Big success for Kandi police, 5 arrested with firearms:কান্দি, মুর্শিদাবাদ। একসময় এখানকার গ্রামাঞ্চল ছিল শান্ত, সরল মানুষের বাসস্থান। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ক্রমেই অপরাধমূলক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে কান্দি। মাদক পাচার থেকে অস্ত্র কারবার—সবকিছুতেই যেন এই অঞ্চলটি হয়ে উঠছে অপরাধীদের ঘাঁটি। তবে এইসব অপরাধীদের দাপট থামাতে এবার বড়সড় সাফল্য পেল কান্দি থানার পুলিশ। রীতিমতো সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো অভিযান চালিয়ে পুলিশ আটক করল ৫ জন কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে, যাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই কান্দি থানা এলাকায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র চক্র সক্রিয় ছিল। সাধারণ মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ নজরদারি চালানো শুরু করে। শনিবার গভীর রাতে কান্দির একটি নির্জন এলাকায় পুলিশি তল্লাশি শুরু হয়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রথমে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুষ্কৃতীরা পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের সক্রিয়তা ও বুদ্ধিমত্তার কারণে তাদের পাকড়াও করা হয়।কান্দি থানার ওসি প্রিয়ম ভট্টাচার্য জানান, “আমাদের কাছে আগে থেকেই খবর ছিল যে, এই এলাকায় অস্ত্র চক্র সক্রিয়। আমরা সেইমতো গোপন নজরদারি চালাই। শনিবার রাতে তাদের ধরতে সক্ষম হই। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৩টি পিস্তল, ৬ রাউন্ড কার্তুজ এবং একটি দেশি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে।”পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতদের নাম ইমরান শেখ, কালু হালদার, রবি শিকদার, রাজু বর্মন এবং আব্দুল রশিদ। এদের প্রত্যেকেই স্থানীয় এবং দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবার, মাদক পাচার এবং অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
পুলিশের দাবি, এরা শুধুমাত্র অস্ত্র চক্রের সদস্যই নয়, বরং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করত।পুলিশ সুপার অমিতাভ ঘোষ বলেন, “এই গ্রেপ্তারের ফলে একটি বড় অস্ত্রচক্র ভেঙে গিয়েছে। আমরা আরও কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছি। এদের সঙ্গে আরও বড় কোনও গ্যাং জড়িত রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”এই গ্রেপ্তারের খবরে আপাতদৃষ্টিতে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও, অনেকেই এখনও আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ, এই চক্রের আরও অনেক সদস্য এলাকায় লুকিয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ। কান্দি বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মোহন সরকার জানালেন, “এখানে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে লোকেরা। আমরা কি আর শান্তিতে ব্যবসা করতে পারব? পুলিশ যদি কড়া ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এখানকার মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বেরোতে পারবে না।”পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধৃতদের মধ্যে অন্যতম ইমরান শেখ কয়েক মাস আগেই একটি বড় চোরাকারবারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। সূত্রের খবর, এই চোরাকারবারী বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাস করে এবং সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র সরবরাহ করে।

কান্দি থানার এক তদন্তকারী অফিসার জানান, “আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে, এই অস্ত্রচক্রটি আন্তর্জাতিক অস্ত্র পাচারকারী দলের সঙ্গে জড়িত। আমরা এখনো তাদের মূল মাথার খোঁজ করছি। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।”কান্দির এই চক্রের সঙ্গে একাধিক রাজনৈতিক দলের যোগসাজশের অভিযোগ উঠছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ধৃতদের মধ্যে দু’জন সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিল। যদিও পুলিশ এ বিষয়ে এখনো কিছু বলেনি, তবে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদে আরও চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, পুলিশ শুধু সামান্য কিছু লোককে ধরেই হাত গুটিয়ে নিচ্ছে।বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ বলেন, “কান্দির চক্রটি কোনও সাধারণ অস্ত্র চক্র নয়। এর পেছনে বড় মাথারা লুকিয়ে রয়েছে। পুলিশ শুধু নিম্নস্তরের লোকদের ধরছে, কিন্তু যারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই অস্ত্র কারবার চালাচ্ছে, তারা এখনও ধরা পড়ছে না।’’অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা রাকেশ পাল পাল্টা দাবি করেন, “পুলিশ যা করছে, তা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই। অপরাধী যে-ই হোক, তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আমরা কোনও দুষ্কৃতীকে রক্ষা করব না।’’