Sunday, May 25, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যলাইফস্টাইল সতর্ক থাকুন,ডায়াবেটিস মুক্ত হয়ে বাঁচুন

 সতর্ক থাকুন,ডায়াবেটিস মুক্ত হয়ে বাঁচুন

Warning, live diabetes free : একদিন সকালে, কলকাতার উত্তরে বেলঘরিয়ার একটি ছোট্ট পাড়ায়, ৪৫ বছরের গৃহবধূ মীনাক্ষী দেবী হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে মাথা ঘোরা, তারপর ঝাপসা দৃষ্টি, অবশেষে প্রস্রাবে জ্বালাভাব—সব মিলিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন, কিছু একটা ঠিক নেই। চিকিৎসকের কাছে গেলে জানা গেল, তিনি টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এমন ঘটনা শুধু মীনাক্ষীর নয়; আমাদের আশেপাশে প্রতিদিন বহু মানুষ এই ‘নীরব ঘাতক’ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন বা ব্যবহারে সমস্যা তৈরি করে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। টাইপ-১ ডায়াবেটিস সাধারণত ছোটবেলায় শুরু হয়, যেখানে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। অন্যদিকে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করলেও তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। এই টাইপ-২ ডায়াবেটিসই সবচেয়ে সাধারণ এবং এটি মূলত জীবনযাত্রার অনিয়ম, অতিরিক্ত ওজন, এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে হয়ে থাকে।

চিকিৎসক ড. এ কে আজাদ খান বলেন, “আমাদের দেশে ৯৫ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী টাইপ-২ ধরনের। তবে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করে রাখলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ঠেকিয়ে রাখা বা বিলম্বিত করা সম্ভব।”

ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, ঝাপসা দৃষ্টি, এবং ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলে তা ধীরে সারা। এই লক্ষণগুলি অবহেলা করলে ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে কিডনি, চোখ, স্নায়ু, এবং হৃদপিণ্ডের মতো অঙ্গগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এছাড়াও, ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, ফলে শরীরের ভেতরে ছত্রাকও বৃদ্ধি পেতে পারে, যা কিডনিতেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় রয়েছে:

  1. নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করলে শরীরের ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  2. সুষম খাদ্যাভ্যাস: মিষ্টি, ফাস্টফুড, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এর পরিবর্তে শাকসবজি, ফলমূল, এবং পূর্ণ শস্য খাওয়া ভালো।
  3. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। সপ্তাহে একবার ওজন পরীক্ষা করে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
  4. ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: এই অভ্যাসগুলি ইনসুলিন প্রতিরোধের সৃষ্টি করে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  5. নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা: বিশেষ করে যাদের পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, তাদের বছরে অন্তত একবার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত।
images?q=tbn:ANd9GcRZwYqMbAY0FDSJ0FrJavBfSYMTC0yS i3jc UlT1LVi TUCfcjPgeSQirZlGd8NSRQmKg&usqp=CAU

ডায়াবেটিসের প্রভাব শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও আর্থিক দিক থেকেও তা বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসা ব্যয়, ওষুধ, এবং নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই সময় থাকতে সচেতন হওয়া এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

“ডায়াবেটিসকে উপেক্ষা করা শুধু ভুল নয়, বরং একটি চরম বিপদ,”—এই কথাটি আমাদের সকলের মনে রাখা উচিত। জীবনযাত্রার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে আমরা ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করতে পারি। আপনি সুস্থ থাকুন, এটি আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments