Monday, July 14, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউস‘আর বঞ্চনা নয়’, উত্তরবঙ্গে প্লাস সুর চড়ালেন শমীক

‘আর বঞ্চনা নয়’, উত্তরবঙ্গে প্লাস সুর চড়ালেন শমীক

‘No more deprivation’, Shamik raises positive tone in North Bengal:-উত্তরবঙ্গে বরাবরই অবহেলার অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা লেগেই থাকে। আর এবার সেই আগুনে ঘি ঢাললেন সদ্য রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে বসা শমীক ভট্টাচার্য। বিজেপি রাজনীতির এই অন্যতম মুখ সোমবার প্রথমবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কার্যত বারুদের মতো বাক্যবাণ ছুড়ে দিলেন। বাগডোগরা বিমানবন্দরে পা রেখেই তিনি বলেন, “আর বঞ্চনা নয়, উত্তরবঙ্গ এবার জবাব দেবে। আগামী বিধানসভা ভোট মানুষের লড়াই হবে, শাসকের বিরুদ্ধে মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদ হবে।” তাঁর এই উক্তি যেন রাজ্যের রাজনৈতিক আকাশে নতুন সুর ছড়িয়ে দিল।এই সফর যে নিছক সৌজন্যমূলক নয়, তা প্রথম দিনেই বুঝিয়ে দিলেন শমীক। তাঁর অভিযোগ—উত্তরবঙ্গকে নিয়ে যারা এতদিন কান্নাকাটি করত, আজ তারাই এই অঞ্চলকে ‘বঞ্চনা আর প্রতারণার কুয়ো’য় ঠেলে দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ প্রশাসনিক দফতর ‘উত্তরকন্যা’কে নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, “এই অফিস তো প্রতীকী। বাজেট বরাদ্দ যা হয়েছে, তাতে উত্তরকন্যায় তো জলও গরম হয় না। বরং সেই টাকাও পাঠানো হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন কেন্দ্রে। এটা স্পষ্ট পরিকল্পিত বঞ্চনা।” এই অভিযোগের মাধ্যমে তিনি স্পষ্টতই উত্তরবঙ্গের দীর্ঘদিনের ‘বঞ্চনার রাজনীতি’কে হাতিয়ার করলেন।

samik 2025 07 03 10 39 54

তিনি জানান, বিজেপি এবার ‘উত্তরকন্যা অভিযান’-এর নামে বৃহৎ কর্মসূচিতে নামবে। যার নেতৃত্ব দেবেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই অভিযান শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, উত্তরবঙ্গের মানুষের ‘অবহেলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ’ হিসেবেই তুলে ধরা হবে। “মানুষের পাশে আছি, মানুষের দাবির প্রতি দায়বদ্ধ আমরা,”— বলেই মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করলেন শমীক।শিলিগুড়ির রাজনৈতিক পরিবেশে এই বার্তাকে নিছক বক্তব্য বলে কেউ দেখছেন না। বরং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ উত্তরবঙ্গে গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছিল। বহু আসনে তারা জিতেছিল বা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার জায়গায় পৌঁছেছিল। তবে এরপর শাসকদল ‘উন্নয়নের ধারা’ অব্যাহত রাখার দাবি করে ফের সংগঠনকে সক্রিয় করে তোলে। তাই উত্তরবঙ্গে বিজেপির পুনরুদ্ধার খুব সহজ নয়।তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য এই সফরকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “উত্তরবঙ্গে আমরা উন্নয়নের কাজ করছি। নতুন হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, কৃষি প্রকল্প—সব কিছুতেই বিনিয়োগ হয়েছে। বিজেপি মানুষের সমস্যার কথা না বলে শুধু বিভাজনের রাজনীতি করছে।” তৃণমূলের দাবি, এই সফরের মাধ্যমে বিজেপি আবার পুরনো ‘উত্তরবঙ্গ পৃথক রাজ্য’ ইস্যু সামনে আনতে চাইছে, যেটা আসলে বিজেপির ‘গোপন এজেন্ডা’। তবে শমীক ভট্টাচার্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “আমরা এক ভারত, এক বাংলা চাই। কিন্তু একশো বছরের বঞ্চনা মেনে নেওয়া যায় না। উত্তরবঙ্গের প্রতি অবিচার বন্ধ হোক।”

শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার, মালদহ থেকে আলিপুরদুয়ার—সব জায়গাতেই বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা শমীকের সফরকে ঘিরে ব্যাপক উদ্দীপনা দেখিয়েছেন। স্থানীয় এক বিজেপি নেতা বলেন, “উত্তরবঙ্গের মানুষের কথা আর কেউ শুনছে না। শমীকদার নেতৃত্বে আমরা আবার সংগঠন মজবুত করব। এখানে বিজেপিই একমাত্র ভরসা।”এই সফরের আরেকটি দিক ছিল সাংগঠনিক বৈঠক ও কর্মী সম্মেলন। শমীক ভট্টাচার্য শিলিগুড়িতে একাধিক মণ্ডল সভাপতি ও বুথ স্তরের নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, “দলের প্রতিটি স্তরের কর্মীকে শক্ত করে আমাদের চলতে হবে। তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে।”এদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই সফর নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, “উত্তরবঙ্গের কথা কেউ ভাবে না, বিজেপি যদি সেটা করে, তাহলে ভালোই।” আবার কেউ বলছেন, “শুধু কথায় কিছু হবে না, কাজ দেখতে চাই। বঞ্চনার কথা তো অনেকেই বলে, কিন্তু আমাদের সমস্যার সমাধান ক’জন করে?”

1200 675 20725754 thumbnail 16x9 samik

একটি বড় দিক হল, পাহাড় ও ডুয়ার্স অঞ্চলেও বিজেপির এই সফর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজবংশী, আদিবাসী ও লেপচা-ভোটব্যাংকের উপর কীভাবে বিজেপি আবার দখল কায়েম করবে, সেটা নিয়েই কৌশল তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে ‘রাজবংশী উন্নয়ন পর্ষদ’ ও ‘ত্রিবেণী সংগঠন’-কে ঘিরে বিজেপি নতুন করে কার্যকলাপ শুরু করতে পারে বলে খবর।অতীতে দিলীপ ঘোষ, সুব্রত মুখার্জি, শুভেন্দু অধিকারী কিংবা মুকুল রায়ের সফরগুলি যেমন উত্তরের রাজনীতিকে আলোড়িত করেছিল, তেমনি শমীকের সফরও রাজনৈতিক বার্তায় সমৃদ্ধ ও লক্ষ্যভেদী। তবে বাস্তবে মানুষের আস্থা অর্জন করতে গেলে শুধু ভাষণ নয়, দরকার হবে দৃশ্যমান উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সাংগঠনিক ঐক্য।এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই—বিজেপির এই উত্তরবঙ্গ অভিমুখ কি তৃণমূলের সংগঠন ও প্রশাসনকে যথেষ্ট চাপে ফেলবে? নাকি এটি বিজেপির একটি স্বল্পস্থায়ী প্রচেষ্টা হিসেবেই বিবেচিত হবে?জবাব দেবে সময়। তবে এটুকু বলা যেতেই পারে—‘আর বঞ্চনা নয়’—এই স্লোগানকে ঘিরেই উত্তরবঙ্গের রাজনীতির উত্তাপ বাড়তে চলেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments