Tuesday, July 8, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যআবহাওয়াদক্ষিণ পশ্চিম গাঙ্গেয় অঞ্চলে নিম্নচাপ, রাজ্যের সব জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস

দক্ষিণ পশ্চিম গাঙ্গেয় অঞ্চলে নিম্নচাপ, রাজ্যের সব জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস

Low pressure over Southwest Gangetic region, rain forecast in all districts of the state: গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আবার বৃষ্টির ঘনঘটা। অবস্থানের সামান্য বদল হলেও এখনও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরেই ঘোরাফেরা করছে নিম্নচাপ অঞ্চল, আর তার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ—কোথাও রেহাই নেই। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের মতে, দক্ষিণ-পশ্চিম গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এখন যে নিম্নচাপটি সৃষ্টি হয়েছে, তা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭.৬ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হেলে থাকা ঘূর্ণাবর্তকে সঙ্গে নিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে। এর ফলে মৌসুমী অক্ষরেখাও এখন পুরুলিয়া হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে, আর এই সবকিছু মিলিয়েই রাজ্যের আবহাওয়া হয়ে উঠেছে একেবারে অনিশ্চিত ও প্রবল বৃষ্টিপ্রবণ। মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজ্যের বহু জেলা, বিশেষত কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আর তার সঙ্গেই বজ্রপাত ও দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার গতিবেগে।

ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে কৃষকদের মধ্যে, কারণ এই সময়ে ধান রোপার মৌসুম, আর অতিরিক্ত জলজমা হলে ধান গাছের গোড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে জারি হয়েছে হলুদ সতর্কতা, কারণ সেখানে মঙ্গলবার ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতায় দুপুরের দিকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়, যার ফলে অফিসফেরত মানুষদের যথেষ্ট ভোগান্তি হয়—ভিজে যাওয়া রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে, জল জমেছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, এবং ছাতা নিয়ে চলাও হয়েছে কষ্টকর। কলকাতার একটি আইটি সংস্থায় কর্মরত স্বর্ণালী মৈত্র বলেন, “হঠাৎ বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় ভিজেই যেতে হল। এমনটা যে হবে, তা বোঝাই যায়নি সকালে। আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা আগে থেকে জানলে প্রস্তুতি নিতে পারতাম।” মৎস্যজীবীদের জন্যও সতর্কতা জারি করা হয়েছে—মঙ্গলবার পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, এবং এই সময়ে তাদের সমুদ্রে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

2Q==

দিঘা, মন্দারমণি ও তাজপুরের মত পর্যটন কেন্দ্রে সমুদ্রের ধারে বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে, আর পর্যটকদের বলা হয়েছে যেন সমুদ্রে না নামেন। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে রবিবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে, আর এই সময়ে বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো জলবন্দি পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। উত্তরবঙ্গেও আটটি জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ারে বুধবার ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সপ্তাহান্তে এই বৃষ্টি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে হিমঘরের আবহাওয়া কেন্দ্র। শনিবার জলপাইগুড়িতে, আর রবিবার দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ারেও ভারী বৃষ্টি নামতে পারে। ফলে পাহাড়ি এলাকার মানুষদের মধ্যে ধসের আশঙ্কা আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। এর আগেও ভারী বৃষ্টির সময় জলপাইগুড়ির মালবাজারে হঠাৎ প্লাবনে বহু দোকান ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেবার ক্ষতিপূরণ না মেলার অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয়রা। এ বারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কথা বলা হলেও অনেকেই বলছেন, “সতর্কতা তো আগে থেকেই থাকতো, কিন্তু মাটির ঘর, কাঁচা রাস্তা আর ঝোপঝাড়ে ঘেরা গ্রামগুলোয় যখন জল ঢুকে পড়ে, তখন সেই সতর্কতা কাজে লাগে না।” আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ দীপ্তিময় সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, “এটি বর্ষার অন্যতম একটি স্বাভাবিক রূপ হলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিম্নচাপ অঞ্চলগুলি আরও ঘন ঘন এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠছে।

অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত একদিকে যেমন কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে, অন্যদিকে সাধারণ নাগরিক জীবনে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।” আবহাওয়া নিয়ে প্রতিনিয়ত নজর রাখছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের আধিকারিকরাও। কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, তারা শহরের সমস্ত ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনগুলিতে নজরদারি বাড়িয়েছে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে জল সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা তৈরি রয়েছে। তবে বেহালার বাসিন্দা প্রতীক দত্তর মত, “এমনটা প্রতিবছরই হয়। একটা বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়, আর পৌরসংস্থা তখন বলে ওভারফ্লো হয়েছে। মূলত আগেভাগে পরিকল্পনা না থাকাটাই বড় সমস্যা।” সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, এই নিম্নচাপ এবং মৌসুমী অক্ষরেখার সক্রিয়তার ফলে রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহরের কেন্দ্রস্থল—সর্বত্রই বর্ষা তার দাপট দেখাতে চলেছে। স্কুল পড়ুয়া, অফিসযাত্রী, কৃষক, পর্যটক—প্রত্যেকেই কোনও না কোনওভাবে এই বৃষ্টির দ্বারা প্রভাবিত হবেন। ভবিষ্যতের কথা বলতে গেলে, দীর্ঘমেয়াদে এই ধরনের ঘনঘন বৃষ্টিপাতের কারণে শহরের পরিকাঠামোয় বড় ধরণের উন্নয়ন না হলে সমস্যাগুলি ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments