Several mysterious drones in the skies of Kolkata : কলকাতার আকাশে হঠাৎ করে দেখা মিলল বেশ কয়েকটি রহস্যময় ড্রোনের। আর তাতেই নড়েচড়ে বসেছে গোটা প্রশাসন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা নামতেই একের পর এক ড্রোন উড়ে যেতে দেখা যায় মহেশতলা, বেহালা, আলিপুর থেকে হেস্টিংস, ব্রিগেড, ফোর্ট উইলিয়াম, এমনকি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো স্পর্শকাতর এলাকার উপর দিয়ে। প্রায় সাতটি ড্রোন একসঙ্গে বা ঘন ঘন ভেসে উঠছিল কলকাতার আকাশে। আর তাতেই তৈরি হয়েছে এক প্রবল আতঙ্ক ও কৌতূহলের আবহ। এমনিতেই দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক উত্তপ্ত, আর তার মধ্যেই এমন ঘটনার খবর প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ, যখন মহেশতলা ও বেহালার দিক থেকে একাধিক ড্রোন উড়ে আসতে দেখা যায়। প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে যান, কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও করতে শুরু করেন। তবে এরপরই ড্রোনের উপস্থিতি নজরে আসে কলকাতা পুলিশের। হেস্টিংস থানার এক আধিকারিক জানান, “আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম এটি হয়তো কোনও ব্যক্তিগত ড্রোন। কিন্তু যত সময় গড়াতে লাগল, দেখা গেল সংখ্যায় অনেক এবং তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই শহরের স্পর্শকাতর এলাকার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে।”
তৎক্ষণাৎ লালবাজার কন্ট্রোল রুমে খবর পাঠানো হয়। কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, “ঘটনার গুরুত্ব বুঝেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ফোর্ট উইলিয়াম ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আশপাশের সমস্ত থানাকে সতর্ক করে দিই। কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। আমরা চেকপয়েন্ট বাড়াই, এবং নজরদারি শুরু করি সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে।”ঘটনার গুরুত্ব এতটাই ছিল যে, রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তরও তড়িঘড়ি নড়েচড়ে বসে। খবর দেওয়া হয় জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাকেও। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক আধিকারিক জানান, “ড্রোন প্রযুক্তি এখন সহজলভ্য হলেও, এর অপব্যবহার মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে যদি কোনও বিদেশি সংস্থা বা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী এর পেছনে থাকে।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ফোর্ট উইলিয়াম ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দপ্তর। এর উপর দিয়ে অনুমতি ছাড়া কোনও কিছু উড়ে যাওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। আবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড, যেখানে একাধিক রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং হয়, সেটিও একটি স্পর্শকাতর জায়গা। এই এলাকাগুলির উপর দিয়ে ড্রোন ওড়ার অর্থ একদিকে গোয়েন্দাগিরি, অন্যদিকে ভবিষ্যতের জন্য গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।মহেশতলার এক বাসিন্দা, সঞ্জয় দত্ত জানান, “প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ হয়তো বিয়ে বাড়ি থেকে ড্রোন ওড়াচ্ছে। কিন্তু পরে দেখি ওটা শুধু ছবি তোলার জন্য নয়, অনেকটা বড় ড্রোন। একইসঙ্গে অনেকগুলো ছিল। তখনই সন্দেহ হয়।” আর এক যুবক বলেন, “আমরা এমনিতেই যুদ্ধের খবর, ইজরায়েল-ইরান, ভারত-পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় থাকি। এবার নিজের শহরেই যদি এমন ড্রোন ঘোরে, তবে তো চিন্তার বিষয়।”
এদিকে কলকাতা পুলিশের প্রযুক্তি শাখা ড্রোনগুলির উৎস জানার জন্য টেকনিক্যাল ট্রেসিং শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত কোন সংস্থা এই ড্রোন চালিয়েছে বা তার রেজিস্ট্রেশন আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ড্রোনের গতি, উচ্চতা, রঙ ও কাঠামো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শহরের বেশ কিছু এলাকায় ড্রোন নিষিদ্ধ করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কর্নেল (অব.) সঞ্জীব সেন বলেন, “এটা নিছক কোনও ফ্যান্সির কাজ নয়। এটা একটা স্ট্র্যাটেজিক পর্যবেক্ষণ হতে পারে। আজ যে শুধু পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, কাল হয়তো অস্ত্র বহন করা হতে পারে। ভারতকে এখনই কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে।”
অন্যদিকে রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা তরুণ গুপ্ত জানান, “এই ধরনের যান্ত্রিক ডিভাইসের ব্যবহার ভবিষ্যতে চরম বিপদের কারণ হতে পারে। আমরা এর পেছনে কারা রয়েছে, তা খুঁজে বার করতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছি। সাধারণ মানুষকে বলছি, এমন কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় খবর দিন।”এখন প্রশ্ন উঠছে, এমন ড্রোন প্রযুক্তি কি এতটাই সহজলভ্য হয়ে গেছে যে যে কেউ চাইলেই সেনা ঘাঁটির উপরে ওড়াতে পারছে? নাকি এর পেছনে কোনও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত? বিশেষ করে যখন ভারতীয় সেনা কাশ্মীর থেকে উত্তর-পূর্ব সীমান্তে একাধিক অপারেশনে ব্যস্ত, তখন পূর্ব ভারতের মহাকাশে এমন প্রবেশ স্বাভাবিকভাবেই ভাবনার বিষয়।
কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ড্রোনগুলির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। সমস্ত এয়ার ট্রাফিক ও সিগন্যাল ট্রেসিং ইউনিটকে সক্রিয় করা হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সহযোগিতায় এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে লালবাজার।এই ঘটনার জেরে শহরের সাধারণ মানুষও বেশ চিন্তিত। কেউ কেউ বলছেন, “এমন ড্রোন যদি বিস্ফোরক বা ক্যামেরা নিয়ে আসে, তাহলে তো বিপদ ঘনিয়ে আসবে। এখন তো কেউ নিজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটু আকাশ দেখার সাহস পাচ্ছে না।” আবার কেউ কেউ বলছেন, “এগুলো হয়তো কাউকে নজরে রাখার চক্রান্ত, বড় কোনও ঘটনা ঘটানোর আগে প্রস্তুতি।”এই রহস্যময় ড্রোন কাণ্ড নিয়ে এখন শুধু কলকাতা নয়, গোটা রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন একটাই—এই ড্রোন কি নিছক কৌতূহলের ফসল, না কি কোনও গভীর ষড়যন্ত্রের অঙ্গ? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা, তবে প্রশাসন নিশ্চিত করেছে—এই ঘটনাকে হালকা ভাবে নেওয়ার সময় নেই। প্রতিটি তথ্য, প্রতিটি ফুটেজ, প্রতিটি প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য এখন তদন্তের অন্তর্ভুক্ত।