The Sarbji Task Force attacked the Barakar and Niya Matpur areas of the Kultur.:-মঙ্গলবার সকালটা ছিল বরাকর ও নিয়ামতপুরের সবজি ব্যবসায়ীদের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। প্রতিদিনের মতো যখন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা চেনা ছন্দে দিনের বেচাকেনা শুরু করেছিলেন, ঠিক তখনই আচমকা হাজির হল পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের টাস্ক ফোর্সের একটি দল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁরা শুরু করে দিলেন একের পর এক দোকানে হানা, মূল্য তালিকা পরীক্ষা, বিক্রিত সবজির মান যাচাই, এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন। বরাকর বাজার থেকে শুরু করে নিয়ামতপুর পর্যন্ত এই অভিযান চলে কয়েক ঘণ্টা ধরে। মূল লক্ষ্য ছিল বাজারে কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধি রোধ, সবজির সঠিক দামে বিক্রি নিশ্চিত করা এবং সাধারণ মানুষ যাতে প্রতারিত না হন, তা নিশ্চিত করা। প্রশাসনের এই হঠাৎ পদক্ষেপে চমকে ওঠেন বিক্রেতারা, আবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন ক্রেতারা। বরাকরের সবজি বিক্রেতা বিষ্ণু দাস বলেন, “প্রশাসন আসাতে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম, তবে পরে বুঝলাম যে এই অভিযান ভালোর জন্যই। আমাদের তো আসলে লাভ খুবই কম, মাঝে দালালেরাই দাম বাড়িয়ে দেয়।” অভিযানের সময় টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে বাজারের প্রতিটি অংশ ঘুরে দেখেন। কারা কোন সবজি কত দামে বিক্রি করছেন, কোথায় দাম তালিকা নেই, কোথায় ওজনে গরমিল আছে—এসব দিক বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হয়। বাজারে সবজি বিক্রেতাদের একাংশ যাঁরা কোনো নির্দিষ্ট মূল্যতালিকা ছাড়াই সবজি বিক্রি করছেন, তাঁদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যেন তাঁরা দামের নির্দিষ্ট বোর্ড ঝুলিয়ে রাখেন দোকানে।

এই অভিযানের নেতৃত্বে থাকা আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল সাংবাদিকদের জানান, “বরাকর ও নিয়ামতপুর—দুই বাজারেই আমরা পরিদর্শন করেছি। কিছু কিছু সবজির দাম একটু ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও, সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে। তুলনামূলকভাবে গত বছরের এই সময়ে বাজারে যে অস্থিরতা ছিল, এ বছর তা অনেকটাই কম।” তিনি আরও বলেন, “আমরা বিক্রেতাদের বলেছি—ন্যায্য দামে বিক্রি করুন, কারণ কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবার সাধারণ ক্রেতাদেরও বলেছি—সচেতন হোন, দর কষাকষি করুন, অকারণে বেশি দাম দিয়ে সবজি কিনবেন না।”এই অভিযানকে ঘিরে সাধারণ মানুষ যথেষ্ট উৎসাহী এবং খুশি। নিয়ামতপুরের এক মহিলা ক্রেতা মীনাক্ষী দে বলেন, “প্রতিদিন বাজারে এসে দেখতাম একেক দিন একেক দাম। অনেক সময় একই সবজি এক দোকানে ৪০ টাকা, তো আরেক দোকানে ৬০ টাকা। আজ প্রশাসন দেখে ভাল লাগল। অন্তত কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে।”প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চলতি বর্ষার প্রভাব ও পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে কিছু নির্দিষ্ট সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে কুমড়ো, কাঁচা লঙ্কা, টমেটো ও পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের। তবে টাস্ক ফোর্সের পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, এই দাম বৃদ্ধির হার এখনও উদ্বেগজনক নয় এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও, বাজারে পচা সবজি রাখা এবং ওজনে কারচুপি করার অভিযোগও খতিয়ে দেখেন টাস্ক ফোর্স সদস্যরা। একাধিক দোকানে মেপে দেখা হয়, সত্যিই ওজন মেপে দিচ্ছেন কি না বিক্রেতারা। কিছু দোকানে গরমিল ধরা পড়লেও তাদের সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুনরায় এরকম ধরা পড়লে জরিমানা করা হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।জেলা প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বরাকর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক অসীম বসু বলেন, “বাজারে গরিব মানুষ আসেন, তাঁরা যেন ঠকে না যান সেটাই আমাদের দায়িত্ব। প্রশাসনের এই অভিযান আমাদের সচেতন করল—আমরাও চেষ্টা করব যাতে কেউ অতিরিক্ত মুনাফা না করে।”

অন্যদিকে, বাজারে অভিযান চালানোর সময় ড্রোন ক্যামেরা ও হ্যান্ডহেল্ড রেকর্ডার দিয়ে কিছু মুহূর্ত ক্যাপচার করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে বিশ্লেষণ করে আরও ভালোভাবে বাজার মনিটরিং করা যায়। এই প্রথমবার এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।এই ধরনের অভিযান নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন আধিকারিকেরা। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে জেলার অন্যান্য বড় বাজার যেমন আসানসোল, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ ও দুর্গাপুরেও এধরনের অভিযান চালানো হবে। জেলা শাসকের দফতর থেকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে সমস্ত বিডিও এবং বাজার কমিটিকে—বাজারে যদি অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ ওঠে, তা যেন সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়।এই ঘটনায় একদিকে যেমন সচেতন হলেন বিক্রেতারা, অন্যদিকে উৎসাহিত হলেন সাধারণ ক্রেতারা। স্বচ্ছতা, নিয়ম এবং দায়িত্বশীলতার সমন্বয়ে তৈরি এই উদ্যোগ যদি ধারাবাহিকভাবে বজায় থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে বাজার ব্যবস্থাপনায় একটা ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটতে বাধ্য।অতএব বলা যায়, ‘সবজির বাজারে শুধুই সবজির গন্ধ নয়, এবার স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতার ছোঁয়া’, আর তার কৃতিত্ব যায় টাস্ক ফোর্সের এই সাহসী ও সময়োপযোগী অভিযানের দিকে।