Kolkata Fire News: কলকাতা, শহরটা যাকে আমরা ভালোবেসে ডাকতাম “সিটি অফ জয়”, সেই আনন্দের শহরেই ফের একবার ছড়িয়ে পড়ল আতঙ্কের ধোঁয়া। শনিবার দুপুর গড়িয়ে ঠিক যখন কলকাতা ধীরে ধীরে উইকেন্ডের ছুটির মেজাজে ঢুকছিল, তখনই আচমকা গলগল করে ধোঁয়া বেরতে শুরু করল শহরের এক নামজাদা বহুতল থেকে। ঠিক শহরের বুকে মিন্টো পার্কের একেবারে সংলগ্ন একটি বাণিজ্যিক বহুতলের ছয়তলায় হঠাৎ করে আগুন লেগে যায়। কেউ ভাবতেও পারেনি দিনের আলোয় এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়বে শহর। বহুতলটি, যেখানে বহু নামী সংস্থার অফিস রয়েছে, সেখানেই একের পর এক অফিসঘর থেকে আতঙ্কে ছুটে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় কর্মীদের। আগুনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে বহুতলের বাইরের দেওয়াল ঘেঁষে থাকা তিনটি এসির আউটডোর ইউনিট একেবারে গলে যায়, কালি লেগে যায় দেওয়ালে, আর গোটা এলাকা ছেয়ে যায় ধোঁয়ার ঘন পরত। এমনকি আগুনের তাপে জানলা ভেঙে বেরিয়ে আসে কাচ। প্রাথমিকভাবে দমকল বিভাগের অনুমান, এসি মেশিনে শট সার্কিট হওয়ার কারণেই এই আগুন লেগেছে। তবে এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।
দমকলের তিনটি ইঞ্জিন সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আগুনের খবর ছড়াতেই এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন রীতিমতো ভয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেন। আশপাশের ট্র্যাফিকও প্রভাবিত হয়। এক প্রত্যক্ষদর্শী কর্মী জানান, “আমি অফিসে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ করে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে। প্রথমে ভেবেছিলাম ভুলবশত বাজছে, কিন্তু পরে দেখি ধোঁয়া আসছে। তখনই আমরা তড়িঘড়ি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাই। যারা ভেতরে ছিলেন, তাদের সবাইকে নিরাপদে বের করে আনা হয়েছে।”

অন্যদিকে, দমকল বিভাগের আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনটি ইঞ্জিন পাঠিয়েছিলাম। যেহেতু এটা একটা কমার্শিয়াল বিল্ডিং, তাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করি। আগুন এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু ভিতরে তাপ রয়েছে। এসির শট সার্কিট থেকেও আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এটা প্রথম নয়। কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় গত কিছুদিনে বারবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। নারকেলডাঙা, মেছুয়াবাজার, বড়বাজার— একের পর এক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু দোকান ও বাড়িঘর। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল মিন্টো পার্ক লাগোয়া বহুতল। এভাবে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চললে সাধারণ মানুষ যেমন আতঙ্কে থাকবেন, তেমনি প্রশ্ন উঠবে শহরের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।
এই বহুতলটি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকায় অবস্থিত। আশেপাশে রয়েছে স্কুল, হাসপাতাল, শপিং কমপ্লেক্স। তাই ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয় কাউন্সিলর সৌরভ দাস বলেন, “আমরা বারবার বহুতলে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা সচল রাখার আবেদন করেছি। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ফায়ার অ্যালার্ম কাজ করছে না, বা আগুন লাগলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার মতো পরিকাঠামো নেই। এই ঘটনার পর আমরা বিষয়টি নিয়ে পুরসভা এবং অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের সঙ্গে ফের আলোচনা করব।”
একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, ওই বহুতলে কি নিয়মিত ফায়ার অডিট হয়? অফিস চালাতে গেলে যে সমস্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক, সেগুলি আদৌ ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন, “সাধারণত এমন ঘটনায় আমাদের পুরসভার টিম তদন্তে যায়। যদি কোনও গাফিলতি ধরা পড়ে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব অফিস বিল্ডিংয়ে রেগুলার ফায়ার অডিট বাধ্যতামূলক। সেটা ঠিকভাবে করা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
এই ঘটনাটি আরও একবার প্রমাণ করল, শহরের বহু বহুতলেই অগ্নি নিরাপত্তার দিকটি এখনও অবহেলিত। এমনকী যেখানে বহু মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে, সেখানেও যদি এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।
তবে যা স্বস্তির, তা হল— এবার অন্তত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। দমকল কর্মীরা সময়মতো পৌঁছন এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। এই কারণে বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেল শহর। কিন্তু এই ঘটনা যেন ভবিষ্যতের জন্য একটি শিক্ষা হয়ে থাকে, যাতে আমরা সবাই সচেতন হই, সতর্ক হই, এবং জরুরি সময়ে যেন সময় নষ্ট না করি।
সবশেষে এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রশ্ন উঠে গেল, শহরের অভিজাত ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেও কি আমরা এখনও সম্পূর্ণ নিরাপদ?