Rain forecast in Bengal due to three-way weather influence : বাংলার আকাশে ফের মেঘ জমেছে, আর তার পেছনে রয়েছে এক অনন্য ত্রিমুখী আবহাওয়ার রসায়ন—একদিকে উড়িশা ও সংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর ঘূর্ণাবর্ত, অন্যদিকে পূর্ব-পশ্চিম অক্ষরেখার বিস্তার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বুকে, আর সঙ্গে সক্রিয় মৌসুমী অক্ষরেখা—এই তিনটি উপাদানের মিলিত প্রভাবে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে নতুন করে বৃষ্টির পালা। আবহাওয়া দপ্তরের মতে, এই ত্রিফলা সংমিশ্রণের কারণে দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে বেশ কিছু জেলায় ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে আগামী রবিবার পর্যন্ত। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ইতিমধ্যেই মেঘলা আকাশের নিচে থমথমে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, আর সেইসঙ্গে জনজীবনে ছায়া ফেলেছে বৃষ্টির আশঙ্কা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলিতে শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে রবিবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর, সঙ্গে থাকবে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বইতে থাকা দমকা হাওয়া, যা বিশেষ করে খোলা বাজার, গৃহনির্মাণ ও ছোটখাটো দোকানগুলোর জন্য একটা ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারেও থাকবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভারী বৃষ্টিপাত, সঙ্গে সেই একই রকম গতির ঝোড়ো হাওয়া। কলকাতার আকাশ মূলত মেঘলা থাকবে, শুক্রবার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি, কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশ থাকায় আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদ অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “এই সময়টা বর্ষার অগ্রগতির পক্ষে উপযুক্ত হলেও ত্রিমুখী আবহাওয়ার উপস্থিতি বৃষ্টির চরিত্রকে মাঝে মাঝেই অপ্রত্যাশিত করে তুলছে, ফলে মানুষজনকে সজাগ থাকতে হবে, বিশেষ করে যারা কৃষিকাজ, নির্মাণ কিংবা জলসেচের কাজে জড়িত
।” কৃষকদের চিন্তার জায়গাটাও বড়—জল জমে থাকলে রোপণের কাজ ব্যাহত হবে, আবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে newly-planted ধান চারা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। জলাধারগুলি যে পর্যাপ্তভাবে ভরবে সেটা যেমন আশার দিক, তেমনি বাঁধ ভেঙে প্লাবনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পুরুলিয়ার এক কৃষক পরেশ মাহাতো জানিয়েছেন, “এই সময় যদি ঠিকমতো বৃষ্টি হয় ভালো, কিন্তু বৃষ্টিটা যদি ঝেঁপে আসে, তাহলে গোটা মরশুমটাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা এখন আকাশের দিকেই তাকিয়ে আছি।” শহরাঞ্চলেও রাস্তাঘাট, গৃহসংস্থান প্রকল্প ও স্কুলে ক্লাসে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, এবং কিছু জেলায় ইতিমধ্যেই জল জমে রাস্তা বন্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৪ ঘন্টায় শহরে তাপমাত্রা থাকবে ২৭ ডিগ্রি থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে, ফলে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি থেকে মুক্তি নেই। আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে সব জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমানে যেখানে ইতিমধ্যেই খোলা চত্বরে দোকান, হাট, রাস্তার উন্নয়নমূলক কাজ ইত্যাদি বৃষ্টির জেরে প্রভাবিত হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তার জন্য বিদ্যুৎ দপ্তর ও স্থানীয় পঞ্চায়েত গুলিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতির উপর নজর রাখার। অপরদিকে পরিবেশবিদদের মতে, এই বৃষ্টি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হলেও, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে শহরে জলনিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে, যার ফলে প্রতি বছরই দেখা যাচ্ছে রাস্তা জলে ডুবে যাওয়া, গাড়ির চাকা থেমে যাওয়া কিংবা স্কুল-অফিস বন্ধ রাখার মতো চিত্র। এ বিষয়ে রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানান, “আমরা পুরসভাগুলিকে পরামর্শ দিচ্ছি ড্রেনেজ ক্লিয়ারেন্স, নদী-খাল পরিষ্কার রাখা ও জল জমার জায়গাগুলির উপর নজর রাখার জন্য। শহর ও গ্রামে এই মুহূর্তে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।” সবমিলিয়ে বলা যায়, বাংলায় চলতি বৃষ্টির এই ত্রিমুখী প্রভাব একদিকে যেমন স্বস্তির বৃষ্টি নিয়ে এসেছে, তেমনি বাড়িয়েছে দুর্যোগের আশঙ্কা—এখন প্রশাসনের কাঁধে দায়িত্ব, এই প্রাকৃতিক পরিস্থিতিকে সামাল দিয়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে সচল রাখা। সাধারণ মানুষকেও সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর—খোলা আকাশে না বেরোনো, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে থাকা, এবং প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নেওয়ার কথা বলা হয়েছে বারবার।