Friday, May 23, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসপেন্টাগনের উড়োজাহাজ গ্রহণ, ট্রাম্পের ব্যবহারের প্রস্তুতি

পেন্টাগনের উড়োজাহাজ গ্রহণ, ট্রাম্পের ব্যবহারের প্রস্তুতি

Pentagon receives aircraft, prepares for Trump’s use : যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর তথা পেন্টাগন সম্প্রতি কাতার থেকে একটি বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজ গ্রহণ করেছে, আর এই ঘটনাকে ঘিরেই নতুন করে শোরগোল পড়ে গেছে আমেরিকার রাজনৈতিক মহলে। কারণ, এই উড়োজাহাজটি সংস্কার ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সজ্জিত করে ভবিষ্যতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যবহার করবেন—এমনটাই জানিয়েছেন পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল। বুধবার এক সরকারি বিবৃতিতে তিনি জানান, “সব সরকারি নিয়ম অনুসরণ করেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই উড়োজাহাজটি গ্রহণ করেছেন এবং এটি এখন প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের যাতায়াতের জন্য প্রস্তুত করা হবে।” যদিও বক্তব্যটি যথেষ্ট দৃঢ় ও নীতিগত বলে মনে হলেও, এই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে বর্তমানে গভীর রাজনৈতিক ও আইনগত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, কারণ একাধিক সূত্র বলছে, এই উড়োজাহাজ হস্তান্তরের চূড়ান্ত চুক্তি এখনো সম্পন্ন হয়নি, এবং কাতার এই বিমানের মালিকানা এখনও পুরোপুরি হস্তান্তর করেনি। অন্যদিকে, ট্রাম্প নিজেই তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এই উড়োজাহাজকে “উপহার” বলে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সিএনএনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য—তাদের দাবি, মূলত ট্রাম্প প্রশাসনই প্রথমে কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল উড়োজাহাজ সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে।

এই বিষয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “এটি দুই দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে একটি স্বচ্ছ ও আইনি লেনদেন। কোনও গোপন চুক্তি নয়।” তবে এই কথাতেও বিতর্কের মীমাংসা হয়নি, কারণ অনেকে মনে করছেন, সরকারি তহবিল ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সম্পদ একটি সাবেক প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য খরচ করা হলে তা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানসম্মত হয়—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আইনপ্রণেতারা। শুধু ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারাই নন, এমনকি কিছু রিপাবলিকান নেতাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

c188fc03

বিশেষ করে যখন বোয়িং ৭৪৭-এর মতো একটি বিশাল উড়োজাহাজের নিরাপত্তা এবং আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের কাজ শেষ করতে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে বলে জানা যাচ্ছে, এবং সেই কাজের ব্যয় প্রকৃত মূল্যের থেকে বহুগুণ বেশি হয়ে যেতে পারে। পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “এই প্রক্রিয়ার মধ্যে অনেক লুকানো খরচ আছে, এবং যদি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে, তবে বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর।” বর্তমানে ট্রাম্প কোনো সরকারি পদে নেই, তবুও প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের বিমান ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, আগামী নির্বাচনের আগে এই উড়োজাহাজ ব্যবহার করে ট্রাম্প তার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি আরও জোরদার করতে চাইছেন। আবার অনেকে মনে করছেন, এই বিমানের কৌশলগত ব্যবহার ভবিষ্যতে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। উল্লেখ্য, এয়ার ফোর্স ওয়ান হচ্ছে প্রেসিডেন্টদের প্রধান বাহন, যেটি অত্যাধুনিক সুরক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় সজ্জিত। এই অবস্থায়, তার বিকল্প হিসেবে ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে সেনেট ও কংগ্রেসে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলিও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে শুরু করে আল জাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ান পর্যন্ত এই খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশন করেছে। কারণ, এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি উড়োজাহাজ হস্তান্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। এর মাধ্যমে একটি বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে—একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ঠিক কতটা ক্ষমতা রাখতে পারেন, এবং সেই ক্ষমতা প্রয়োগের সীমারেখা ঠিক কোথায়? সামাজিক মাধ্যমেও এই ইস্যুতে আলোচনা থামছে না। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, “যে দেশে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বা শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বাজেট নেই, সেখানে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের জন্য বিলাসবহুল উড়োজাহাজ কেন?” কেউ কেউ আবার মজার ছলে বলেছেন, “এয়ার ফোর্স ওয়ান না থাকলেও, ট্রাম্প এখন এয়ার ফোর্স টু-এর মালিক!” পেন্টাগন এবং হোয়াইট হাউস এখন এই বিতর্ককে ঠান্ডা রাখতে কৌশলী অবস্থান নিচ্ছে। তবে রাজনীতির এই উত্তাপের মধ্যে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে—এই বিমানের ব্যবহার আদৌ জনস্বার্থে, নাকি ব্যক্তিগত স্বার্থে? ভবিষ্যতে এই বিষয়ে কংগ্রেসে শুনানি হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে

। এদিকে, আন্তর্জাতিক মহলেও কৌতূহলের অন্ত নেই। অনেক দেশই এই ঘটনাকে আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বলতা হিসেবে দেখছে। আর এই বিতর্ক যত গাঢ় হচ্ছে, ততই সামনে আসছে ট্রাম্পের রাজনৈতিক পরিকল্পনার ধাঁধাঁ। তিনি কি আবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চলেছেন? এই উড়োজাহাজ কি তার সেই অভিযানের প্রতীক হয়ে উঠবে? সব মিলিয়ে এই একটি উড়োজাহাজের গল্প যেন ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে আমেরিকার ভবিষ্যৎ রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ উপাখ্যানে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments