Friday, July 11, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসরানীগঞ্জে ধস, আতঙ্কে বাসিন্দারা

রানীগঞ্জে ধস, আতঙ্কে বাসিন্দারা

Landslide in Raniganj, residents in panic:রানীগঞ্জ যেন বারবার কাঁপছে ধসের আতঙ্কে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানীগঞ্জ থানার অন্তর্গত জে কে নগরের চলবলপুরের বাদকোটি এলাকায় শুক্রবার ভোররাতে ঘটে যাওয়া এক তীব্র ধসের ঘটনায় ফের চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা অঞ্চলে। আচমকা বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের। কেউ ভেবেছিলেন ভূমিকম্প, কেউ আবার মনে করেছিলেন বিস্ফোরণ। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই যখন দেখা গেল গোটা একটি এলাকা জুড়ে মাটি গেঁথে বসে গেছে, তখনই আঁচ করা যায়—এটা এক গভীর ধস। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো পাড়া জুড়ে। অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন, কেউ কেউ শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে খোলা মাঠে আশ্রয় নেন। এলাকাটি রানীগঞ্জের পুরাতন কয়লাখনি অঞ্চলের অন্তর্গত, যেখানে দীর্ঘদিন ধরেই খনন কাজ চলে আসছে।

ধসের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান ইসিএল (ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড)-এর উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এবং রেল কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সক্রিয়ভাবে নজরদারি চালানো হচ্ছে। রানীগঞ্জ থানার এক অফিসার জানান, “ঘটনাস্থলে আমাদের টিম রয়েছে। রেললাইন সংলগ্ন অঞ্চল হওয়ায় আমরা রেলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। পরিস্থিতি খারাপ হলে স্থানীয়দের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রানীগঞ্জ ও আসানসোল অঞ্চলে অতীতে বহুবার এরকম ধসের ঘটনা ঘটেছে, বিশেষ করে পরিত্যক্ত খনির কারণে। সঠিকভাবে খনন বন্ধ না হওয়া, পুরনো গ্যালারি ও গহ্বরের অব্যবস্থাপনা এবং জমির নিচে দীর্ঘদিনের ফাঁকা জায়গা এই ধসের অন্যতম কারণ। ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ ডঃ বিজয় পাল বলেন, “এখানে যেহেতু বছরের পর বছর খনন হয়েছে, তাই মাটির নিচে ফাঁকা গহ্বর তৈরি হয়েছে। সেই গহ্বরগুলোর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হলে হঠাৎ করেই ধসে পড়ে যায়। আর তার ফলেই বারবার ঘটছে এই বিপর্যয়।”এই ধস শুধু ভৌগোলিক বিপদ নয়, এটি স্থানীয় মানুষের মানসিক চাপেরও এক বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকা থেকে অনেকেই নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন। রানীগঞ্জের বাসিন্দা রেখা দাস বলেন, “আমার ছোট বাচ্চা আছে, এমন আওয়াজ আর ধস দেখে ভয় পেয়েছি খুব। রাতে ঘুমোতে পারি না। প্রশাসন যদি আগে থেকে কিছু বলত, তাহলে এতটা ভয় পেতাম না।”

Raniganj mining area

এই পরিস্থিতিতে রেল কর্তৃপক্ষও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। রেল ট্র্যাকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং ধসের কাছাকাছি কোনও ট্রেনের গতি সীমিত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। পূর্ব রেলের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা ধস এলাকা থেকে রেললাইনের দূরত্ব পরিমাপ করে দেখছি। যদি খুব কাছাকাছি হয়, তাহলে সাময়িকভাবে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখাও হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত নিয়মিত ট্রেন চলাচলে কোনও প্রভাব পড়েনি।”পাশাপাশি, রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে আলোচনা। স্থানীয় বিজেপি নেতা কৌশিক মন্ডল বলেন, “প্রতিবার ধস হয়, সরকার আসে, দেখে যায়, কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান হয় না। মানুষকে দিনের পর দিন আতঙ্কে থাকতে হয়। এটা রাজ্যের ব্যর্থতা।” অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “প্রশাসন পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে। প্রয়োজনে রাজ্য সরকার ইসিএল-এর সঙ্গে আলোচনায় বসবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”স্থানীয় ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও এগিয়ে এসেছে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তাঁরা রাতে এলাকায় টর্চ, জল ও প্রাথমিক ওষুধ বিতরণ করছেন। রানীগঞ্জ যুব সংঘের সদস্য সৌরভ ঘোষ জানান, “মানুষ অনেক ভয় পেয়ে গেছে। তাই আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করছি, যাতে কেউ অসুস্থ হয়ে না পড়ে।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments