Monday, July 7, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যঠান্ডার দেশে প্রকৃতির ভয়ঙ্কর রূপ পরিবর্তন

ঠান্ডার দেশে প্রকৃতির ভয়ঙ্কর রূপ পরিবর্তন

Horrifying changes in nature in the cold land:যেখানে সারা বছর ঠান্ডা আবহাওয়া স্বাভাবিক—সেই ইউরোপের একের পর এক দেশ এখন প্রকৃতির বিরল ও ভয়ঙ্কর রূপের সাক্ষী। জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, চেক প্রজাতন্ত্র, তুরস্ক, এমনকি নেদারল্যান্ডসের মতো ঠান্ডা আবহাওয়ার দেশগুলোতে এখন গ্রীষ্মের দহন, দাবানল ও মৃত্যু ঝড়ের মতো আছড়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের দুঃস্বপ্ন এখন আর শুধু বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রে সীমাবদ্ধ নয়, বাস্তবে রাস্তায় নেমে এসেছে তার রুদ্ররূপ।জার্মানির এক বাসিন্দা বলেছেন, “আমরা যেভাবে সারা বছর ঠান্ডার সঙ্গে অভ্যস্ত, এখন মনে হচ্ছে যেন আগ্নেয়গিরির উপর দাঁড়িয়ে আছি।” এই কথার মধ্যেই যেন লুকিয়ে রয়েছে ইউরোপের বর্তমান পরিবেশগত বাস্তবতা। মাত্র কয়েকদিন আগেই স্পেনের তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল, যা ওই অঞ্চলের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই তাপপ্রবাহের কারণে শুধু মানুষের জীবন নয়, পশু-পাখি, পতঙ্গ, নদী, পাহাড়—সবকিছুই যেন জ্বলছে।তুরস্কের বহু জঙ্গলে ইতিমধ্যেই আগুন লেগেছে, দাবানলের আছড়ে পড়া ছড়িয়ে পড়েছে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জঙ্গলে, স্থানীয় বন ও বসতির ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। চেক প্রজাতন্ত্রে অবস্থা আরও খারাপ—নদীর জলে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছ মারা যাচ্ছে গুচ্ছ গুচ্ছ করে। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সপ্তাহে একটিমাত্র নদী থেকেই ৩০ টনের বেশি মৃত মাছ সরানো হয়েছে।শুধু চেক প্রজাতন্ত্র নয়, পূর্ব ইউরোপের আলবানিয়া, বসনিয়া, মন্টেনেগ্রো, সার্বিয়া, হারজেগোভিনা—সবখানেই তাপপ্রবাহের কারণে লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে, দিনের বেলা রাস্তাঘাট ফাঁকা, রেস্তরাঁ ক্যাফেগুলো গ্রাহকশূন্য। ইটালির বাণিজ্যিক এলাকায় পর্যন্ত ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে গৃহহীনদের জন্য বিশেষ আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে ঠান্ডা জল, স্নানঘর, এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকার চাইছে কেউ যাতে গরমে অসুস্থ না হন। ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে দুপুরবেলা রাস্তাঘাট সুনসান, কারণ মানুষ বাইরে বেরোতে সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি চিজের মতো জনপ্রিয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রিতেও প্রভাব পড়েছে, কারণ উষ্ণতা ও আর্দ্রতার প্রভাবে সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না।স্পেনে অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক। সেখানে একের পর এক মানুষ দাবদাহে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভিড় বাড়ছে, প্রবীণরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সরকারের তরফ থেকে স্কুল ও দপ্তরে ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে, তবে তাতে পরিস্থিতি খুব একটা নিয়ন্ত্রণে আসছে না।জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর ফলাফল নিয়ে বহু বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা সাবধান করে আসছেন। এই গ্রীষ্ম তারই বহিঃপ্রকাশ, যেখানে বিশ্বের একাংশ আগুনে জ্বলছে, আর অন্য অংশে বন্যা বইছে। খোদ ইউরোপের মতো ঠান্ডা অঞ্চল এতটা উত্তপ্ত হবে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি।

full

পরিবেশবিদ ড. হানা ফ্রেডরিক বলেন, “এই ঘটনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব। বিশ্ব উষ্ণায়নকে যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে আগামী দিনে আরও মারাত্মক পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের।”এদিকে গরমের কারণে বিদ্যুৎচাহিদাও বেড়ে যাচ্ছে। কুলিং সিস্টেম, এসি, ফ্যানের জন্য বিদ্যুতের ওপর চাপ বাড়ছে। ইউরোপের অনেক শহরে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপের জন্য লোডশেডিং শুরু হয়েছে।এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের একাধিক দেশের সরকার নাগরিকদের ঘরে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছে। জল বেশি করে পান করা, ঠান্ডা জায়গায় থাকার উপদেশ দিচ্ছে। পাশাপাশি, জল সংরক্ষণ, গাছ লাগানো এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর দিকে আরও গুরুত্ব দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments