It’s not AI, but human-made animation that touches the heart:একটা সময় ছিল যখন অ্যানিমেশন মানেই টেলিভিশনের পর্দায় বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ে বসে পড়া, এখন সময় বদলেছে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ইউটিউব কিংবা ওটিটি—আজকের অ্যানিমেশন পৌঁছে গেছে প্রত্যেকের হাতে হাতে। প্রযুক্তির এই ব্যাপক প্রসারে যেভাবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর আধিপত্য বেড়েছে, তাতে সৃজনশীলতার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে শিল্পী থেকে দর্শক সকলেরই। কিন্তু তার মধ্যেই যেন এক অন্যতর আলো ছড়াল সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত ‘অক্টোডুডল’ নামের অ্যানিমেশন কর্মশালায়, যেখানে কচিকাঁচারা সগর্বে জানিয়ে দিল, “AI নয়, মন ছুঁয়েছে মানুষের হাতে তৈরি অ্যানিমেশনই।”এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছিল প্রায় ৭০ জন ছাত্রছাত্রী, বয়স ৮ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। সেখানেই তাদের শেখানো হচ্ছিল কীভাবে হাতে কলমে পেন্সিল, কাগজ ও রঙের সাহায্যে চরিত্র তৈরি করা যায়, সেগুলিকে জীবন্ত করে তোলা যায়—সেই প্রাচীন ও প্রামাণ্য পদ্ধতিতে, যেখানে প্রতিটি ফ্রেমের পিছনে আছে মানুষের চিন্তা, অনুভব আর দক্ষতা। কর্মশালার অন্যতম উদ্যোক্তা ও চিত্রপরিচালক শুভ্রজ্যোতি সেন বলেন, “AI আসছে ঠিকই, কিন্তু সেটার মধ্যে প্রাণ থাকে না। শিশুদের চোখে সৃষ্টির আনন্দই সবচেয়ে বড় জয়। তারা নিজের হাতে যখন একটা চরিত্র আঁকে, প্রাণ দেয়—সেটার তুলনা AI-generated চরিত্র দিতে পারে না।”
এ প্রসঙ্গে এক শিক্ষার্থী, ক্লাস সিক্স-এর রূপসা পাল বলে, “আমি একটা বেড়াল আঁকছিলাম। ওর নাম দিলাম লিলি। যখন লিলি নড়াচড়া করল আমার ছবিতে, আমি নিজেই খুশিতে লাফিয়ে উঠেছিলাম। এটা AI দিলে তো শুধু দেখে যাব, বানানো যাবে না।” তার এই কথাতেই যেন আজকের শিশুদের অন্তরের কথা ধরা আছে।তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, বর্তমানে AI-এর মাধ্যমে তৈরি অ্যানিমেশনের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে—বিশেষত প্রোডাকশন হাউসগুলোর মধ্যে। কারণ অল্প খরচে দ্রুত প্রজেক্ট ডেলিভারি সম্ভব হচ্ছে AI-এর মাধ্যমে। কিন্তু এই সুবিধার মাঝেও যে মানবিক সৃজনশীলতার জায়গা এখনো অটুট, তা বোঝাল এই কর্মশালা। এক অভিভাবক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “আজকাল স্কুলে পড়াশোনার চাপে বাচ্চাদের মধ্যে থেকে সৃজনশীলতা হারিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের কর্মশালা ওদের হাতে আবার তুলির অনুভবটা ফিরিয়ে দেয়।”বিশিষ্ট অ্যানিমেশন শিল্পী সায়ন্তন নাথ, যিনি Disney ও Cartoon Network-এর জন্য কাজ করেছেন, বলেন, “আমরা যারা ছবি আঁকি, জানি কী পরিশ্রম লাগে একটা ফ্রেমে। AI সেখানে যেটা দেয় তা নিছক ‘তৈরি’, কিন্তু এখানে যে একটা শিশু তার কল্পনায় চরিত্র তৈরি করছে, তার মুখে প্রাণ দিচ্ছে, সেটা সম্পূর্ণ আলাদা অনুভূতি।”

এই কর্মশালার আরেকটি বিশেষ দিক ছিল—AI ও হ্যান্ডড্রন অ্যানিমেশনের পার্থক্য বুঝিয়ে দেওয়া। সেখানেই ছোটরা নিজেরাই চেনাতে পেরেছে কেমন করে AI-এর নিখুঁত কিন্তু অনুভূতিহীন চরিত্র তাদের মন কাড়ে না, বরং একজন মানুষের হাতের অদ্ভুত আঁকা একটা চরিত্রও অনেক বেশি জীবন্ত লাগে তাদের কাছে। এই ভাবনা থেকেই “Octodoodle” কর্মশালায় ছোটরা নিজেরাই তৈরি করে ফেলেছে একাধিক অ্যানিমেটেড চরিত্র, যেগুলিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ছোট ছোট ক্লিপও।তবে কেবল ছোটরা নয়, কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যেও সৃজনশীলতা সংরক্ষণের গুরুত্ব ফের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাবিদ দেবলীনা রায়চৌধুরী বলেন, “AI হোক বা মেশিন, মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে হয়তো প্রযুক্তিতে, কিন্তু অনুভূতি, মায়া, স্পর্শ—এসব এখনও কেবল মানুষের মধ্যেই সম্ভব।”