Google Gemini will deliver the main message of the long email, claims the company : চাকরির অফার লেটার থেকে শুরু করে অনলাইন কেনাকাটার ইনভয়েস, ব্যাংক স্টেটমেন্ট হোক কিংবা কোম্পানির ক্লায়েন্ট রিপোর্ট—এই সবকিছুরই আধুনিক মাধ্যম এখন ইমেইল বা মেল। কিন্তু আধুনিক দুনিয়ায় যতই ডিজিটাল হই, ততই যেন বাড়ছে সময়ের অভাব, ব্যস্ততার চাপে অনেকেই পুরো মেল পড়ার আগ্রহ বা সুযোগ হারাচ্ছেন। অনেক সময় জরুরি তথ্যও হারিয়ে যাচ্ছে মেলের দীর্ঘ লাইনের ভিড়ে। আর ঠিক সেইখানেই হাজির হয়েছে গুগলের নতুন টেক-সহকারী ‘Gemini’। সংস্থার দাবি, এখন থেকে Gmail-এ আপনি দীর্ঘ মেল খুলে না দেখেও মেইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, মানে সারাংশটা পেয়ে যাবেন একেবারে চোখের সামনে! আর সেই সারাংশ তৈরি করবে গুগলের অত্যাধুনিক এআই (Artificial Intelligence) সিস্টেম, যার নাম Gemini। গুগল জানাচ্ছে, আপাতত এই সুবিধা শুধুমাত্র Android এবং iOS প্ল্যাটফর্মে Gmail ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, এবং ধীরে ধীরে আরও অনেক ফিচার এতে যুক্ত করা হবে। সংস্থার এক মুখপাত্র জানান, “আমরা বুঝতে পারি, প্রত্যেক ব্যবহারকারীর সময়ের মূল্য আছে। তাই যারা দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে দ্রুত তথ্য জানতে চান, তাঁদের জন্য এই সুবিধা দারুণ কার্যকর হবে।”
এখন প্রশ্ন উঠছে, এটি কীভাবে কাজ করে? ধরুন আপনি একজন জিমেল ব্যবহারকারী। আপনার ইনবক্সে একটি বড় মাপের অফিশিয়াল মেল এসেছে। আপনি যখন সেই মেল খুলবেন, ঠিক তখনই মেলের ওপরে বা পাশে ‘Summarized by Gemini’ নামের একটি অপশন দেখা যাবে। সেখানে ক্লিক করলেই দেখবেন, কয়েকটি লাইনে মেলটির মূল বক্তব্য সুন্দরভাবে লেখা রয়েছে। অর্থাৎ মেইলটা না খুলেই আপনি বুঝে যাবেন, কী বলতে চাওয়া হয়েছে, মেইলটি জরুরি কি না, এখনই দেখা দরকার কিনা বা পরে সময় বের করে পড়লেও চলবে কিনা। এটি গুগল AI-এর একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক সৌরভ বসু বলেন, “এই ফিচারটি শুধু সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য নয়, কর্পোরেট স্তরেও খুব উপকারী হতে চলেছে। মিটিং বা ক্লায়েন্ট মেইলের সারাংশ যদি আগে থেকেই পাওয়া যায়, তাহলে সময় বাঁচে, সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।” তাঁর মতে, গুগলের এই ইনোভেশন ভবিষ্যতে মেল ব্যবস্থার ধরনটাই বদলে দিতে পারে। অন্যদিকে কিছু প্রযুক্তি সংস্থার মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, যেহেতু এটি এআই ভিত্তিক, তাই মাঝে মাঝে তথ্য ভুল ব্যাখ্যা করবার সম্ভাবনা থেকে যাবে। তবে গুগল জানিয়েছে, ব্যবহারকারীরা চাইলে তাদের ফিডব্যাক দিতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী ভবিষ্যতের আপডেটগুলি উন্নত করা হবে।
Gemini নিয়ে গুগলের এই পদক্ষেপ আসলে তাদের Bard ও Duet AI প্রজেক্টেরই একটি ধারাবাহিক অগ্রগতি। আগে যেখানে Bard ছিল মূলত চ্যাটবট, এখন সেটিই Gemini হয়ে উঠে এসেছে আরও বেশি স্মার্ট ভার্সনে, যার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে Google Workspace-এর নানা পরিষেবা—Docs, Sheets, Slides এমনকি Gmail ও Calendar-এও। গুগলের মতে, Gemini মূলত ‘Co-pilot for work’, যার মানে, আপনি কাজ করছেন আর Gemini আপনার সহকারী হিসেবে সবকিছু গোছাচ্ছে, সারাংশ তৈরি করছে, সাজিয়ে দিচ্ছে। এমনকি ভবিষ্যতে এটিকে ব্যবহার করে পুরো মেল উত্তরও লেখা যাবে—আপনার পছন্দের ভাষা ও টোন অনুযায়ী!
