Friday, May 23, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্য তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে মাঠ দখলের অভিযোগ

 তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে মাঠ দখলের অভিযোগ

Trinamool Panchayat chief accused of occupying land:দেগঙ্গা থানার আমুলিয়া পঞ্চায়েতের ঝিকুড়িয়া দাসপাড়া এখন আর শুধু একটা গ্রামের নাম নয়, আজ তা হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রস্থল। একটি সাধারণ খেলার মাঠ, যেখানে বছরের পর বছর ধরে পাড়ার ছেলেরা ফুটবল খেলত, হঠাৎ করেই সেই মাঠ দখল নিয়ে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ—যেখানে একদিকে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান এমদাদুল হকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, অন্যদিকে গ্রামবাসীদের সরব প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনীতিতেও। অভিযোগ, মাঠটির মালিকানা দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল হক, যিনি দাবি করেছেন তিনি এই জমি কিনেছেন এবং সেখানে চাষ করতে চান। এই প্রেক্ষিতেই গত কয়েকদিন আগে হঠাৎ পঞ্চায়েত প্রধান এমদাদুল হক নিজে উপস্থিত থেকে মাঠে ট্রাক্টর নামিয়ে জমি চষে দেন, এমনকি ছেলেদের খেলার গোলপোস্টও তুলে নিয়ে যান—আর এতেই চরম ক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা গ্রাম। স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল মোল্লা বলছেন, “এই মাঠটা আমরা ছোট থেকে দেখে আসছি, পাড়ার সব ছেলে এখানে খেলাধুলা করত। হঠাৎ করে ট্রাক্টর ঢুকে মাঠ চষে দিল, আর কেউ কিছু বলার সুযোগই পেল না।” একজন বৃদ্ধ বাসিন্দা আফজাল আলি জানান, “খেলাধুলার জায়গা না থাকলে আজকের ছেলেরা কোথায় যাবে? এই মাঠ তো আমাদের ছেলেদের ভবিষ্যতের মতোই ছিল।” বৃহস্পতিবার সেই মাঠেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গ্রামবাসীরা। তৃণমূলের দলীয় পতাকা গেড়ে তারা মাঠ পুনরুদ্ধারের প্রতীকী ঘোষণা করে। ‘মাঠ আমাদের, মাঠেই ফিরব’—এই স্লোগানে মুখর হয় গোটা এলাকা।

তবে পঞ্চায়েত প্রধান এমদাদুল হক সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “আমি ওই সময় ঘটনাস্থলে ছিলাম না। কে ট্রাক্টর ঢুকিয়েছে আমি জানি না। জমির কাগজ যার, জমিও তার। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। যদিও তাঁর অনুপস্থিতির দাবি অনেকেই মানতে নারাজ। অনেকে বলছেন, ঘটনাস্থলে স্থানীয় অনেকেই তাঁকে উপস্থিত দেখেছেন। এই ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক সমীকরণ জড়িত কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ যাঁর নামে জমির মালিকানা দাবি করা হচ্ছে, সেই রবিউল হক নিজেও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী বলেই স্থানীয়রা জানিয়েছেন। রবিউল হকের বক্তব্য, “আমি আইন মেনে জমি কিনেছি। সেখানে চাষ করবো বলেই ট্রাক্টর নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু গ্রামবাসী বাধা দেয়। আমি কোনও ঝামেলা চাই না, তাই পুলিশকে জানিয়ে রেখেছি।” তবে ঘটনার মোড় ঘোরাতে শুরু করে যখন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি গ্রামবাসীদের পাশে এসে দাঁড়ান। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, “যে জমি নিয়ে বিতর্ক চলছে সেটা একটা খেলার মাঠ। পঞ্চায়েত প্রধানের হয়তো যাওয়া উচিত হয়নি। আমি গ্রামবাসীদের পাশে আছি।” এই বক্তব্য তৃণমূলের অন্দরেই মতবিরোধ স্পষ্ট করছে বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ, যেখানে দলের একজন নির্বাচিত প্রধান মাঠ দখলের অভিযুক্ত, সেখানে দলেরই অঞ্চল সভাপতি তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন—এটা দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই ইঙ্গিত করছে।

Screenshot 2025 05 23 141214

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরিন্দম চক্রবর্তী বলছেন, “এখানে শুধুমাত্র জমির বিষয় নয়, এটা স্থানীয় স্তরের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনের উদাহরণ। মাঠ দখলের মতো ঘটনা অপ্রত্যাশিত নয়, কিন্তু পঞ্চায়েত প্রধান নিজে উপস্থিত থাকাটা ইঙ্গিতবহ।” এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। সাধারণ মানুষ যেখানে পঞ্চায়েত নেতার কাছে উন্নয়ন আশা করে, সেখানে যদি তাঁদের প্রিয় খেলার মাঠেই তালা ঝোলে, তাহলে আস্থা আর থাকে কোথায়? স্কুল-কলেজের ছাত্রদের কথায়ও ক্ষোভ স্পষ্ট। দশম শ্রেণির ছাত্র রাহুল জানায়, “আমরা প্রতিদিন বিকেলে এই মাঠে খেলতে যেতাম। এখন মাঠ নেই, মনও নেই। শুধু পড়াশোনায় কি চলে?” আরেক অভিভাবক বলেন, “সন্তানদের খেলাধুলার জায়গা নেই, মুঠোফোনে আসক্তি বাড়বে—আমরাই তো সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হব।” প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত সরাসরি কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, তবে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে সূত্রের খবর। এই মুহূর্তে এলাকায় অস্থায়ীভাবে উত্তেজনা থাকলেও, পরিস্থিতি যাতে আরও না বাড়ে তার জন্য নজর রাখছে দেগঙ্গা থানার পুলিশ। তবে পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান তখনই সম্ভব যখন জমির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্যপত্র প্রকাশ্যে আসবে এবং গ্রামবাসীদের দাবি মিটবে। রাজনৈতিকভাবে এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে ইতিমধ্যেই বিরোধীরা শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments