রমণের নানা অভিযোগ সামনে এসেছে। কখনও কলেজ ছাত্রদের ‘ভিনরাজ্যের’ বলে হেনস্তা করা হয়েছে, কখনও শ্রমিকদের পেটানো হয়েছে, আবার কখনও বাংলাভাষী শিক্ষকদের স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই অবস্থায় শাসকদলের পক্ষ থেকে এহেন প্রতিবাদ মিছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।এছাড়া, আসন্ন ২১ জুলাই শহীদ দিবসের প্রস্তুতিতেও এই মিছিল বড় ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব। একদিকে যেমন মানুষের মধ্যে তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতা আবারও দৃঢ় হবে, তেমনি কর্মী-সমর্থকদের উদ্দীপনাও নতুন করে উজ্জীবিত হবে।মিছিলের পরে এক সাংবাদিক বৈঠকে দক্ষিণ দমদমের এক তৃণমূল নেত্রী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেবল একজন মুখ্যমন্ত্রী নন, তিনি আমাদের অস্তিত্বের লড়াইয়ের প্রতীক। এই মিছিল তাঁর সেই লড়াইকে সম্মান জানানো, আর একুশে জুলাই আমরা ধর্মতলায় গিয়ে আবারও সেই বার্তা পৌঁছে দেব বাংলার ঘরে ঘরে।”মিছিলে অংশ নেওয়া এক কলেজছাত্রী জানায়, “আজ আমরা হাঁটলাম নিজেদের অধিকারের জন্য। পড়াশোনার জন্য, কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়, কিন্তু সেখানে গিয়ে শুনতে হয়—তুমি বাঙালি! যেন আমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক! আজ ব্রাত্য বসু দাদার নেতৃত্বে আমরা এক কণ্ঠে বললাম—আর না!”সার্বিকভাবে বলা যায়, দমদমের এই প্রতিবাদ মিছিল কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং তা হয়ে উঠল এক সামাজিক বার্তা—“আমরা বাঙালি, আমরা রাস্তায় নামি শুধু ভোটের জন্য নয়, নিজেদের মর্যাদার জন্যও।”