Monday, July 7, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্য দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার ফলে কি কি প্রভাব পড়তে পারে মস্তিষ্কে জেনে...

 দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার ফলে কি কি প্রভাব পড়তে পারে মস্তিষ্কে জেনে নিন

Find out what effects long-term space travel can have on the brain : মহাকাশে দীর্ঘদিন থাকা এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হলেও, তার পরিণতি যে কতখানি গভীর হতে পারে শরীর ও মস্তিষ্কের উপর, তা জানলে আপনি চমকে উঠতেই পারেন। এটা ঠিক যেন এক বিজ্ঞানকথার গল্প, যেখানে বাস্তব হয়ে ওঠে অবিশ্বাস্য। “খবর বাংলা”র বিশেষ প্রতিবেদন আজ তুলে ধরছে সেইসব গভীর পরিবর্তনের কথাই—যা ঘটে যায় মানুষের শরীর এবং বিশেষ করে মস্তিষ্কে, যখন সে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ছেড়ে চলে যায় সেই নির্জন নক্ষত্রলোকের গভীরে।রাশিয়ার মহাকাশচারী ভালেরি পলিয়াকভ ইতিহাস গড়েছিলেন ১৯৯৪-৯৫ সালে টানা ৪৩৭ দিন মহাকাশে থেকে।

2Q==

আর আমেরিকার ফ্র্যাঙ্ক রুবিও ২০২৩ সালে সেই কৃতিত্বে নিজের নাম লেখান ৩৭১ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) কাটিয়ে। অথচ রুবিওর এতদিন মহাকাশে থাকার কথা ছিল না—যান্ত্রিক সমস্যায় তাঁদের ফিরতি যান মেরামতের দরকার পড়ে, আর সেখানেই বেড়ে যায় তাঁর থাকার সময়। পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫ কোটি কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে ৫৯৬৩ বার পৃথিবীর কক্ষপথ ঘুরে এসে যখন তিনি ক্যাপসুলে করে কাজাখস্তানে অবতরণ করেন, তখন তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলেন না—দল পাঠিয়ে তাঁকে তুলতে হয়েছিল বাহনের ভিতর থেকে।

এই ঘটনাই যেন গবেষণাকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে গেল। প্রশ্ন উঠল—এই দীর্ঘ ভ্রমণ কি শুধুই পেশি ও হাড়ের ওপর প্রভাব ফেলে, নাকি আরও গভীরে, মস্তিষ্কেও ঘটে যায় মারাত্মক পরিবর্তন? উত্তরটা চমকপ্রদ।মহাকাশে থাকলে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক চাপও অত্যন্ত তীব্র হয়। একঘেয়েমি, নির্জনতা, পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, প্রিয়জনের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা—এইসব কারণ মিলিয়ে একটি একাকিত্বের গভীর অনুভূতি কাজ করে যা “সেনসরি ডিপ্রাইভেশন” তৈরি করে এবং ব্রেইনে ডোপামিন, সেরোটোনিনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। এর ফলে বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং এমনকি হ্যালুসিনেশন পর্যন্ত হতে পারে।

9k=

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা একাধিক গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছে যে দীর্ঘ মিশনের সময় মহাকাশচারীদের ঘুমের গুণমান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ঘুম কম হলে মানসিক চাপ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, রিফ্লেক্স, এবং মস্তিষ্কের জটিল কার্যকলাপে সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি মহাকাশচারীদের মধ্যে “কগনিটিভ ডিক্লাইন” এর লক্ষণও দেখা যায়—মানে তারা অনেক সময় মনোযোগ ধরে রাখতে বা স্মৃতি মনে রাখতে পারেন না।বর্তমানে বিশ্বের একাধিক দেশ যেমন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি মিলে মঙ্গল অভিযানের পরিকল্পনা করছে। এই মিশনের সময় একজন মহাকাশচারীর ১১০০ দিন মহাকাশে থাকা লাগতে পারে। এখনকার আইএসএসের তুলনায় সেই যান আরও ছোট হবে, কম পরিসর ও কম জিম সরঞ্জামের মাধ্যমে ফিটনেস ধরে রাখতে হবে। ফলে শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষাও এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।নাসা এখন নতুন ধরণের ব্যায়াম যন্ত্র ও নিউরো-মডুলেশন থেরাপি তৈরির চেষ্টায় রয়েছে যা মহাকাশে থেকেই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনে মহাকাশযাত্রা যদি আরও দীর্ঘ হয় (যেমন: টাইটান বা ইউরোপা চাঁদে মিশন), তাহলে শুধু পেশিশক্তি নয়, মানসিকভাবে শক্ত ও স্থিতিশীল মহাকাশচারীই হতে পারবেন সফল অভিযাত্রী। এজন্য প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি থেরাপি এবং AI মনিটরিং-এর মাধ্যমে।এই সমস্ত গবেষণা শুধু ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে নয়, পৃথিবীর মানুষের জন্যও এক বিশাল দিশা দেখায়। যেমন, বয়স্কদের অস্থিক্ষয় (osteoporosis), পেশি ক্ষয় (sarcopenia), মানসিক অবসাদ, বা দীর্ঘসময় ICU-তে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে এই গবেষণা অনেকটাই সহায়ক হতে পারে। ইতিমধ্যে বহু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় মহাকাশ গবেষণা থেকে নেওয়া তথ্য কাজে লাগাচ্ছে জিরো গ্রাভিটির থেরাপির জন্য।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments