Fire breaks out in 8 vehicles in containers in Pingla:পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় সোমবার ভোরের অন্ধকারেই যেন আগুনের দানব নেমে এলো। জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রাইভেট গাড়ি বোঝাই কনটেনারে হঠাৎই দেখা গেল লালচে আগুনের ঝলকানি, মুহূর্তের মধ্যে সেটি দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে। আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে গেল কনটেনারের ভেতরে থাকা ৮টি নতুন প্রাইভেট গাড়ি। ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ৪টে ছুঁইছুঁই, চারপাশের এলাকা তখনও ঘুমে আচ্ছন্ন, কিন্তু এই আগুনের তাপে মুহূর্তের মধ্যে জেগে ওঠে পুরো কৃষ্ণনগর পার্কিং এলাকা। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা বিধানসভার অন্তর্গত খড়গপুর ২ নম্বর ব্লকের খড়গপুর-কলকাতা ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের লেনের পাশে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে হঠাৎ একটি বিকট শব্দ হয়, তারপরই দেখা যায় কনটেনারের ভিতর থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দমকলের ইঞ্জিন পৌঁছাতে সময় লাগে, কিন্তু ততক্ষণে আগুন এতটাই তীব্র হয়ে যায় যে, একের পর এক গাড়ি জ্বলতে শুরু করে। দুই ঘন্টার চেষ্টায় দমকলের তিনটি ইঞ্জিন মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, এই ঘটনায় কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
এই ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কৃষ্ণনগর পার্কিংয়ে থাকা এক নিরাপত্তাকর্মী রমেশ জানা বলেন, “হঠাৎ শব্দ শুনে ছুটে এসে দেখি আগুন লেগে গেছে। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কেউ কিছু ফেলে দিয়েছে, কিন্তু পরে বুঝলাম পুরো কনটেনারটাই জ্বলছে। কিছুই করতে পারিনি, শুধু চোখের সামনে গাড়িগুলো পুড়ে গেল।” স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল দাস বললেন, “এই পার্কিংয়ে নিয়মিত গাড়ি রাখা হয়। কিন্তু এত বড় কনটেনারে আগুন লাগা সত্যিই ভয়ের। যদি পাশে থাকা বাড়ি বা দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ত, তাহলে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারত।”পুলিশ ও দমকল বিভাগ আগুন লাগার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তবে অন্য কোনো কারণ, যেমন নাশকতা বা গাফিলতি, তা-ও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। খড়গপুর থানার এক আধিকারিক জানান, “আমরা পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। কনটেনারটি কোন সংস্থার, গাড়িগুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, কারা দায়িত্বে ছিলেন, সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ফরেনসিক টিম ডেকে আনা হবে।”
এই ঘটনার পর গাড়ি পরিবহণ সংস্থাগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এক পরিবহণ সংস্থার মালিক সঞ্জয় দত্ত বলেন, “আমরা তো দিনের পর দিন গাড়ি নিয়ে চলি, কিন্তু এই ধরনের ঘটনা আমাদের ব্যবসার উপর বড় ধাক্কা দেয়। গাড়ি পুড়ে গেলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি, অথচ এই ধরনের ঘটনার আগে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না। প্রশাসনের উচিত এই ধরনের পরিবহণের ক্ষেত্রে কঠোর নিরাপত্তা নিয়ম চালু করা।”এই ঘটনায় আরও বড় বিপর্যয় না হলেও, স্থানীয় মানুষ বলছেন, যেভাবে জাতীয় সড়কের পাশে পার্কিং করা হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। নাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এক স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রদীপ পাল বলেন, “এই জাতীয় সড়কের ধারে যখন-তখন গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়। যদি কোনোদিন পেট্রোল-ডিজেলের গাড়ি নিয়ে এই ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটে, তাহলে পুরো এলাকা উড়ে যাবে। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, যেন পার্কিং ব্যবস্থায় নিয়ম আনা হয়।”