Temperatures are rising, but there is a chance of scattered rain:পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় যখন প্রকৃতির ছোঁয়ায় মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে, তখন দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রার পারদ উর্ধ্বগামী হয়ে সাধারণ মানুষের জনজীবন যেন অস্থির করে তুলেছে। চলতি সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সকাল থেকেই রোদের দাপটে অস্বস্তি বাড়তে শুরু করেছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, অন্তত আগামী ১২ই জুন পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই কম। বরং তার বদলে বাড়বে উষ্ণতা, আর তার সঙ্গেই জারি থাকবে জলীয় বাষ্পে ভরা আর্দ্র বাতাস, যা নিঃশ্বাস নিতে কষ্টকর করে তুলছে শহর ও গ্রামীণ জনপদে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান সহ একাধিক জেলায় দিনের বেলা তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর ছাড়িয়ে যাচ্ছে।আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে দক্ষিণবঙ্গের উপর মৌসুমি অক্ষরেখা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। অপরদিকে, বঙ্গোপসাগরের উপর কোনো নিম্নচাপ সক্রিয় না হওয়ায় বর্ষা ঢুকতে পারছে না এই অঞ্চলে। যদিও উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায়, বিশেষ করে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে আগামী কয়েকদিন বজ্রবিদ্যুৎ সহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। সেই তুলনায় দক্ষিণবঙ্গ শুষ্ক, গরম এবং আর্দ্রতায় জর্জরিত।
ফলে বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাস্তায় বের হওয়া মানেই ঘেমে নেয়ে কাহিল অবস্থা।কলকাতা শহরের বাসিন্দা গৃহবধূ শিপ্রা মুখোপাধ্যায় বললেন, “ঘরে বসেই ঘাম হচ্ছে। এসি চালানো ছাড়া উপায় নেই, কিন্তু বিদ্যুৎ বিলের কথা ভেবেও ভয় লাগছে।” হাওড়ার বাসিন্দা টোটোচালক রাজেশ পাল জানালেন, “তাপ আর আর্দ্রতা এত বেড়ে গেছে, টোটো চালাতে গেলেই মাথা ঘুরছে। রাস্তায় যাত্রীও কম। সবাই ঘরেই থাকছে।” পরিবেশবিদ অভিজিৎ সাহা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই বছরের বেশিরভাগ সময় এমন চরম আবহাওয়া আমরা পাচ্ছি। বৃষ্টির চক্র বদলে গেছে। মাটিতে জল জমছে না, বাতাসেও জলীয় বাষ্প। ফলে আমাদের শরীর তার বিরূপ প্রভাব বুঝিয়ে দিচ্ছে।”এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন স্কুল পড়ুয়া ও দিনমজুরেরা।
অনেক জায়গাতেই ছেলেমেয়েদের স্কুল যাওয়া কমেছে, অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে তাদের ঘরে রেখেছেন। দিনমজুরদের ক্ষেত্রেও সমস্যা ভয়াবহ। তাঁরা বলছেন, “রোদে ১ ঘণ্টা কাজ করলে মাথা ধরে যাচ্ছে, ঘাম ঝরছে। আবার কাজ না করলে পেট চলবে না।” কৃষকরাও বলছেন, বৃষ্টির অভাবে ধানের বীজ রোপর সময়ের আগে মাটি ভিজছে না, জল না থাকলে বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। এই সময়ের বৃষ্টির উপর নির্ভর করে অনেক অঞ্চলের আবাদি ক্ষেত।আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৬৫ থেকে ৯৪ শতাংশ। এতে ঘাম শুকোচ্ছে না, শরীর ঠান্ডা হচ্ছে না, ফলে হিটস্ট্রোক বা হিট র্যাশের মতো সমস্যা বাড়ছে। চিকিৎসকরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার জল পান করতে হবে, খোলা রোদে না যেতে পারলে ভালো, এবং প্রয়োজনে ইলেকট্রোলাইট ও লবণ-চিনির জল খেতে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের এই সময় সাবধানে রাখতে হবে।