Chief Minister arrives on three-day visit to North Bengal : তিনদিনের গুরুত্বপূর্ণ সফরে সোমবার উত্তরবঙ্গে এসে পৌঁছালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল থেকেই শিলিগুড়ির রাজনীতির আবহে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে, কারণ মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর শুধু প্রশাসনিক বৈঠক বা সরকারি অনুদান বিতরণেই সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি, উন্নয়নের খতিয়ান এবং উত্তরবঙ্গের প্রতি তাঁর সরকার কতটা মনোযোগী—তা দেখানোর কৌশলও। সফরের প্রথম দিনে তিনি উপস্থিত থাকেন শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে আয়োজিত একটি বড় শিল্প সম্মেলনে, যেখানে উত্তরবঙ্গের ছোট-বড় শিল্পপতিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। রাজ্যের শিল্প দফতরের তরফে আয়োজিত এই সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং বলেন, “উত্তরবঙ্গকে আর শুধু পর্যটন দিয়ে চেনা যাবে না, এখন শিল্প ও পরিকাঠামোর জোরও এই অঞ্চলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।” এই সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের তত্ত্বাবধানে একটি নতুন শিল্পতালুক গড়ে তোলা হবে, যেখানে স্থানীয় যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের একাংশ যেমন অরিন্দম সেনগুপ্ত বলেন, “এই ধরনের শিল্প সম্মেলন আমাদের কথা সরাসরি সরকারকে বলার সুযোগ দেয়, এতে আমরাও নতুন উদ্যম পাই।” সফরের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী যান ফুলবাড়ি অঞ্চলে, যেখানে বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তাদের হাতে সরকারি অনুদান, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, কন্যাশ্রী ও লক্ষ্মীর ভান্ডারের নতুন কার্ড
তুলে দেন তিনি। জনসংযোগমূলক এই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, “আমরা উন্নয়নের সরকার। উত্তরবঙ্গ আমাদের হৃদয়ে রয়েছে। তাই কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, স্বাস্থ্যসাথী—সব প্রকল্পই এখানে আরও জোরদারভাবে চালানো হবে।” ফুলবাড়ির মাঠ ছিল কানায় কানায় ভরতি। মালতী দাস নামে এক উপভোক্তা জানান, “আমি একটা সেলাই মেশিন পেয়েছি সরকারি অনুদানে। আমার মতো অনেক মহিলাই উপকৃত হচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে একবার সামনে থেকে দেখে আশীর্বাদ নিলাম।” সফরের তৃতীয় দিনে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে উত্তরবঙ্গের সাতটি জেলার জেলাশাসক
, পুলিশ সুপার, ও উন্নয়ন আধিকারিকদের নিয়ে উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান নেওয়া হয়। পাশাপাশি নতুন প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়, যেমন চা বাগান শ্রমিকদের জন্য আরও স্বাস্থ্য পরিষেবা, পাহাড়ি জেলাগুলিতে পর্যটন হাব গড়ে তোলা, ও নতুন রাস্তা নির্মাণ। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, “উত্তরকন্যা শুধু একটি প্রশাসনিক ভবন নয়, এটি উত্তরবঙ্গবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্র।” পাহাড় থেকে ডুয়ার্স, সব অঞ্চলেই যাতে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছয়, তার দিকে নজর রাখার নির্দেশও দেন তিনি। এই সফর ঘিরে প্রশাসনিক তৎপরতা তুঙ্গে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, ও নিরাপত্তা বাহিনী মুখ্যমন্ত্রীর যাতায়াত ও নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক স্তরে ব্যবস্থা নেয়। শিলিগুড়ির বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার, ব্যানার ও ফ্লেক্সে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের প্রচারও
দেখা যায়। তবে শুধু প্রশাসনিক দিক থেকে নয়, রাজনৈতিক ভাবেও এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একদিকে বিজেপি উত্তরবঙ্গে তাদের সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস চাইছে তাদের উন্নয়নের বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে অনেকেই রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন। শিলিগুড়ি পুরনিগমের চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “এই সফর প্রমাণ করে, দিদির সরকার উত্তরবঙ্গকে কতোটা গুরুত্ব দেয়। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এসে মানুষের সঙ্গে দেখা করছেন, প্রশাসনের কাজ পর্যালোচনা করছেন, এটি আগে কখনও দেখা যায়নি।”.
উত্তরবঙ্গের রাজনীতিবিদ, সাধারণ মানুষ, শিল্পপতি ও প্রশাসনিক মহলের সকলেই এই সফরের তাৎপর্যকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন। স্থানীয় মহলে এমনও চর্চা চলছে যে এই সফর থেকেই ২০২৬-র ভোটের প্রস্তুতির সূচনা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি রাজনীতি নিয়ে কিছু বলেননি, তবুও তার প্রতিটি বাক্যে ছিল জনসংযোগের ইঙ্গিত, জনতার আস্থা অর্জনের বার্তা। তিনদিনের সফর শেষে মুখ্যমন্ত্রী ফের কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তবে তার রেখে যাওয়া বার্তা স্পষ্ট—উত্তরবঙ্গকে আর পিছিয়ে রাখা যাবে না। উন্নয়নের অগ্রগতিতে এই অঞ্চল হবে রাজ্যের অন্যতম মুখ।