Blood donation camp initiated by Durgapur Police Station:দুর্গাপুর। লোহার শহর, ইস্পাত নগরী। তবে আজকের দুর্গাপুর আরও বেশি মানবিক, আরও বেশি মানবসেবায় নিবেদিত। শনিবার সকাল থেকেই দুর্গাপুর থানার উদ্যোগে এ জোনের একটি হলে ভিড় জমিয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। কারণ সেখানে আয়োজন করা হয়েছে এক বিশাল রক্তদান শিবির। শুধু রক্তদানই নয়, পাশাপাশি বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরেরও আয়োজন করা হয়েছে। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের অধীনস্থ দুর্গাপুর থানা যেন একদিনের জন্যে হয়ে উঠল মানবতার মিলনস্থল।মানবিকতায় পুলিশের ভূমিকা:সাধারণত পুলিশ মানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধী ধরপাকড়। কিন্তু সেই পুলিশ যখন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্ত সংগ্রহে এগিয়ে আসে, তখন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এদিনের রক্তদান শিবিরে দুর্গাপুর থানার পুলিশ আধিকারিকদের পাশাপাশি এলাকার বহু সাধারণ মানুষও অংশগ্রহণ করেন। রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। মন্ত্রী মশাই বলেন, “রক্তদান হল মহৎ কর্ম। দুর্গাপুর থানার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।’’শিবিরে উপস্থিত ছিলেন আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবি দত্ত, আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি পূর্ব অভিষেক গুপ্তা সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকেরা। ডিসিপি অভিষেক গুপ্তা বলেন, “পুলিশ শুধু অপরাধ দমনই করে না, সমাজের কল্যাণেও কাজ করে। এই রক্তদান শিবিরের মাধ্যমে আমরা মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’’এই মহৎ উদ্যোগটি সফল করতে পাশে ছিল দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল, ব্লাড ডোনার্স ফোরাম ও আসানসোলের লাইফ লাইন হাসপাতাল। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিককালে রক্তের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সার, দুর্ঘটনা ইত্যাদিতে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন। তাই এই ধরনের রক্তদান শিবির অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
লাইফ লাইন হাসপাতালের মুখ্য চিকিৎসক ডঃ সুব্রত সরকার বলেন, “আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিনই রক্তের চাহিদা থাকে। অনেক রোগী রক্তের জন্য জীবন-মৃত্যুর সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকেন। দুর্গাপুর থানার এই উদ্যোগ সেই সব মানুষের জীবন বাঁচাতে অত্যন্ত সহায়ক।”রক্তদান শিবিরের পাশাপাশি আয়োজিত হয় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির। সেখানে রক্তচাপ, ব্লাড সুগার, হিমোগ্লোবিন, ইসিজি সহ একাধিক পরীক্ষা করা হয়। এর ফলে এলাকার মানুষ তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন। অনেকেই জানান, তাঁরা জানতেনই না যে তাঁদের রক্তচাপ বা সুগার লেভেল এতটা বেড়ে গিয়েছে।স্বাস্থ্য শিবিরে উপস্থিত সুমনা দত্ত বলেন, “আমি কখনও ভাবিনি আমার সুগার লেভেল এতটা বেড়ে গিয়েছে। আজকের শিবিরে এসে পরীক্ষা করিয়ে তা জানতে পারলাম। এখন থেকে আরও সচেতন থাকতে হবে।’’রক্তদাতাদের উৎসাহিত করতে দুর্গাপুর থানার পক্ষ থেকে তাঁদের হাতে একটি করে প্রশংসাপত্র ও ছোট্ট উপহার তুলে দেওয়া হয়। শিবিরে রক্তদানকারী এক তরুণ শিক্ষার্থী রাহুল দাস বলেন, “প্রথমবার রক্ত দিলাম। সত্যি বলতে একটু ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু যখন শুনলাম আমার রক্ত কোনও অসুস্থ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে কাজে আসবে, তখন মনটা আনন্দে ভরে উঠল।’’
এ ধরনের রক্তদান শিবির আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র রক্ত সংগ্রহ করা নয়, বরং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। দুর্গাপুর থানার এক আধিকারিক বলেন, “অনেকেই এখনও রক্তদানে ভয় পান। আমরা সেই ভয় কাটানোর চেষ্টা করছি। রক্তদানের মাধ্যমে একজন সুস্থ মানুষের শরীর থেকে রক্ত দিলে সে আবারও রক্ত তৈরি করতে সক্ষম। কিন্তু সেই রক্ত কারও জীবন বাঁচাতে পারে।’’আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবি দত্ত বলেন, “এই ধরনের শিবিরগুলো শুধুমাত্র রক্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নয়। এটি মানুষের মধ্যে মানবিকতার বীজ বপন করে। রক্তদান মহৎ কাজ। পুলিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগে আমরা গর্বিত।’’দুর্গাপুর থানার তরফে জানানো হয়েছে, “এই শিবিরটি শুধুমাত্র একদিনের জন্য নয়। আগামী দিনে আরও বড় আকারে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হবে। এছাড়াও, প্রতি মাসে একটি করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।’’এ ধরনের রক্তদান শিবির কেবলমাত্র রক্ত সংগ্রহই করে না, বরং মানুষের মধ্যে মানবিকতার বীজ বপন করে। আজকের দুর্গাপুরে মানুষ যেন এক মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। প্রত্যেকটি রক্তদানকারী আজ যেন একেকজন ‘লাইফ সেভার’। আর পুলিশের এই উদ্যোগ তাদের প্রতি নতুন আস্থা তৈরি করল।