The strike called by the Left had an impact on Barasat: আজ সকাল থেকেই উত্তেজনার ছবি দেখা গেল উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়, বিশেষ করে বারাসাতে। বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলোর ডাকা সর্বভারতীয় ধর্মঘটের জেরে জেলার বিভিন্ন রাস্তায় অবরোধ, মিছিল, স্লোগান ও পুলিশের তৎপরতায় কার্যত থমকে গিয়েছিল সকালবেলার জনজীবন। ‘খবর বাংলা’-র প্রতিনিধি সকাল থেকেই ঘুরে বেড়ান হাবরা, গোবরডাঙা, গাইঘাটা, চাঁদপাড়া এবং বারাসাতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে। তিনি জানান, বামেদের দশটি শ্রমিক সংগঠন এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল মূলত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের শ্রমনীতি, বেকারত্ব, বেতন কাঠামো, রেশন দুর্নীতি, সরকারি দপ্তরে নিয়োগে অনিয়ম, এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে। কিন্তু এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল যশোর রোড এবং বারাসাত চাপাডালি মোড়, যেখানে শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা রাস্তায় বসে পড়েন এবং ২০ মিনিটের জন্য সম্পূর্ণ যান চলাচল স্তব্ধ করে দেন।
এদিন সকালেই গোবরডাঙার পাঁচপোতা সড়কে অবরোধে বসেন গোবরডাঙা শহর এরিয়া কমিটির কর্মীরা। হাতে লাল পতাকা, মুখে স্লোগান—“শ্রমিকের রক্তে বানানো পথ আমরা লাল করব”—এই ধ্বনি জুড়ে যায় চারপাশে। সেখান থেকে অশোকনগর বিল্ডিং মোড়ে এসে যশোর রোডে ধাপে ধাপে জড়ো হতে থাকেন বামপন্থী সংগঠনের সদস্যরা। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় হাবরা এক নম্বর রেলগেটের কাছে, যেখানে হঠাৎ করেই বাম নেতা-কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়েন, আর তাতে একদিকে আটকে পড়ে অফিসগামী বাস, অন্যদিকে স্কুলের গাড়ি থেকে শুরু করে অ্যাম্বুলেন্সও।বারাসাতের চাপাডালি মোড়ে সকাল ৯টা নাগাদ শুরু হয় মূল বিক্ষোভ। এখানেই বাম শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বিক্ষোভ দেখান এবং স্লোগানে স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে থেমে যায়, ব্যবসায়ীদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা যায়। একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “এইভাবে প্রতিদিন ধর্মঘট হলে আমরা দোকান খুলে কী করব? দিন আনি দিন খাই, ধর্মঘটের নামে রাস্তাই যদি বন্ধ করে দেয়, তাহলে তো আমরা মরব।” তবে বামপন্থীদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের কষ্ট হলেও এই আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল।ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছায় বারাসাত থানার পুলিশ বাহিনী। প্রথমে পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধ তুলতে চাইলেও বাম নেতৃত্ব অনড় ছিলেন। এরপর কড়া নজরে রাখা হয় অবরোধকারীদের, এবং প্রায় আধাঘণ্টা পর শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ উঠে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, অবরোধ স্থানে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে মোতায়েন রাখা হয়েছে অতিরিক্ত বাহিনী।

অন্যদিকে, গাইঘাটার চাঁদপাড়ায় বাম ও কংগ্রেস যৌথভাবে মিছিল ও যশোর রোড অবরোধ করেন। একত্রে রাস্তায় নামেন দুই দলের স্থানীয় নেতৃত্ব। এই ঘটনাটিকে অনেকে রাজনৈতিক ‘সিগন্যাল’ হিসেবেও দেখছেন—কর্মসংস্থান, শ্রম অধিকারের মতো ইস্যুতে আবার একসাথে হাঁটছে বাম-কংগ্রেস জোট। এখানেও প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলা অবরোধে আটকে পড়ে বহু গাড়ি ও সাধারণ মানুষ। যশোর রোডের মত ব্যস্ততম রাস্তায় এমন কর্মসূচি সাধারণ মানুষের অসুবিধা বাড়িয়েছে বলেই মত স্থানীয়দের।সামগ্রিকভাবে ধর্মঘটের কারণে গোটা উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক অংশে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে, স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পৌঁছাতে দেরি হয়, এবং অফিসপাড়ায় উপস্থিতির হার কম ছিল বলেও জানা গিয়েছে। তবে কোথাও বড় ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা বা সংঘর্ষের খবর নেই, যা পুলিশ প্রশাসনের জন্য স্বস্তির বিষয়।