Skeleton recovery in Chunchura Daspara creates excitement : চুঁচুড়া পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের দাসপাড়া যেন হঠাৎ করেই দাঁড়িয়ে গেলো এক রহস্যঘেরা কাহিনির মুখোমুখি। আজ সকালে, যখন পুরসভার সাফাই কর্মীরা প্রতিদিনের মতো রাস্তাঘাট ও ডাস্টবিন পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত, তখনই হঠাৎ তারা একটি প্লাস্টিক মোড়ানো অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেন। প্রথমে মনে হয়েছিল হয়তো কোনো বর্জ্য বা পচা কিছু, কিন্তু যখন খোলসা হয় সেই প্লাস্টিকের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে মানুষের মাথার খুলি আর দেহের কঙ্কালসদৃশ অংশ, তখনই শুরু হয় চাঞ্চল্য। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় চুঁচুড়া থানায়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে কঙ্কালটি উদ্ধার করে এবং প্রাথমিকভাবে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে। গোটা দাসপাড়া তখন ভয়ে, বিস্ময়ে আর উৎকণ্ঠায় ভরে ওঠে। কেউ কেউ ভাবছেন, “এটা কি খুনের ঘটনা? কেউ কি গোপনে কোনো অপরাধ লুকাতে চেয়েছে?” আবার কেউ বলছেন, “এই কঙ্কাল কি তবে মেডিক্যাল স্টুডেন্টদের কোনোরকম গবেষণার উপকরণ ছিল?” কেননা জানা যায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্ররা প্রায়ই মানবদেহের কঙ্কাল সংগ্রহ করে পড়াশোনার প্রয়োজনে, যদিও সেই প্রক্রিয়া নিয়ম মেনেই হয়। পুলিশও সেই সম্ভাবনাটিকেই এখন গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, বিশেষ করে কারণ কঙ্কালটি অনেকটাই পুরোনো এবং তার কোনো তাজা দাগ বা রক্তচিহ্ন নেই।
\ কিন্তু প্রশ্ন একটাই—যদি এটি পড়াশোনার উপকরণও হয়, তবে এমনভাবে প্রকাশ্যে রাস্তার পাশে কেন ফেলে দেওয়া হলো? চুঁচুড়ার দাসপাড়া এমনিতেই শান্তিপ্রিয়, পারিবারিক বসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে সাধারণত বড় কোনো অপরাধ ঘটে না, তাই এমন একটি ঘটনায় সকলেই অবাক। স্থানীয় এক বাসিন্দা, মৃণাল কান্তি দত্ত জানান, “আমরা বহু বছর ধরে এখানে থাকি, এমন কিছু কোনোদিন দেখিনি। কারো মৃত্যুর খবরও শোনা যায়নি সম্প্রতি। এটা বাইরে থেকে কেউ এনে ফেলেছে বলেই মনে হচ্ছে।” এলাকাবাসী আরও জানান, দাসপাড়ায় কোনও সিসিটিভি নেই। যার ফলে পুলিশও বোঝে উঠতে পারছে না ঠিক কখন, কোন সময় এই কঙ্কালটি এখানে ফেলা হয়েছে। এমনকি কেউ কাউকে রাতে সন্দেহজনক অবস্থায় দেখেছে বলেও কেউ জানাতে পারেননি। ফলে পুরো বিষয়টিই ধোঁয়াশায় ঢাকা। বর্তমানে কঙ্কালটিকে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফরেনসিক টেস্ট থেকেই জানা যাবে এটি পুরুষ না নারী, বয়স কত, কতদিন আগের, এবং কোনো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে কি না। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই তদন্তের পরবর্তী ধাপ এগোবে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, “এই কঙ্কাল যদি সত্যিই খুনের প্রমাণ হয়, তাহলে সেটি হবে এক চরম অপরাধ। আবার যদি এটি গবেষণার উদ্দেশ্যে আনা হয়ে থাকে এবং পরে কোনোভাবে নষ্ট বা অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলেও সেটি যথেষ্ট দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ এবং আইনত দণ্ডনীয়।” জানা যায়, এই ধরনের কঙ্কাল সাধারণত মেডিক্যাল কলেজ বা প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে সরকারী অনুমতি নিয়েই আনা যায়। কিন্তু এই কঙ্কালের উৎস কোথা থেকে, কে নিয়ে এসেছিল, এবং কেন ফেলে গেলো তা জানার জন্য আশেপাশের সমস্ত হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ ও বেসরকারি ইনস্টিটিউটে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে পুলিশ। গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই এখন বাড়ির বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন, বিশেষ করে মহিলারা ও বয়স্করা। স্থানীয় এক গৃহবধূ বলেন, “আজ সকালে ছেলে স্কুলে যাওয়ার সময় ভয়ে ওকে একাই যেতে দিইনি।

এমন একটা অশুভ জিনিস কুড়িয়ে পাওয়া খুবই অস্বস্তিকর।” প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে সত্য উদঘাটনের চেষ্টা হবে। চুঁচুড়ার বিধায়ক ও পুরসভা কর্তৃপক্ষ এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছেন। পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে এবং অস্থায়ীভাবে দুটি সিসিটিভি বসানো হচ্ছে দাসপাড়ার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে। তবে এই ঘটনাটি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরছে—আর তা হলো শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আজকের দিনে সিসিটিভি ক্যামেরা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে এমন জায়গায় যেখানে আবর্জনা ফেলার জায়গা রয়েছে এবং সহজেই অপরাধমূলক কার্যকলাপ ধামাচাপা দেওয়া যায়। এই ঘটনার পর চুঁচুড়া পুরসভা ঘোষণা করেছে, প্রতিটি ওয়ার্ডে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যায়ক্রমে সিসিটিভি বসানো হবে এবং সাফাই কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে যাতে তারা কোনো অস্বাভাবিক জিনিস দেখলেই তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনকে জানায়। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা গুজব ছড়াতে শুরু করেছে। কেউ বলছে এটি নরবলির প্রমাণ, কেউ বলছে এটি তান্ত্রিকদের কাজ। তবে প্রশাসন এইসব জল্পনা ও গুজবে কান না দিয়ে শুধু অফিসিয়াল রিপোর্ট ও তথ্যেই বিশ্বাস রাখতে বলেছে। চুঁচুড়ার দাসপাড়ার এই রহস্যঘেরা কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনাটি এখন গোটা হুগলি জেলার চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। সকলেই জানতে চায়—এই কঙ্কালের পিছনে লুকিয়ে থাকা আসল গল্পটা কী? এটি কি নিছকই এক দায়িত্বজ্ঞানহীন মেডিক্যাল সরবরাহের ফল, নাকি কোনো ভয়ঙ্কর অপরাধের প্রমাণ? পুলিশ তদন্তে নামলেও এই কাহিনির পরিণতি জানতে এখন সকলের অপেক্ষা। আর এই অজানা আতঙ্ক, অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া সত্য, আর রহস্যময় কঙ্কালের গল্প এখন চুঁচুড়ার অলিতে গলিতে গুঞ্জন তোলে। সময় বলবে এর শেষ কোথায়।