...
Friday, July 4, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যভরা বর্ষায় বনগাঁ আদালত চত্বরেই বসল বিয়ের আসর

ভরা বর্ষায় বনগাঁ আদালত চত্বরেই বসল বিয়ের আসর

Wedding ceremony held at Bangaon court premises in heavy rain:বর্ষার দিনে ছাতার ছায়ায় যখন বনগাঁ আদালতের চারপাশ ভিজে যাচ্ছে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে, তখনই এক অদ্ভুত অথচ মানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা আদালত চত্বর। যেখানে মামলার জেরে জেল, জামিন, আইনজীবীর যুক্তি—সবকিছুর শেষে শেষ পর্যন্ত মিল হল বিয়ে! ঘটনাটি যেন ঠিক সিনেমার কাহিনিকেও হার মানায়। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ, তারপরে সেই মামলায় জেল, এরপর জামিনের শর্তে বিয়ে—এই অনন্য গল্পের কেন্দ্রবিন্দু বনগাঁ আদালত এবং দুই তরুণ-তরুণী, যাদের প্রেম থেকে শুরু করে আদালত অবধি পথটা একদম সোজা ছিল না।ঘটনার সূত্রপাত বনগাঁর এক বিশেষভাবে সক্ষম যুবতী এবং এক যুবকের মধ্যে গড়ে ওঠা দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক থেকে। দীর্ঘ সময় প্রেমের পর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন ওই যুবক, এমনটাই দাবি করেন যুবতী। কিন্তু সময় গড়াতেই যুবক বেঁকে বসেন, এবং বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। সেই সময়েই ওই যুবতী সাহস করে বনগাঁ থানায় যুবকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ দায়ের করেন। মামলার ভিত্তিতে গত ৩০ মে পুলিশ অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করে এবং তারপর থেকে যুবক ছিলেন জেল হেফাজতে।

যদিও মামলা চলাকালীন আদালতের সামনে দুই পক্ষই জানায়, তাঁরা বিয়ে করতে রাজি। সেই বক্তব্যের ভিত্তিতে আদালত গতকাল যুবককে জামিন মঞ্জুর করে, শর্ত ছিল—জামিনের পরপরই অভিযুক্ত যুবককে অভিযোগকারীকে বিয়ে করতে হবে। সেইমতো আজ বনগাঁ আদালতের চত্বরে, এক আইনজীবীর চেম্বারে উপস্থিত আইনজীবী নিবেদিতা ঘোষ দে-র উদ্যোগে, দুই পক্ষের পরিবার, কাকিমা-কাকু, মামা-ভাইয়ের উপস্থিতিতে পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণে সম্পন্ন হয় বিবাহের সমস্ত অনুষ্ঠান। মঙ্গলসূত্র পড়ানো থেকে শুরু করে গাঁটছড়া, সবই ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হয়। বৃষ্টিভেজা দিনে আদালতের পাশেই যেন বসে গেল এক অভিনব বিবাহ আসর।এই বিষয়ে অভিযুক্ত যুবকের আইনজীবী নিবেদিতা ঘোষ দে জানান, “আমরা আদালতে জানিয়েছিলাম, দুজনেই একে অপরকে ভালোবাসেন এবং বিয়ে করতে চান। সেই কথা অনুযায়ী জামিনের শর্তে আজই বিয়ে সম্পন্ন হল। এটা এক মানবিক দৃষ্টান্ত।” অভিযুক্ত যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, “ভুল বোঝাবুঝির কারণে যা হয়েছিল, শেষমেশ ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা সবাই খুশি।”

Screenshot 2025 07 04 124343

অন্যদিকে যুবতীর এক আত্মীয় বলেন, “আমাদের মেয়েটি বিশেষভাবে সক্ষম হলেও খুব সাহসী। সে আইনের দ্বারস্থ হয়ে যে লড়াইটা করেছে, সেটা অনেকেই সাহস করে না। এখন সে স্বামীর স্বীকৃতি পেয়েছে—আমরা আশা করি ওর ভবিষ্যৎ সুখের হোক।” পুরো ঘটনাটি এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হতে শুরু করেছে—মানুষ বলছেন, “এটাই হল বিচার ব্যবস্থার মানবিক রূপ”। কেউ বলছেন, “ভালবাসার জয় হল”, আবার কেউ বলছেন, “আদালতে প্রেম বিয়ে অবধি—এটাই বাস্তব সিনেমা।”তবে এই ঘটনাটি যেমন আবেগঘন, তেমনি সমাজে একটি বার্তাও দেয়—আইন যদি মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে অনেক জটিল পরিস্থিতিরও সমাধান হতে পারে। একইসঙ্গে এই ঘটনা প্রমাণ করে, বিশেষভাবে সক্ষম হলেও একজন নারী তাঁর অধিকার নিয়ে সচেতন এবং সাহসের সঙ্গে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন।তবে এই ঘটনাটি কিছু প্রশ্নও রেখে যাচ্ছে—যেখানে সম্মতি, সম্পর্ক ও প্রতিশ্রুতি মিশে যায়, সেখানে বিচারের ধরন কী হবে, সেই বিতর্ক দীর্ঘ। যদিও এই মামলাটি আপাতভাবে বিবাহের মাধ্যমে নিষ্পত্তি পেলেও, সম্পর্কের ভবিষ্যৎ যে শুধুই সমাজ বা আদালতের আশ্বাসে নয়, বরং সম্মান, ভালবাসা ও দায়িত্বের উপর নির্ভর করে, সে কথাও আমাদের ভেবে দেখতে হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.