Friday, May 23, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গরিসোর্ট মালিকের কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

রিসোর্ট মালিকের কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

Resort description accused of asking for money : দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৌসুনী দ্বীপ – নিস্তব্ধতা আর প্রকৃতির নিখাদ টানেই যেখানকার সৈকতজুড়ে ভিড় জমে ভ্রমণপিপাসু বাঙালির, সেখানে এখন এক অস্বস্তিকর বিতর্কের আঁচ। মৌসুনীর এক রিসোর্ট মালিকের অভিযোগ ঘিরে গোটা এলাকা জুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। তাঁর দাবি, ফ্রেজারগঞ্জ থানার ওসি এবং কয়েকজন স্থানীয় যুবক মিলে তাঁর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চেয়েছিলেন। টাকা না দেওয়ায় তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে। এমনকি জমি দখল ও বেআইনি ঘেরার মতো নানা অভিযোগ এনে তাঁকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই রিসোর্ট মালিক। তাঁর তরফে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এরইমধ্যে সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং আট সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন, যার জেরে ফের বিতর্কে জর্জরিত হচ্ছে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন।

এই ঘটনার সূত্রপাত, মৌসুনী দ্বীপে পর্যটকদের জন্য নির্মিত একটি রিসোর্ট ঘিরে। রিসোর্টের মালিকের অভিযোগ, স্থানীয় কয়েকজন যুবক পুলিশের মদতে তাঁর কাছ থেকে মোটা টাকা দাবি করে। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করতেই তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দায়ের করা হয়। কখনো জমি দখলের, আবার কখনো বেআইনি ভাবে জমি ঘেরার অভিযোগ উঠে আসে ফ্রেজারগঞ্জ থানার পুলিশের পক্ষ থেকে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে থানার পুলিশ এফআইআর করে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু অভিযোগকারীর দাবি, কোনো প্রমাণ ছাড়াই তাঁকে হেনস্তা করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমি নিরপরাধ, শুধুমাত্র টাকা না দেওয়ার কারণেই আমার রিসোর্টকে টার্গেট করা হচ্ছে। পুলিশের কাছে একাধিকবার জানিয়েছি, এমনকি জেলা প্রশাসনকেও অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।”

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযোগকারী আদালতে জমা দিয়েছেন ফ্রেজারগঞ্জ থানার ওসির সঙ্গে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের স্ক্রিনশট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। মামলাটি গ্রহণ করে কলকাতা হাইকোর্ট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং স্পষ্ট জানিয়েছে, ৮ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এই নির্দেশের পর পুলিশ মহলে ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য।

এই অভিযোগকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “মৌসুনী আমাদের গর্ব। এখানে পর্যটনের উন্নয়ন ঘটছে বলে আমরা খুশি ছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি, প্রশাসনই যদি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তোলে, তাহলে কীভাবে আমাদের এলাকা এগোবে?” পর্যটকরাও ঘটনার নিন্দা করেছেন। কলকাতা থেকে ঘুরতে আসা এক দম্পতি জানিয়েছেন, “এখানে ঘুরতে এসে এমন খবর শুনে ভয় লাগছে। নিরাপত্তার বিষয়টা ভাবতে হচ্ছে।”

এদিকে পুলিশ প্রশাসন পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে একটি সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, তদন্ত রিপোর্টের আগেই ওসিকে প্রশাসনিকভাবে সরে যেতে বলা হতে পারে, যাতে তদন্ত প্রভাবিত না হয়।

তবে এটি প্রথম নয়, সম্প্রতি বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উপর পুলিশের তোলাবাজির ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়েছিল। সেই ভিডিও নিয়ে শহর জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল, যার জেরে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এই ঘটনা রাজ্য পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যের পর্যটন শিল্পের বিকাশের অন্যতম প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে প্রশাসনিক দুর্নীতি। যদি ব্যবসায়ীরা নিরাপদ না বোধ করেন, তাহলে পর্যটন বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবেন তাঁরা। এই ধরনের ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি না হলে প্রশাসনের ওপর মানুষের ভরসা তলানিতে পৌঁছবে।

শেষমেশ, মৌসুনীর মতো একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রের ভাবমূর্তি এই ঘটনায় মার খেতে বসেছে। স্থানীয়রা চাইছেন, দ্রুত তদন্ত হোক এবং সত্য উদঘাটিত হোক। পর্যটনের স্বার্থেই এই ঘটনা যেন নিছক একটি মামলা হয়ে না থাকে, বরং দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রশাসনের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা পাক – সেটাই এখন সময়ের দাবি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments