Saturday, May 24, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যকেদারনাথে ভেঙে আছড়ে পড়ল এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স

কেদারনাথে ভেঙে আছড়ে পড়ল এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স

Air ambulance crashes in Kedarnath:-শনিবার সকালে কেদারনাথের পবিত্র প্রাঙ্গণ যেন এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। শান্ত পাহাড় ঘেরা এই তীর্থস্থানের আকাশ চিরে হঠাৎই একটা বিকট শব্দ, আর তারপরেই ধোঁয়া উঠতে দেখা যায় পাহাড়ের এক কোণ থেকে। জানা যায়, একটি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স বা হেলিকপ্টার কেদারনাথ হেলিপ্যাডে নামার ঠিক আগেই ভেঙে পড়ে। স্থানীয় সূত্রের খবর, হেলিপ্যাডের মাত্র ২০ মিটার দূরেই আছড়ে পড়ে হেলিকপ্টারটি। এই হেলিকপ্টারটি সেই সময় একজন গুরুতর অসুস্থ রোগীকে নিতে কেদারনাথে আসছিল, যাতে তাঁকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া যায়। কপ্টারটি AIIMS ঋষিকেশ (AIIMS Rishikesh) থেকে পাঠানো হয়েছিল। হেলিকপ্টারে উপস্থিত ছিলেন দুই অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও একজন দক্ষ পাইলট। ভাগ্যক্রমে, তিনজনই অলৌকিকভাবে বেঁচে যান এবং গুরুতর কোনও আঘাত পাননি। তবে ঘটনাটি ঘটার পরে চরম চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।এই দুর্ঘটনার পরেই সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকারী দল এবং নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কেদারনাথ পুলিশ ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (SDRF) তরফ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে AIIMS ঋষিকেশে পাঠানো হয় আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটে আবহাওয়ার হঠাৎ খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে। কপ্টারটি নেমে আসার সময় প্রবল হাওয়া এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের কারণে পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, ফলে সেটি হেলিপ্যাডের বাইরে পড়ে যায়। তবে পাইলটের তৎপরতায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

80 116 1

এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন উত্তরাখণ্ড সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। তিনি বলেন, “ঈশ্বরের কৃপায় আজ একটি বড় দুর্ঘটনা থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। কেদারনাথে অনেক তীর্থযাত্রী আসেন। তাই সবরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কড়া করা হবে। হেলিপ্যাড ও ফ্লাইট সেফটি নিয়মাবলী খতিয়ে দেখা হবে।” AIIMS ঋষিকেশের ডিরেক্টরও এক বিবৃতিতে জানান, “এই ঘটনা আমাদের জন্য এক সতর্কবার্তা। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, পাহাড়ি এলাকায় এই ধরনের পরিষেবা চালাতে হলে আরও সতর্কতা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রয়োজন।”কেদারনাথ বর্তমানে চারধাম যাত্রার (Char Dham Yatra 2025) মরসুমে ভরপুর। হাজার হাজার তীর্থযাত্রী প্রতিদিন এই পবিত্র তীর্থে যাচ্ছেন। সেই অবস্থায় এমন দুর্ঘটনা একদিকে প্রশাসনের গাফিলতির ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে যাত্রীদের মধ্যেও। ইতিমধ্যে অনেক পর্যটক এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন, যার জেরে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। কিছুজন প্রশ্ন তুলেছেন হেলিকপ্টার পরিষেবার মান নিয়ে। কেদারনাথে প্রতিদিন অসংখ্য হেলিকপ্টার ওঠানামা করে, অনেক ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত গাইডলাইন না মানা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, কেদারনাথ হেলিপ্যাডটি উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন নিত্য ঘটনা। এর আগে ২০১৯ সালেও একটি বেসরকারি হেলিকপ্টার সামান্য ত্রুটির কারণে হেলিপ্যাডে অবতরণের সময় সমস্যায় পড়েছিল, তবে তা দুর্ঘটনায় রূপ নেয়নি। এবার এই ঘটনা ফের একবার প্রশ্ন তুলে দিল পাহাড়ি অঞ্চলে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে।এদিকে ঘটনার পরে কেদারনাথের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পুরোহিত সমাজের অনেকে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পুরোহিত সত্যনারায়ণ ভট্ট বলেন, “দেবভূমিতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসছেন। ওষুধ, চিকিৎসা, বিপর্যয়—সবকিছুর জন্য হেলিকপ্টার নির্ভরতা বাড়ছে। কিন্তু আমরা চাই আরও উন্নত প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈশ্বরের কৃপায় আজ সব রক্ষা পেয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতে যদি এমন কিছু হয়?”

Helicopter emergency landing in Kedarnath

এই ঘটনা থেকে বড় শিক্ষা হল, পাহাড়ি ও দুর্ভোগপূর্ণ এলাকায় হেলিকপ্টার সার্ভিসের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি আরও সুনির্দিষ্ট আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। পাশাপাশি পাইলটদের ট্রেনিং, ইনফ্রাস্ট্রাকচার আপগ্রেড, হেলিপ্যাডের মান এবং এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আরও উন্নত করতে হবে। পর্যটকদেরও সচেতন থাকতে হবে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে না ওঠার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে চলতে হবে।দুর্ভাগ্যবশত, এই দুর্ঘটনা কোনও প্রাণহানির খবর না থাকলেও তা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ফাঁকফোকরের দিকেই আঙুল তুলেছে। এটি ভবিষ্যতের জন্য এক সতর্কবার্তা। একদিকে যেমন প্রশাসন বলছে তারা সব রকম পদক্ষেপ নেবে, অন্যদিকে তীর্থযাত্রীদের মনে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ—”আমরা কি নিরাপদ?”

শেষমেশ বলা যায়, এদিন কেদারনাথে যে ঘটনা ঘটল তা একদিকে যেমন রুদ্ধশ্বাস ও আতঙ্কজনক, অন্যদিকে ঈশ্বরের কৃপা ও পাইলটের দক্ষতায় একটি বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। এখন দেখার, এই ঘটনার পরে প্রশাসন ও কেন্দ্র কীভাবে আরও প্রযুক্তি, মানবসম্পদ এবং হেলিকপ্টার নীতির উন্নতি ঘটায় যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments