Amir Hamza, co-founder of Lashkar-e-Taiba and close aide of Hafiz Saeed, shot dead:-সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানে ফের একবার রক্তাক্ত ঘটনা। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হলেন লস্কর-ই-তাইবা’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান হাফিজ সাইদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আমির হামজা। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের লাহোরে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা গুলি চালায় আমির হামজার উপরে। বর্তমানে তিনি লাহোরের এক বিশেষাধিকারপ্রাপ্ত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনার জেরে পাকিস্তানে জঙ্গি মহল এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও হামলাকারীদের পরিচয় এখনও অজানা, তবে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এটি হয়তো আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিংবা আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার টার্গেটেড অপারেশন হতে পারে।আমির হামজা কোনো সাধারণ নাম নয়। তিনি একাধারে আফগান মুজাহিদিনের প্রাক্তন সদস্য, আবার লস্করের আদর্শবাদী ‘ব্রেইন’ হিসেবে বিবেচিত। তাঁর সঙ্গে হাফিজ সাইদ এবং আব্দুল রেহমান মাক্কির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বহু পুরোনো। এই দুই সন্ত্রাসবাদীকেই জাতিসংঘ ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী ‘ডিজিগনেটেড টেরোরিস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফলে হামজার উপর এই প্রাণঘাতী হামলা শুধু পাকিস্তান নয়, গোটা উপমহাদেশের নিরাপত্তা পরিকাঠামোর দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

ঘটনার পর পাকিস্তান প্রশাসনের তরফে তড়িঘড়ি করে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। তদন্তে নেমেছে ISI, পাঞ্জাব পুলিশ ও মিলিটারি ইনটেলিজেন্স। এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে কেউ দায় স্বীকার করেনি। কিন্তু একাধিক সূত্রের দাবি, এই হামলা হতে পারে ভিতরের কোন্দলের ফল। কারণ সাম্প্রতিক কালে লস্কর-ই-তাইবার অভ্যন্তরে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রবল আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।এক প্রাক্তন RAW কর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমির হামজা এমন একজন মুখ, যিনি শুধুমাত্র অপারেশন প্ল্যানার নন, বরং তিনি জিহাদি মতাদর্শ প্রচারে অত্যন্ত সক্রিয়। তাঁর চুপ থাকা বা নিস্ক্রিয় হওয়া লস্করের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। এবং এটা আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানকে আরও চাপে ফেলবে।”উল্লেখ্য, আমির হামজা একাধিক জিহাদি গ্রন্থের রচয়িতা এবং ইসলামাবাদ থেকে প্রকাশিত বহু উগ্রবাদী ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন। তাঁর লেখা থেকে বহু তরুণ বিপথে চালিত হয়েছে বলেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ। লস্কর ই তাইবা, যাকে আন্তর্জাতিকভাবে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তার দিকনির্দেশক হিসেবে হামজার গুরুত্ব অপরিসীম।
এই গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নতুন করে চাপে পড়েছে পাকিস্তান প্রশাসন। কারণ এটা স্পষ্ট, পাকিস্তান নিজেই এখন জঙ্গি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছে। বারবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তারা দাবি করেছে, দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা হচ্ছে, অথচ বাস্তবে দেশের মাটিতে বসেই হাফিজ সাইদ, মাক্কি, হামজা—এরা একের পর এক উস্কানিমূলক বক্তব্য, ক্যাম্প, ট্রেনিং ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।লাহোরের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক আহসান নওয়াজ বলেন, “এই ঘটনাটি শুধু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, এটা পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বড় প্রশ্ন। একজন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত সন্ত্রাসবাদী যদি লাহোরের মতো শহরে হামলার শিকার হন, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”এদিকে ভারতের রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা মহলেও এই ঘটনায় তৎপরতা বেড়েছে। ভারতের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন জানিয়েছেন, “এটা বোঝাই যাচ্ছে পাকিস্তানে জঙ্গিদের মধ্যেও বিশাল বিভাজন তৈরি হয়েছে। ভারত এই মুহূর্তে কেবল পর্যবেক্ষণ করছে, তবে কোনো সুযোগ এলে আমাদের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে তা কাজে লাগানো হবে।”

জঙ্গি হামজার এই আঘাতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে লস্করের আইডিওলজিক্যাল মডেল। কারণ হামজা ছিলেন সেই রূপকার, যিনি জিহাদকে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে ব্যাখ্যা করে তরুণদের প্রভাবিত করতেন। তাঁর লেখার মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল এক বিকৃত বিশ্বাসভিত্তিক সমর্থক গোষ্ঠী।পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত হামলার বিষয়ে কোনও আন্তর্জাতিক তদন্ত চায়নি। বরং বরাবরের মতোই “ভিতরের কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা” বা “ব্যক্তিগত হামলার চক্রান্ত” বলে দায় সেরে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে এভাবে তাদের ব্যাখ্যা এখন আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না।এই মুহূর্তে যেটা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই হামলার পেছনে কারা? ভারত? আফগান প্রতিরোধ গোষ্ঠী? আমেরিকার সহায়তায় চালানো গোপন অপারেশন? নাকি লস্করের ভেতরের বিদ্রোহ? এর উত্তর জানা না গেলেও এটা স্পষ্ট, পাকিস্তানের মাটিতে এবার জঙ্গিরাও আর নিরাপদ নয়।শেষমেশ বলা যায়, আমির হামজার উপর এই হামলা কেবল একটি ব্যক্তি আক্রমণ নয়, এটা সন্ত্রাসবাদের ভবিষ্যৎ, পাকিস্তানের জঙ্গি নীতি এবং উপমহাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির এক অশনি সংকেত। এই ঘটনার পর ভারতের তরফে লস্করের বাকি নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপ আরও বাড়ানো হতে পারে। এবং এটাই হয়তো শুরু এক নতুন অধ্যায়ের—যেখানে জঙ্গিদের জন্য আর কোনও ‘সেইফ হ্যাভেন’ থাকবে না।