IRCTC brings 30 Rama Tirtha Ghor tours on April 17 : ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (IRCTC) সম্প্রতি এমন এক অনন্য তীর্থযাত্রা প্যাকেজের ঘোষণা করেছে যা রামভক্তদের মনে ঈশ্বর দর্শনের আনন্দ যেমন দেবে, তেমনি ভ্রমণপ্রিয়দেরও এনে দেবে ভারতীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের ছোঁয়া। ‘শ্রী রামায়ণ যাত্রা’ নামে এই বিশেষ ধর্মীয় সফরটি শুরু হতে চলেছে ২৫ জুলাই ২০২৫, দিল্লির সফদরজং রেলওয়ে স্টেশন থেকে। এই সফরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল, মাত্র ১৭ দিনে যাত্রীরা ৩০টিরও বেশি রামতীর্থস্থান ঘুরে দেখতে পাবেন, যার মধ্যে রয়েছে অযোধ্যা, নন্দীগ্রাম, সীতামারহি, জনকপুর (নেপাল), বক্সার, বারাণসী, প্রয়াগরাজ, চিত্রকুট, নাসিক, হাম্পি, রামেশ্বরম সহ আরও বহু ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান। ভাবতে পারছেন?
একবারেই রামায়ণের পুরো পথচলা যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে এই যাত্রায়। আধুনিক ভারতীয় পর্যটনের মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হবে ‘ভারত গৌরব ডিলাক্স এসি ট্যুরিস্ট ট্রেন’, যেখানে থাকবে রাজকীয় অভিজ্ঞতা—দুটি রেস্তোরাঁ, হাই-টেক রান্নাঘর, শাওয়ার কিউবিকেল, সেন্সর-চালিত ওয়াশরুম, ফুট ম্যাসাজার, নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি সহ প্রত্যেক কোচে সর্বোচ্চ সুরক্ষা। এই যাত্রা শুধু একটির পর একটি জায়গা দেখা নয়, এটি হবে পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক যাত্রা, এমনটাই জানালেন IRCTC-এর মুখপাত্র মিসেস সুজাতা নায়ার—“আমরা এই যাত্রাটিকে শুধু ভ্রমণ নয়, এক ধরনের আত্মিক অভিজ্ঞতা করে তুলতে চাই।
যাত্রীদের যেন মনে হয় তারা সত্যিই রামায়ণের পথে হাঁটছেন।” অযোধ্যায় থাকবে শ্রী রাম জন্মভূমি দর্শন, রাম কি পাইড়ি, হনুমান গড়ির মতো স্থান পরিদর্শনের সুযোগ। জনকপুরে (বর্তমান নেপালে) যাবেন যাত্রীরা—সীতা ও রামের বিয়ের ঐতিহাসিক শহর, যেখানে এখনও জনক রাজবাড়ি ও সীতামন্দির মানুষের শ্রদ্ধার কেন্দ্র। বক্সার, বারাণসী, প্রয়াগরাজের মতো গঙ্গাতীরবর্তী শহরে ধর্মীয় স্নান ও পুরাণসম্মত দর্শন ঘটবে। প্রাচীন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে রামচন্দ্রের বনবাসের পদচিহ্ন যেখানে রয়েছে সেই চিত্রকুট, নাসিক, হাম্পি—এই সব জায়গাতেও যাবে ট্রেনটি। আর শেষ পর্বে থাকছে রামেশ্বরম—শ্রীলঙ্কা অভিযানের আগে রামের পুজোর স্থান। এক কথায়, যেন পুরো রামায়ণ জীবন্ত হয়ে উঠবে যাত্রীদের চোখে! IRCTC জানাচ্ছে, এই সফরে থাকবে গাইডের মাধ্যমে প্রতিটি স্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝানোর ব্যবস্থা, যাতে ভ্রমণটি হয় তথ্যসমৃদ্ধ ও অনুভবময়। প্রতিটি যাত্রাপথে থাকবে দেশীয় খাবারের সুব্যবস্থা ও আয়ুর্বেদিক স্বাস্থ্যসেবার স্পর্শ।
সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই ঘোষণা আসতেই রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। অনেকেই বলছেন, এটি এক জীবনে একবার ঘোরার মতো সফর। ভক্ত সন্দীপ রায় বললেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই রামায়ণ পড়ি, কিন্তু এই সফরের সুযোগ পেয়ে মনে হচ্ছে যেন আমি সত্যিই রামের পথে হাঁটব। আমার ছেলেমেয়েকেও সঙ্গে নিচ্ছি, ওদেরও শেখাতে চাই ভারতীয় সংস্কৃতির গর্ব।” শুধু ধর্ম নয়, এই যাত্রার ফলে বহু রাজ্য ও অঞ্চলের পর্যটন শিল্পও লাভবান হবে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু সহ ১০টির বেশি রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা এই তীর্থস্থানগুলোতে হোটেল, দোকান, গাইড, স্থানীয় পরিবহন—সবকিছুর উপর প্রভাব পড়বে এই সফরের ফলে। বিশেষ করে জনকপুর যেহেতু নেপালে অবস্থিত, তাই ভারত-নেপাল ধর্মীয় সম্পর্ক ও পর্যটন উদ্যোগ আরও মজবুত হবে এই সফরের মাধ্যমে। IRCTC সূত্রে জানা গেছে, এই সফরের বুকিং ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে এবং খুব অল্প সময়েই টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রেনের আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় আগেভাগেই বুকিং করার জন্য উৎসাহী ভক্তদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই সফরের খরচ মাথাপিছু ₹১,০৫,০২০ (দুজন একসঙ্গে থাকলে) এবং ₹১,২১,০৭৫ (একক যাত্রীর জন্য)। এই প্যাকেজে থাকছে ট্রেনে থাকা-খাওয়া, দর্শনীয় স্থানগুলি ঘোরার গাইডেড ট্যুর, বাস ট্রান্সপোর্টেশন, হোটেল থাকা এবং ভেতরে ও বাইরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
তবে যাত্রার আগে শারীরিক পরীক্ষা ও ১৭ দিনের সফরের মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও বলছেন অভিজ্ঞরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে #RamayanYatra #IRCTC #RamMandirDarshan #RamayanaTour #AyodhyaExpress #RamPath এর মতো হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে। ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ভক্তরা তাঁদের প্রস্তুতি, টিকিট বুকিং এর স্ক্রিনশট, রামায়ণের অংশবিশেষ পাঠ করা—এই সব কিছুই শেয়ার করছেন আনন্দে। সবমিলিয়ে বলা যায়, এই ‘শ্রী রামায়ণ যাত্রা’ শুধুমাত্র একটি সফর নয়, বরং একটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক আন্দোলনের মতো। যেখানে মিলছে ভক্তির সঙ্গে ভ্রমণের আনন্দ, ইতিহাসের সঙ্গে হৃদয়ের সংযোগ। আগামী দিনে IRCTC যদি এই ধরনের আরও প্যাকেজ চালু করে, তাহলে ভারতীয় ধর্মীয় পর্যটনের এক নতুন যুগের সূচনা হবে বলেই মনে করছেন পর্যটন বিশ্লেষকরা। রামভক্তদের কাছে এটা শুধু ট্রেন সফর নয়, এটা যেন জীবনভরের তীর্থ।