NASA explains why the two sides of the moon are different:চাঁদ, এই রহস্যময় জ্যোতিষ্কটি আমাদের কল্পনাকে বহু শতাব্দী ধরে আলোড়িত করে এসেছে। পূর্ণিমার রাতে যার উজ্জ্বল জ্যোৎস্না পৃথিবীর অন্ধকারকে আলোকিত করে, সেই চাঁদেরই এক অদ্ভুত রহস্য বিজ্ঞানীদের decades ধরে ভাবিয়ে তুলেছিল—চাঁদের দুই পিঠের চেহারায় এত পার্থক্য কেন? পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের একটাই পিঠ দেখি, আর সেই পিঠ দেখতে যতটা মসৃণ, অন্য পিঠটা ঠিক ততটাই খসখসে আর গহ্বরপূর্ণ। এতদিনেও এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর মেলেনি। কিন্তু এবার NASA-র বিজ্ঞানীরা সেই বহু পুরনো প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেয়েছেন বলেই দাবি করেছেন, আর সেই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার’-এ। কী সেই উত্তর? কীভাবে জানা গেল এই সত্য? চলুন, গল্পের মতো করে বুঝে নেওয়া যাক চাঁদের দুই পিঠের পার্থক্যের পেছনের ইতিহাস।NASA-র ২০১১ সালের GRAIL (Gravity Recovery and Interior Laboratory) মিশনে পাঠানো হয়েছিল দুইটি রোবটিক স্পেসক্র্যাফট, যাদের নাম দেওয়া হয়েছিল “এব” ও “ফ্লো”। এই দুই স্পেসক্র্যাফট চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে ঘুরে তৈরি করে সবচেয়ে নিখুঁত অভিকর্ষ মানচিত্র। এই মানচিত্র বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, চাঁদের দুই পিঠের ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে বিস্ময়কর বৈপরীত্য রয়েছে।
এই বিশ্লেষণেই খুঁজে পাওয়া যায় বহু বছর আগের এক দুরন্ত ঘটনার ইঙ্গিত—৪৩০ কোটি বছর আগে এক বিশাল গ্রহাণুর ধাক্কা লেগেছিল চাঁদের ওপর, বিশেষ করে চাঁদের পিছনের দিকে। সেই গ্রহাণুর আঘাত এতটাই ভয়াবহ ছিল যে তা চাঁদের অভ্যন্তরীণ গঠনে চিরস্থায়ী পরিবর্তন এনে দেয়। এই মহাজাগতিক বিস্ফোরণের ফলে চাঁদের পিছনের পিঠে সৃষ্টি হয় অগণিত গহ্বর আর অসমান পৃষ্ঠভাগ। আর এই ধাক্কার প্রতিক্রিয়াতেই পৃথিবীমুখী পিঠে শুরু হয় লাভা উদগিরণ, সৃষ্টি হয় ব্যাসাল্টিক শিলার বিশাল সমভূমি।NASA-র চন্দ্রবিজ্ঞানী Dr. Matt Jones বলেন, “এই গবেষণা আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছে, চাঁদের দুই পিঠে শুধু বাহ্যিক নয়, গভীর অভ্যন্তরীণ গঠনেও তীব্র বৈপরীত্য রয়েছে।” তিনি আরও জানান, পৃথিবীর অভিকর্ষের প্রভাবে পৃথিবীমুখী পিঠে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকায়, এই পিঠে আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপ বেশি সক্রিয় ছিল, যেটা ব্যাসাল্টিক ম্যারিয়া অঞ্চলের সৃষ্টি করেছে।

অপরদিকে, চাঁদের যে পিঠটি পৃথিবী থেকে অদৃশ্য, সেখানে ঠান্ডা পরিবেশ ও অভিকর্ষের প্রভাবের অভাবে লাভা বেরোয়নি, বরং বিশাল বিশাল গহ্বর তৈরি হয়েছে। এর ফলে একদিকে রয়েছে মসৃণ, কৃষ্ণবর্ণ পাথরের বিস্তীর্ণ সমভূমি—Moon Maria, অন্যদিকে রয়েছে উঁচু-নিচু, crater-এ ভর্তি rugged landscape।এই আবিষ্কার ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশ হতে পারে। বিশেষ করে যারা চাঁদে বেস তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য জানা জরুরি কোন পৃষ্ঠে কী ধরনের ভূতাত্ত্বিক অবস্থা রয়েছে। চাঁদের বিপরীত পিঠ, যাকে “far side of the moon” বলা হয়, সেখানে স্থাপন করা যেতে পারে রেডিও টেলিস্কোপ, কারণ সেখানে পৃথিবীর রেডিও তরঙ্গ পৌঁছায় না। আবার “near side” বা পৃথিবীমুখী পিঠে থাকতে পারে ভবিষ্যতের চাঁদবসতির প্রধান কেন্দ্র।