NIA conducts searches in seven states including Bengal in connection with terrorism:-একটা সকাল, যখন সাধারণ মানুষ কাজে বেরোচ্ছে, স্কুলে যাচ্ছে বাচ্চারা, দোকানের ঝাঁপ খুলছে ব্যবসায়ীরা—ঠিক তখনই বাংলা, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, আর অসমের একাধিক জায়গায় হানা দিল দেশের সবচেয়ে বড় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA)। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায়, বিশেষ করে কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদীয়া, হাওড়া, এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় তল্লাশি অভিযান শুরু হয় সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, দরজা ভাঙা, ঘর তছনছ করা, কম্পিউটার, মোবাইল, ডিভাইস বাজেয়াপ্ত, হঠাৎ করে এলাকায় পুলিশি তৎপরতা দেখে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্কের সুর—“কে এই বাড়ির ছেলে? কী করছে এতদিন?”সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, NIA দেশের মোট ১৫টি জায়গায় একযোগে অভিযান চালিয়েছে, যার মধ্যে বাংলার একাধিক জেলা ছাড়াও রয়েছে দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, আর অসম। তবে ঠিক কোন মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে এই তল্লাশি, তা নিয়ে এখনও NIA কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। যদিও গোয়েন্দা মহলের দাবি, এই তল্লাশি অভিযান পহেলগাঁও জঙ্গিহানা এবং সম্প্রতি ধরা পড়া সিআরপিএফ জওয়ানের গুপ্তচরবৃত্তির মামলার সূত্রে হতে পারে। পহেলগাঁও কাণ্ডে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতেই কয়েকদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন NIA-র একাধিক আধিকারিক। সেখানেই সম্ভবত তথ্য মেলে বাংলার কিছু মাদ্রাসা, এনজিও, এবং নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির নাম। সেই সূত্র ধরেই শুরু হয় এই মেগা তল্লাশি অভিযান।
প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সম্প্রতি জঙ্গিহানায় একাধিক ভারতীয় জওয়ান নিহত হন, যার তদন্ত করতে গিয়ে NIA-র হাতে উঠে আসে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা স্লিপার সেলের হদিশ। বিশেষ করে বাংলা-অসম সীমান্ত, বাংলা-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় কিছু সন্দেহজনক লেনদেন, কথোপকথন এবং সন্দেহভাজন যোগাযোগের সূত্র পেয়েছেন গোয়েন্দারা। জানা যাচ্ছে, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ISI-র হয়ে এক সিআরপিএফ জওয়ান গোপন তথ্য পাচারের কাজ করত, এবং সেই জওয়ান কিছুদিন আগেই পহেলগাঁওতে পোস্টেড ছিল। এই ঘটনার জেরেই NIA আরও গভীরে গিয়ে তদন্তে নামে, আর সেই সূত্রেই বাংলাসহ সাত রাজ্যে একযোগে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়।এই ঘটনার পর স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মুর্শিদাবাদের এক বাসিন্দা মো. সামসুল বলেন, “সকালে হঠাৎ NIA, পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঢুকল, আমাদের ছেলের মোবাইল, ল্যাপটপ সব নিয়ে গেল। আমরা জানিই না ও কী করে, কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে!” আর এক মহিলা আসমা খাতুন বলেন, “এতবছর ধরে এই পাড়ায় থাকি, ভাবতেও পারিনি, আমাদের পাড়ার ছেলের নাম জঙ্গি মামলায় জড়াবে!”
NIA-র এই তল্লাশি নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও তোলপাড়। তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা শেখ ওয়াসিম বলেছেন, “NIA ঠিকমতো তদন্ত করুক, আমরা চাই বাংলার মাটিতে কোনো দেশবিরোধী কাজ চলুক না। কিন্তু সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করা ঠিক নয়। নির্দোষদের না হয়রান করা হোক।” বিজেপির মুখপাত্র সামরিক ঘোষ বলেন, “বাংলার মাটিকে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর বানানো হয়েছে, তাই NIA-র অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা দেশদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত, তাদের শাস্তি পেতেই হবে।”অন্যদিকে, গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই তল্লাশি অভিযান থেকে স্পষ্ট যে সন্ত্রাসবাদ ও গুপ্তচরবৃত্তির নেটওয়ার্ক শুধু সীমান্তবর্তী রাজ্য নয়, দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে, আর এই জাল ছিন্ন করতে বড় মাপের অভিযান চালাতে হচ্ছে NIA-কে। এক প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্তা অরুণাভ দত্ত বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলা গুলি বহুদিন ধরেই সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ, পাচার, আর মাদ্রাসা-এনজিওর আড়ালে তহবিল আসার বিষয়গুলো এখন আরও স্পষ্ট হচ্ছে।”
NIA-র এই অভিযানের পর ভবিষ্যতে কী হতে পারে? বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রথমেই একাধিক গ্রেফতার হতে পারে, কয়েকটি মাদ্রাসা-এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করা হতে পারে, সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে UAPA-র (Unlawful Activities Prevention Act) ধারায় মামলা হতে পারে। পাশাপাশি, বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আরও বাড়ানো হতে পারে, বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার হবে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয়-আতঙ্ক তৈরি হবে, আবার সরকারের কড়া পদক্ষেপের বার্তাও যাবে।সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলা-সহ সাত রাজ্যে NIA-র তল্লাশি অভিযান শুধু একদিনের ঘটনা নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার এক নতুন সতর্কতার বার্তা। সাধারণ মানুষের একটাই কথা—“অপরাধী ধরা হোক, কিন্তু নির্দোষদের হয়রানি না হোক।” তবে এই তল্লাশি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে যে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে, তা স্পষ্ট। দেশজুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান কতদূর গড়ায়, কারা কারা ধরা পড়েন, আর নতুন করে কী কী তথ্য উঠে আসে, সেটাই এখন দেখার।