Rain warning in Bengal due to twin low pressure areas : পুব আকাশে যেন বিষণ্ণ সুর বাজছে। বাতাসে অদ্ভুত একটা গন্ধ, যেটা অনেকটা কাঁচা মাটির গন্ধের সঙ্গে মিশে থাকা আগাম বৃষ্টির ঘ্রাণ। আর এই মুহূর্তে এমন এক জোড়া নিম্নচাপ বঙ্গের বুকজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে আবহাওয়ার অস্থিরতা, যা কলকাতা থেকে শুরু করে উপকূলবর্তী জেলাগুলিকে নিয়ে এসেছে সতর্কবার্তার আওতায়। উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ এবং মধ্যপ্রদেশের উপর থাকা অপর একটি নিম্নচাপের সংযোগস্থলে বিস্তৃত মৌসুমী অক্ষরেখা এখন কার্যত এক গভীর জোড়া নিম্নচাপের রূপ নিয়েছে। যার জেরে ঝোড়ো হাওয়া, বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি আর জল জমার ভোগান্তি রোজকার জীবনের সঙ্গে জুড়ে যেতে বসেছে, বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলা—কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মানুষজন এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ভাবিত।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোমবার ও মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গে চলবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি, তার মধ্যেও উপকূল সংলগ্ন জেলাগুলিতে দেখা যাবে অতি ভারী বৃষ্টির রূপ, বিশেষ করে পশ্চিম মেদিনীপুরে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে পরিস্থিতি মোকাবিলায়। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পশ্চিম বর্ধমানেও আগামী কয়েকদিন বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গঙ্গার তীরবর্তী অঞ্চলজুড়ে নদীর জলস্তর বৃদ্ধির আশঙ্কায় জলপথ পরিবহণেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। কাকভোরে ট্রেন ধরতে বের হওয়া অফিসযাত্রী হেমন্ত মণ্ডল জানালেন, “সকালে বৃষ্টি শুরু হলে প্ল্যাটফর্মেই অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
কোথাও কোথাও আবার রেললাইনের উপর জল দাঁড়িয়ে যায়। তাতে ট্রেনও দেরি করে, অফিসেও তিরস্কার শুনতে হয়।” বাজারহাটের বিক্রেতা রহিম মিঞাও বলেন, “ভিজে গেলে সবজি তো পচে যায়, আবার বিক্রি না হলে ঘরে চাল পড়বে না।” শহর কলকাতায় ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ধারে নিকাশি ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় ছোটোখাটো জলবন্দি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কেএমডিএ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই বেহালার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পাম্প বসানোর কাজ শুরু হয়েছে এবং জলের নিকাশির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক সঞ্জয় দে জানিয়েছেন, “এই জোড়া নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ভিন্নভাবে অনুভূত হবে।
উপকূল সংলগ্ন জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বুধবার পর্যন্ত এই প্রভাব থাকতে পারে।” কৃষকদের মধ্যে কিছুটা হতাশা লক্ষ্য করা গেলেও, অনেকে আবার এই বৃষ্টিকে আশীর্বাদ হিসেবেও দেখছেন। মেদিনীপুরের ধানচাষি নিতাই পাত্র বললেন, “এই বৃষ্টিতে জমির চারা ঠিকঠাক বসবে, ধান ভালো হবে। তবে অতিরিক্ত জল হলে গাছ ডুবে যাওয়ার ভয়ও আছে।” বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জোড়া নিম্নচাপের কারণে বঙ্গোপসাগরে জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব বেশি থাকছে, যার ফলে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ছে। বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকায় গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে সকাল থেকেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।