Thunderstorms expected in South Bengal next week:দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে একদিকে যখন গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা, তখনই রাজ্যবাসীর জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর নিয়ে এল আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস। সপ্তাহজুড়ে রোদের দাপট ও আদ্রতাজনিত অস্বস্তির পর অবশেষে মেঘ জমার ইঙ্গিত। ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবেশের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। যার ফলে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলা থেকে শুরু করে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে আকাশের মুখ ভার করে ঝড়-বৃষ্টি নামতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরেই গরম ও অস্বস্তি চরমে পৌঁছেছে। সকাল থেকেই তীব্র রোদ আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা ক্রমেই বেড়েছে। কলকাতায় শুক্রবার রেকর্ড করা হয়েছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ছিল ৬১ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থাৎ শরীর থেকে ঘাম ঝরে পড়লেও কিছুতেই আরাম পাওয়া যাচ্ছে না। পার্কস্ট্রিটের বাসিন্দা সোমা সেন বলেন, “ঘর থেকে বেরোলেই মাথা ঘুরে যাচ্ছে, অটোতে বসলেও যেন গায়ে আগুন লেগে আছে মনে হচ্ছে।” একইরকম অভিযোগ শোনা যাচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দাদের কাছ থেকেও।তবে সুখবর এই যে, এই গরমের শেষে ঝড়বৃষ্টির আশ্বাস দিয়েছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক সৌম্যজ্যোতি সরকার। তিনি ‘খবর বাংলা’কে জানিয়েছেন, “আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। মূলত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, হুগলি, হাওড়া, কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা—এই সমস্ত জেলাগুলোতে প্রভাব পড়তে পারে।” তাঁর কথায়, “একদিকে যেমন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রবেশদ্বার তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর একটি ঘূর্ণাবর্তও সক্রিয় হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল।”

উত্তরবঙ্গেও বর্ষার সুর শোনা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার—এই জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে ধস নামার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। এমনকি কিছু কিছু এলাকায় নদীর জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।তবে শুধু বৃষ্টি হলেই তো হল না। প্রশ্ন হল, এই ঝড়বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জীবনযাত্রায় কী প্রভাব ফেলবে? আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আদ্রতাজনিত অস্বস্তি কিছুটা কমবে, গরমের প্রখরতা অনেকটাই হ্রাস পাবে। বিশেষ করে কৃষক সম্প্রদায়ের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার কৃষক নিরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “আমরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছিলাম, চাষের জমি ফাটল ধরে গেছিল। এবার যদি বৃষ্টি হয় তাহলে বীজ ছড়াতে পারব।” তবে শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য কিছুটা সমস্যাও হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে যদি হঠাৎ করে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়, তাহলে অফিসগামীদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। বিশেষত কলকাতা ও হাওড়ার কিছু নিচু এলাকায় অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। কলকাতার বেহালা এলাকার বাসিন্দা অলকেশ দত্ত বলেন, “একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু জল, এবার যদি বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হয় তাহলে তো আরও খারাপ হবে।”