Bangla. Seventy-one-year-olds found dead in Magrahat, 2 councilors : দীর্ঘদিনের নিস্তব্ধতার পর ফের বাংলায় করোনার থাবা। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন! করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন রূপ আবারও বাংলার বুকেই হানা দিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ২ নম্বর ব্লকের একটি গ্রামের মানুষজনের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে এই খবর। জানা গিয়েছে, মগরাহাট ২ ব্লকের ৩১ বছরের এক মহিলা এবং ১২ বছরের এক শিশুর শরীরে ধরা পড়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। সপ্তাহ খানেক আগে ওই মহিলা এবং শিশু জ্বর, সর্দি, কাশির মতো উপসর্গ নিয়ে মগরাহাট গ্রামীণ হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসার জন্য হাজির হয়েছিলেন। সাধারণ সর্দি-কাশি মনে হলেও চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। সতর্কতামূলকভাবে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে। রিপোর্ট আসতেই হুলুস্থুল! দুজনেরই করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।
ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিকরা জানিয়েছেন, “প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত দুজনের অবস্থার উপর নজর রাখা হচ্ছে। তারা এখন বাড়িতেই আইসোলেশনে রয়েছেন এবং সুস্থ আছেন।” জানা গেছে, আক্রান্ত মহিলা একজন গৃহবধূ। তিনি প্রতিদিন গ্রামের বাজারে যেতেন এবং স্থানীয় দোকানদার ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। অপরদিকে, ১২ বছরের শিশু স্থানীয় একটি স্কুলের ছাত্র। ফলে তার সংস্পর্শে আসা অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
এই ঘটনার পর প্রশাসনের তরফ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের বাড়ি ঘিরে স্যানিটাইজেশনের কাজ চলছে। আক্রান্তদের বাড়ির আশেপাশের লোকজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যদিও প্রতিবেশীদের কারোর মধ্যে করোনা সংক্রমণ মেলেনি, তবু স্বাস্থ্যকর্মীরা সাবধান করে দিচ্ছেন সবাইকে। মগরাহাট গ্রামীণ হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “করোনার এই হঠাৎ ফিরে আসা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমরা এখনও ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছি। তাই সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ দেখলেই টেস্ট করতে হবে।’’
মগরাহাটের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মানিকলাল মণ্ডল জানিয়েছেন, “গ্রামের মানুষজন খুবই আতঙ্কিত। কেউ বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছে না। বাজারে লোকজন কমছে। আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রচার চালাচ্ছি—মাস্ক পরুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, এবং হাত জীবাণুমুক্ত করুন।”
এই সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরও তৎপর হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, “এলাকায় কোভিড টেস্টিং ক্যাম্প বসানোর ভাবনা চলছে। যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, তাহলে কনটেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হতে পারে।”
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই সংক্রমণ ওমিক্রনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট হতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে। টিকাকরণের গুরুত্বের কথা বারবার বলছি আমরা। যাদের দ্বিতীয় বা বুস্টার ডোজ বাকি, তাদের টিকা নিতে হবে।”
এই ঘটনার পর গ্রামের মানুষজনের মধ্যে একরকম চাপা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মাধবপুর গ্রামের বাসিন্দা মীনা দাস বললেন, “হঠাৎ করে আবার করোনা আসবে ভাবিনি। আমরা তো স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেছিলাম। এখন আবার ভয় করছে।’’ তার কথারই সুর মেলালেন স্থানীয় চাষি রতন হালদার, “আমরা তো দিনে-রাতে কাজ করি। হাটে-বাজারে যাই। আবার করোনা এলে আমাদের জীবিকা চলে যাবে কি করে? সরকার যদি আবার লকডাউন করে, তাহলে খুব সমস্যায় পড়ব।”
তবে এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কোনও নতুন নিয়ম জারি করা হয়নি। তবে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর, সর্দি, কাশি, বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারও শরীরে উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে করোনা টেস্ট করাতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার এই নতুন সংক্রমণ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে আমরা এখনও করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। তাই টিকাকরণ শেষ করা, মাস্ক পরা, এবং হাত ধোয়ার অভ্যাসকে জীবনযাপনের অংশ করে তুলতে হবে।
এই ঘটনার পর থেকে মগরাহাট গ্রামে স্থানীয় ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিও প্রচারে নেমেছে। গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মাইকে সচেতনতার প্রচার চলছে—“করোনা এখনও চলে যায়নি। সাবধানে থাকুন। মাস্ক পরুন, হাত ধুয়ে নিন, ভিড় এড়িয়ে চলুন।”
অন্যদিকে, কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ সমরেশ চক্রবর্তী বললেন, “করোনা ভাইরাসের চরিত্র বদলাচ্ছে। তাই সংক্রমণ হঠাৎ করে নতুন করে আসা অস্বাভাবিক নয়। আমরা যদি সাবধানে থাকি, তাহলে আর বড় বিপদ হবে না।”
সবমিলিয়ে বলা যায়, মগরাহাটের এই করোনা সংক্রমণ আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, করোনা এখনও আমাদের চারপাশে রয়েছে। তাই আরেকটু বেশি সতর্কতা, আরেকটু বেশি সচেতনতা আমাদেরকে নিরাপদ রাখবে। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, টিকাকরণ সম্পূর্ণ করা, এবং নিজের দায়িত্ব পালন করা—এই তিনটিই হল আমাদের হাতিয়ার। এই বিপদের সময়ে একমাত্র সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই আমাদের রক্ষাকবচ।