এই সুবিধাটি বর্তমানে শুধুমাত্র Gmail অ্যাপের ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য এবং ধাপে ধাপে ওয়েব ভার্সনে আনাও শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এটির জন্য একটি শর্ত রয়েছে—আপনাকে Google Workspace-এর গ্রাহক হতে হবে অথবা Workspace Labs-এর অংশ হতে হবে। অর্থাৎ এখনই সাধারণ ফ্রি ব্যবহারকারীরা হয়তো এই সুবিধা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন না, কিন্তু ভবিষ্যতে সকলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার।
এই ফিচার চালু হওয়ার পর অনেক ব্যবহারকারীরা বলছেন, “যেখানে প্রতিদিন ৫০-৬০টা মেইল আসে, তার মধ্যে কোনটা পড়বো আর কোনটা নয়, সেটা বোঝা মুশকিল ছিল। Gemini সেই সমস্যার দারুণ সমাধান এনে দিয়েছে।” আবার কেউ কেউ বলছেন, “আমাদের মতো বিজনেস ক্লায়েন্টদের জন্য এটি সত্যিই গেম চেঞ্জার।”
তবে সব সুবিধার মধ্যেও কিছু প্রযুক্তি বিশ্লেষক সতর্ক করছেন—যেহেতু এআই দ্বারা তৈরি সারাংশ, তাই অনেক সময় নিখুঁত তথ্য না-ও থাকতে পারে। তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ বা আইনগত মেইল হলে পুরো মেইলটি পড়া জরুরি, শুধু সারাংশ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। প্রযুক্তি গবেষক অনিন্দ্য ধর বলছেন, “যারা দ্রুত তথ্য চান, তাদের জন্য এ দারুণ উপায়, তবে যারা খুঁটিনাটি তথ্য নিয়ে কাজ করেন তাদের পক্ষে পুরো মেল পড়াটাই নিরাপদ।”
ভবিষ্যতে Gemini-এর এই সুবিধা কেবল মেইলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। গুগলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এটি Google Meet-এ মিটিংয়ের সারাংশ তৈরি করবে, Google Docs-এ রিপোর্টের সারাংশ তৈরি করবে এমনকি গুগল ড্রাইভে থাকা PDF বা প্রেজেন্টেশনের মূল তথ্যও সহজে তুলে ধরবে। যা ব্যবহারকারীর সময় বাঁচিয়ে দেবে প্রচুর।
সব মিলিয়ে বলতে গেলে, গুগলের এই নতুন পদক্ষেপ শুধু মেল পাঠানোর অভ্যাস বদলাবে না, বরং মানুষের চিন্তাভাবনার গতিও অনেকটা বাড়িয়ে দেবে। এখন দেখার, সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এই পরিষেবা কবে পুরোপুরি উন্মুক্ত হয় এবং কতটা নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে Gemini AI। এক কথায়, এখন আর মেইলের ভিতরে ডুবে থাকতে হবে না—Gemini আছে বলেই মেইল পড়াও এখন এক ক্লিকে হাল্কা।
