Terrible accident in Jammu and Kashmir, car falls into deep ditch: জম্মু-কাশ্মীরের ডোডা জেলার ত্রানখেল পাহাড়ি এলাকার সকালটা যেন আর পাঁচটা দিনের মতো ছিল না। মঙ্গলবার ভোরবেলায় যখন পাহাড়ি রাস্তা ধরে আস্তে আস্তে এগোচ্ছিল একটি যাত্রীবাহী গাড়ি, তখনই আচমকা ঘটে যায় এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। ড্রাইভারের সামান্য এক ভুল বা হয়তো রাস্তার সংকীর্ণতা—যার ফলেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি এক লাফে পড়ে যায় প্রায় কয়েকশো ফুট গভীর খাদে। মুহূর্তের মধ্যেই নিস্তব্ধ হয়ে যায় চারপাশ। গাড়ির মধ্যে থাকা মানুষের আর্তনাদ, ছিটকে পড়া শরীরের দৃশ্য—সব মিলিয়ে ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকল ত্রানখেল।জানা গেছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি একটি স্থানীয় যাত্রীবাহী যান ছিল, যাতে অন্তত ২৪ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এবং বাকি ১৯ জন গুরুতর জখম হন। আহতদের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল উদ্ধার করে নিয়ে যায় ডোডা জেলা হাসপাতাল। কিন্তু যাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল, তাঁদের পাঠানো হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্য শ্রীনগর মেডিক্যাল কলেজে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, “সবকিছু এমনভাবে ঘটে গেল যে আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়িটা খাদে পড়ে যায়। মুহূর্তেই মানুষের চিৎকারে গমগম করে ওঠে চারপাশ।”
ত্রানখেল এলাকাটি জম্মুর একটি প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চল। এখানে রাস্তা বেশ সরু, একদিকে খাড়া পাহাড়, আর একদিকে গভীর খাদ। বর্ষার সময় এই রাস্তাগুলি আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। গত কয়েকদিন ধরেই ওই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, যার ফলে মাটি নরম হয়ে গিয়েছিল এবং রাস্তা ছিল পিচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে চালকরা যখন গাড়ি চালান, তখন খুব সামান্য অসতর্কতাও ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।জম্মুর পুলিশ সুপারিশনাল অফিসার গরেন্দর সিং জানান, “এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে রেসকিউ টিম পাঠাই। আহতদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে।” পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “এই রাস্তাগুলিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এবং গাড়ির গতিবেগ সীমিত রাখতে আমরা আগেই সতর্কতামূলক নির্দেশিকা জারি করেছিলাম।”স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই এই পাহাড়ি রাস্তাগুলোর সংস্কার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির দাবিতে আওয়াজ তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “প্রতিবারই এমন দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রশাসন কিছুদিনের জন্য সক্রিয় হয়, কিন্তু স্থায়ী কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। গার্ডরেল নেই, সাইনবোর্ড নেই, অনেক জায়গায় রাস্তাও ধসে পড়েছে। আমাদের জীবন নিয়ে যেন কেউ ভাবে না।”ঘটনার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোজ সিনহা এক টুইট বার্তায় শোকপ্রকাশ করে বলেন, “ডোডার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। প্রশাসন আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।” একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, মৃতদের পরিবারকে ₹৫ লক্ষ এবং আহতদের ₹৫০ হাজার করে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হবে।এই ঘটনাটি নতুন করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল পাহাড়ি রাস্তায় নিরাপত্তার অভাব এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা। জম্মু-কাশ্মীরের মতো অতি দুর্গম অঞ্চলে যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই রাস্তাগুলির ওপর নির্ভর করেন, সেখানে প্রতিটি দুর্ঘটনাই বড়সড় জীবনহানির আশঙ্কা ডেকে আনে। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এই দুর্ঘটনাকে একটি শিক্ষা হিসেবে নিয়ে অবিলম্বে রাস্তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করা।

একদিকে যেমন পাহাড়ি এলাকায় গাড়ি চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনই অন্যদিকে চালকদের প্রশিক্ষণ, রাস্তায় নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণ, সময়মতো যানবাহনের স্বাস্থ্যপরীক্ষা—এই সমস্ত দিকগুলোতে নজর দিতে হবে। স্থানীয়দের মতে, এই গাড়িটির আগেও একাধিক বার যান্ত্রিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। অথচ তার কোনো সদ্ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।এই দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক, এক বৃদ্ধা যিনি তাঁর নাতিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন ডাক্তারের কাছে, এবং একজন দিনমজুর যিনি সদ্য কাজে যাচ্ছিলেন। তাঁদের অকাল মৃত্যু শুধু তাঁদের পরিবার নয়, সমগ্র এলাকার জন্য এক বিশাল শোকের খবর। এই পাহাড়ি জনপদে এমনিতেই চিকিৎসা ও পরিবহণ ব্যবস্থা সীমিত, তার মধ্যে এমন দুর্ঘটনা বারবার জীবনের অনিশ্চয়তার কথাই সামনে নিয়ে আসে।