Saturday, May 24, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যরাজ্যের প্রথম 'মা ক্যান্টিনে' পাঁচ বছর পূর্তিতে ভুরিভোজ

রাজ্যের প্রথম ‘মা ক্যান্টিনে’ পাঁচ বছর পূর্তিতে ভুরিভোজ

A feast at the state’s first ‘Ma Canteen’ to celebrate its fifth anniversary:-নৈহাটির ছোট্ট একটা গলিতে প্রতিদিন বেজে ওঠে এক বিশেষ সুর—দরিদ্র মানুষের মুখে হাসির সুর। আর সেই সুরের মূলে আছে রাজ্যের প্রথম মা ক্যান্টিন, যা আজও টিকে আছে শত ঝড়ঝাপ্টার মধ্যেও। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন করোনা অতিমারির দুঃসময়ে গোটা দেশ থমকে গিয়েছিল, তখনই স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন “মা ক্যান্টিন”-এর। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে এগিয়ে এসেছিলেন তৎকালীন নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ও নৈহাটি পৌরসভার পৌরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায়। ঠিক তখন থেকেই শুরু হয়েছিল এক আশার যাত্রা—দরিদ্র, ভবঘুরে, অসহায় মানুষদের দুমুঠো পেট ভরার লড়াইয়ে মা ক্যান্টিন হয়ে ওঠে তাঁদের আপন ঠিকানা।সময় বদলেছে, নিয়ম বদলেছে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হওয়া একের পর এক মা ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু নৈহাটির মা ক্যান্টিন এখনও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে, প্রতিদিন প্রায় ৬০০ মানুষকে খাওয়াচ্ছে দুবেলা পেট ভরে। এই ক্যান্টিনে ভাত, ডাল, সবজি, মাছ-মাংসের স্বাদ পেয়ে জীবনটাকে একটু হলেও সহজ করে নিচ্ছেন মানুষেরা। আর আজ, মা ক্যান্টিনের পাঁচ বছরের পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত হল এক বিশেষ ভুরিভোজ—যেখানে মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, পটল-আলুর তরকারি, মাটন, পাপড়, চাটনি আর মিষ্টি। যেন একদিনের জন্য হলেও সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা ভুলে একটু শান্তির স্বাদ পেতে পেরেছেন মানুষগুলো।

নৈহাটি পৌরসভার সামনে আর গরুরফাড়ি এলাকায় দুটি ইউনিটে চালু রয়েছে এই মা ক্যান্টিন। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের চোখে আজ এক অন্য উজ্জ্বলতা। পঞ্চানন মণ্ডল, যিনি প্রায় প্রতিদিন এই ক্যান্টিনে খেতে আসেন, বললেন, “আমার কোনও উপার্জন নেই। এই ক্যান্টিন না থাকলে হয়তো না খেয়ে মরতে হতো। মাটনের স্বাদ বহুদিন পরে পেলাম, মা ক্যান্টিনের জন্যই।” আরেকজন, সুবল সাহা, যিনি একটি চায়ের দোকানে কাজ করেন, তিনি বলেন, “কখনও ভাবিনি এখানে এমন খাবার পাওয়া যাবে। এই ক্যান্টিনটা আমাদের ভরসা।”এই ক্যান্টিনের ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পৌরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায় জানান, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরে আমরা গর্বিত। পার্থ ভৌমিক, সাংসদ সনদ দে, এবং আমাদের সকল কর্মীদের সহযোগিতায় এতগুলো মানুষকে খাওয়াতে পারছি—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। যতদিন সম্ভব, যতদিন আমরা আছি, এই ক্যান্টিন বন্ধ হবে না।”

প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হওয়া মা ক্যান্টিনগুলি অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, লোকবল ও প্রশাসনিক জটিলতায় বন্ধ হয়ে গেলেও, নৈহাটির এই ক্যান্টিন যেন এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। এই ক্যান্টিনের মূল লক্ষ্য অসহায়, ভবঘুরে, গৃহহীন মানুষেরা। অনেকে এই ক্যান্টিনকে বলেন “দরিদ্রের অন্নদাতা”। খাদ্যের মান নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করলেও, নৈহাটির মা ক্যান্টিনে সেই সমস্যা খুব একটা দেখা যায়নি। বরং, বহু মানুষই জানিয়েছেন যে খাবারের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো, আর সবচেয়ে বড় কথা—হাতে তুলে দেওয়ার সাথে সাথে একরাশ ভালোবাসাও মেলে এখানে।স্থানীয় এক সমাজকর্মী অঞ্জন দত্ত বলেন, “এই ক্যান্টিনের অবদান শুধু খাওয়ানো নয়, এটি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা। আমাদের সমাজে এখনও এমন কিছু উদ্যোগ আছে যা মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।”

1b242930 4a14 4b8d 9c6b

তবে এই ক্যান্টিনের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। একদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে আর্থিক সাহায্যের জোগানও অনেক সময় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পৌরপ্রধান আশ্বস্ত করেছেন, “যতদিন আমরা আছি, যতদিন সম্ভব, মা ক্যান্টিন চলবে। কিন্তু সরকারি সহায়তা আরও বেশি প্রয়োজন।”এই পাঁচ বছরের যাত্রা শুধু এক ক্যান্টিনের গল্প নয়—এ এক মানবিকতার গল্প। যেখানে শুধু খাবার নয়, প্রতিদিন সকালবেলা একটা আশা, একটা ভরসা পায় এই এলাকার দরিদ্র মানুষরা। রান্নাঘরের উনুনে জ্বলে ওঠা আগুনের সাথে সাথে যেন জ্বলে ওঠে একরাশ স্বপ্নও—এই ক্যান্টিন থাকবে, এই ভালোবাসার ভাতার জায়গা কোনোদিন বন্ধ হবে না।সব শেষে বলা যায়, নৈহাটির মা ক্যান্টিন আজ শুধু একটি সরকারি প্রকল্প নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক আবেগের প্রতীক, এক ভালোবাসার নাম। এই ক্যান্টিন যেন আরও বহু বছর ধরে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে, এটাই প্রার্থনা করছে এখানকার মানুষ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments