Cricketer Shami’s ex-wife’s video goes viral : বীরভূমের শান্ত সিউড়ী হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজ্যের রাজনীতি থেকে জাতীয় ক্রিকেট, সব কিছুই যেন একসূত্রে গাঁথা হয়ে উঠেছে। কারণ, ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও, যেখানে ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার মহম্মদ শামির প্রাক্তন স্ত্রী হাসিন জাহানকে দেখা যাচ্ছে প্রতিবেশীর সঙ্গে ঠেলাঠেলিতে লিপ্ত হতে। এই ভিডিও দ্রুতগতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, এবং তা ঘিরেই শুরু হয়েছে চরম বিতর্ক ও রাজনৈতিক তরজা। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের সিউড়ীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডে, যেখানে হাসিন জাহান বসবাস করেন। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, হাসিন জাহান রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে তর্ক করছেন তার প্রতিবেশীর সঙ্গে, আর সেই তর্ক মুহূর্তেই হাতাহাতিতে পরিণত হয়। জানা যাচ্ছে, বিষয়টি জমি সংক্রান্ত—পাড়ারই এক ফাঁকা জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছিল। সেই বিবাদই এদিন সামনে চলে আসে, তবে এবার ক্যামেরার সামনে। তবে ঘটনাটিকে ঘিরে কেবলমাত্র স্থানীয় স্তরেই নয়, রাজনীতির গন্ধও মিলেছে। কারণ, হাসিন জাহানের অভিযোগে নাম জড়িয়েছে স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা কাজী ফরজুদ্দিনের। হাসিন জাহানের দাবি, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিবাদে ইন্ধন জুগিয়েছে ফরজুদ্দিন, এবং তাকে বিভিন্ন মামলার ভয় দেখিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ফরজুদ্দিন ও তার পরিবারের দাবি, হাসিন জাহানই উলটোপথে ভয় দেখিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।
এই অভিযোগ-প্রত্যঅভিযোগের পর উভয় পক্ষই সিউড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। থানার এক অফিসার জানিয়েছেন, “দুই পক্ষের অভিযোগই নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকাবাসী দ্বিধাবিভক্ত। কেউ বলছেন, “হাসিন জাহান এলাকায় নতুন হলেও বেশ দাপট দেখান। সবসময় পুলিশের ভয় দেখিয়ে কথা বলেন।” অন্যদিকে আরেকজন জানিয়েছেন, “ওনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক কথা আছে, কিন্তু এলাকার মানুষ হিসেবে তারও কিছু অধিকার রয়েছে।” উল্লেখযোগ্য, হাসিন জাহান এর আগে ভারতের পেসার মহম্মদ শামির বিরুদ্ধে ঘরোয়া হিংসা, পরকীয়া ও অর্থ প্রতারণার অভিযোগ এনেছিলেন। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। সেই সময়ও তিনি মিডিয়ার নজরে চলে আসেন এবং বিতর্কে জড়ান। তবে এবার আর ক্রিকেট নয়, ঝামেলা একেবারে পাড়ার মধ্যে। হাসিন জাহানের বিরুদ্ধে যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হতে পারে এমন কথাও উঠেছে। একটি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, “আমি কোনো ভুল করিনি। যেটা অন্যায় মনে করেছি, সেটার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু যেভাবে আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে, তা মোটেই ঠিক নয়।” তবে আশ্চর্যের বিষয়, এই ভিডিও নিয়ে সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি তিনি।

সংবাদমাধ্যম তার বাড়িতে পৌঁছে কথা বলতে গেলে তিনি কিছু বলতে অস্বীকার করেন, শুধু বলেন, “যা বলার আমি থানায় বলেছি। মিডিয়াকে বলার কিছু নেই।” প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘটনা কি শুধুই জমি নিয়ে বিরোধ, নাকি এর পেছনে রয়েছে গভীর রাজনীতি? ফরজুদ্দিনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে, তিনি প্রভাব খাটিয়ে হাসিন জাহানকে চাপে ফেলতে চাইছেন। আবার অনেকে বলছেন, হাসিন নিজেই নানা মামলার ভয় দেখিয়ে লোকজনকে চুপ করাতে চান। এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও নিয়ে ট্রোলিং, মিম ও নানা ধরনের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা শুরু হয়েছে। কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, ভোটের আগে এই ধরণের বিতর্ক উসকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা চলছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, “এই ঘটনায় আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।” সামগ্রিকভাবে, এই ঘটনা শুধু একটি গন্ডগোল নয়, এর মধ্যে রয়েছে রাজনীতি, ব্যক্তিগত ইতিহাস, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল ও সমাজের প্রতিফলন। যেখানে একজন মহিলা, যিনি এক সময় জাতীয় স্তরের ক্রিকেটারকে বিবাহ করেছিলেন, আবার সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছেন, এখন তার জীবন বারবার বিতর্কে জড়াচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—এই বিতর্ক কি ইচ্ছাকৃত? নাকি বাস্তবতাই তাকে বিতর্কের কেন্দ্রে এনে ফেলছে বারবার? ঘটনাটি এমন এক সময় সামনে এল, যখন বাংলার রাজনীতিতে ‘নারী সুরক্ষা’, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। ফলে, হাসিন জাহানের এই ভিডিও আরও বেশি করে আলোচনায় উঠে এসেছে। তবে এ কথা ঠিক, তার পরিচিতি থাকায় যে ভিডিও অন্য কারো ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরে থেকে যেত, সেটাই এবার রাজ্যজুড়ে হেডলাইন হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে এই ঘটনার তদন্ত কোন পথে এগোয়, প্রশাসন কাকে দায়ী করে, আদালত কী বলে—তা সময়ই বলবে। তবে এই মুহূর্তে বাংলার বীরভূমের এক পাড়ার গন্ডগোল পৌঁছে গেছে শহর কলকাতা হয়ে দিল্লি পর্যন্ত। এবং আবারও প্রমাণিত, একবার যদি আপনি খবরের শিরোনামে থাকেন, তবে সমাজ আপনাকে ছাড়বে না, ভালো বা খারাপ—সবকিছুই ভাইরাল হবে, আর আপনি হবেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।