Rainfall across the state due to the influence of cyclones and monsoon axis : রাজ্য জুড়ে ফের একবার প্রকৃতির খামখেয়ালি আচরণে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। একদিকে মৌসুমী অক্ষরেখা বিস্তৃত হয়েছে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত, তার সঙ্গেই রয়েছে তিনটি সক্রিয় ঘূর্ণাবর্ত—এই দুইয়ের মিলিত প্রভাবে গোটা রাজ্য যেন ভিজছে এক অদ্ভুত অজানা আশঙ্কার বারিধারায়। আজ শনিবার সকাল থেকেই কলকাতা সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গের আকাশে দেখা দিয়েছে ঘন কালো মেঘের চাদর, কোথাও কোথাও শুরু হয়ে গিয়েছে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি, আবার কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির দাপটে নাকাল হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার এবং উত্তর দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে আগামী ২৪ ঘণ্টায়।
শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, দক্ষিণবঙ্গও বাদ যাচ্ছে না এই প্রাকৃতিক রোষের হাত থেকে—পুরুলিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক অংশে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কলকাতার কথায় আসা যাক—আজ শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ৭৮ থেকে ৯৭ শতাংশের মধ্যে দুলছে, যার ফলে অস্বস্তি বাড়ছে নাগরিক জীবনে। তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি পার করলেই সেই আর্দ্রতা প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তোলে। তবে স্বস্তির বিষয়, বৃষ্টির ফলে খানিকটা হলেও তাপপ্রবাহের দাপট কমেছে রাজ্যজুড়ে। কিন্তু এই বৃষ্টি যে একেবারে শান্তির বারি হয়ে নামছে না, তার প্রমাণ মিলেছে ইতিমধ্যেই—জল জমে গিয়েছে একাধিক জায়গায়, ট্রেন চলছে দেরিতে, অফিস টাইমে যানজট ভয়ানক রূপ নিয়েছে কলকাতা সহ শহরতলির রাস্তায়।
হাওড়া, বেহালা, গড়িয়া, সল্টলেক—প্রতিটি এলাকার মানুষই দিনের শুরুটা করেছেন জলকাদা আর জ্যামের সঙ্গে লড়াই করেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, নামখানা, কুলতলি এলাকাতেও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় গ্রামীণ জনজীবনও থমকে গেছে। কৃষক শ্রেণির একাংশ জানিয়েছেন, এই বৃষ্টির ফলে রোয়া করা ধানের চারাটির খুব উপকার হবে ঠিকই, কিন্তু জল নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে আবার মাঠে জল দাঁড়িয়ে থাকার ভয় রয়েছে, যা ফসলের ক্ষতি করতে পারে। কোচবিহারের এক বাসিন্দা, কৃষক রামকৃষ্ণ বর্মণ জানালেন, “আকাশের যা অবস্থা, যেকোনো সময় আবার বজ্রপাত শুরু হতে পারে। গরু মাঠে ছেড়ে দিতে পারছি না। ধান বোনার সময় হলেও ভয় পাচ্ছি মাঠে নামতে।” অন্যদিকে, রাজ্যের পরিবহন দফতরের এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “বৃষ্টির জেরে একাধিক রুটে অটো ও বাস পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। আমাদের কর্মীরা ফিল্ডে আছেন, কিন্তু জল জমে গেলে কিছুই করার থাকে না।” শুধু ট্রাফিক নয়, শহরের স্বাস্থ্যব্যবস্থাতেও চাপ পড়ছে এই হঠাৎ আবহাওয়ার রদবদলের কারণে। নিউটাউনের এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সৌম্য মজুমদার জানালেন, “গত কয়েকদিনে সর্দি-কাশি, জ্বর, অ্যালার্জির রোগী বেড়ে গিয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে শিশু ও প্রবীণদের উপর।” এদিকে স্কুলে যাতায়াত নিয়েও চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা। বেহালার বাসিন্দা সোমা দাস বললেন, “ছোটো ছেলেটা স্কুলে যাচ্ছে রেইনকোট পরে, কিন্তু স্কুল থেকে বেরনোর সময় যদি ধারে ধারে জল জমে থাকে, তাহলে খুব বিপদে পড়বে।” এই পরিস্থিতিতে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী কদিন রাজ্যজুড়ে এই ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে, ফলে ভূমিধসের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না পাহাড়ি অঞ্চলে। দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে।