Light rain likely in South Bengal:-গরমে হাঁসফাঁস করছে দক্ষিণবঙ্গ, মাথার উপর রোদের তীব্র খরচোখরানি, আর পায়ের নিচে ফুটন্ত পিচ। তারই মধ্যে একটু স্বস্তির সম্ভাবনা নিয়ে আশার আলো দেখাল হাওয়া অফিস। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় আগামী দু-একদিনের মধ্যে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে, এমন পূর্বাভাস মিলেছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে। যদিও পুরোপুরি জোরে বৃষ্টি হবে না, তবুও এই হালকা বৃষ্টিই এখন দগ্ধ জনজীবনের কাছে পরম স্বস্তির আশ্বাস।আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম-এ আগামী বুধবার ও বৃহস্পতিবার বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে থাকতে পারে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিমি বেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া। অর্থাৎ, বৃষ্টি যেমন হবে, তেমনি সেই বৃষ্টির আগে বেশ কিছু জায়গায় ঝোড়ো হাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই হাওয়া বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।

এই হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও, আদ্রতা-জনিত অস্বস্তি কিন্তু চলবে পুরোমাত্রায়। বৃষ্টির ফাঁকে ফাঁকে রোদের ঝলকানি এবং গায়ে লেগে থাকা আদ্র আবহাওয়া শরীরে ক্লান্তি আর ঘেমে যাওয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে। কলকাতার আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বুধবার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠতে পারে ৩৭ ডিগ্রি পর্যন্ত। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৪৬% থেকে ১০০% পর্যন্ত ওঠানামা করছে, ফলে “হট অ্যান্ড হিউমিড” অবস্থা থেকে আপাতত রেহাই নেই।তবে এই সামান্য বৃষ্টির আশায় বুক বাঁধছেন দক্ষিণবঙ্গের কৃষকরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের এক চাষি রঘুনাথ সর্দার বলেন, “গরমে জমিতে জল থাকছে না, মাটি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এই বৃষ্টি যদি হয়, তাহলে অন্তত বীজ পুঁততে সুবিধা হবে।” আবার হাওড়ার এক ফলচাষি সুদীপ ঘোষাল জানিয়েছেন, “আমের বাগানে রোজ জল দিতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে গাছগুলো একটু প্রাণ ফিরে পাবে।” অর্থাৎ এই বৃষ্টি শুধু শহরের মানুষের স্বস্তি নয়, গ্রামের কৃষিজীবী মানুষের কাছে এক আশার বৃষ্টি।অন্যদিকে, স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরাও বলছেন এই ধরনের গরমে কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। কলকাতার এক নামকরা চিকিৎসক ডা. অনিন্দ্য মিত্র জানালেন, “এই ধরনের আদ্র গরমে ডিহাইড্রেশন, হিট স্ট্রোক বা হিট এক্সহস্টনের ঝুঁকি থাকে বেশি। তাই বেশি জল খেতে হবে, সরাসরি রোদে হাঁটাহাঁটি কম করতে হবে, হালকা খাবার খাওয়াই ভাল। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি নজর রাখা জরুরি।”
আবহাওয়া দপ্তর আরও জানাচ্ছে, উত্তরের প্রায় সব জেলাতেই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও দক্ষিণবঙ্গের কিছু জায়গায় তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পশ্চিম মেদিনীপুরে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ফলে দুপুরের সময় রাস্তায় না বেরোনোর পরামর্শ দিচ্ছে প্রশাসন। একইসঙ্গে মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানেও হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস মিলেছে, যা সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে।তবে এই বৃষ্টির পূর্বাভাস শুনে অনেকেই ভাবছেন, তাহলে কি বর্ষা ঢুকে পড়ল? সেই প্রশ্নের উত্তর এখনই না দেওয়াই ভালো। কারণ বর্ষার আগমন এখনও কয়েক সপ্তাহ বাকি। এখন যে বৃষ্টি হবে তা মূলত স্থানীয় বজ্রগর্ভ মেঘের কারণে, যাকে আবহাওয়াবিদেরা ‘প্রি-মনসুন অ্যাক্টিভিটি’ বলেন। ফলে এর সঙ্গে বর্ষার আসা-যাওয়ার কোনও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। তবু এই গরমের দিনে এমন একটুখানি বৃষ্টিই যেন শরীর ও মনের রিফ্রেশার।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/03/10/f8ekEf28ZOlMJEaqYntK.jpg)
অন্যদিকে, যাতায়াতকারী ও অফিসযাত্রীদের জন্য এই ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির পূর্বাভাস মানে কিছুটা দুর্ভোগও। বেহালা থেকে অফিসগামী এক কর্মী দেবলীনা সেন বললেন, “একদিকে ঘাম, আরেকদিকে ছাতা নিয়ে দৌড়ানো। এখন সকাল হলেই মনে হয়, আজ কতটা কষ্ট হবে অফিস যেতে।”সব মিলিয়ে বলাই যায়, দক্ষিণবঙ্গের মানুষ এই মুহূর্তে এক অদ্ভুত আবহাওয়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন—একদিকে চরমান গরম ও আদ্রতা, অন্যদিকে বৃষ্টির স্বস্তির সম্ভাবনা। এই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি প্রাকৃতিক ছন্দের সাথেও তাল মেলাতে হবে। যতক্ষণ না বর্ষা পুরোপুরি ঢোকে, ততদিন এই রোদ-বৃষ্টি-ঘাম লেগেই থাকবে। তবে সবার একটাই প্রার্থনা—যেন দ্রুত আসে বর্ষা, আর এই অস্বস্তির গরম কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়।