Chief Minister meets riot victims in Shamsherganj: সোমবার সকালে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক দাঙ্গার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। বিডিও অফিসের প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই আশ্রয়হীন, ক্ষতিগ্রস্ত এবং আতঙ্কিত মানুষরা মুখ্যমন্ত্রীর চারপাশে ভিড় জমাতে শুরু করেন। কারও হাতে জ্বলন্ত পোস্টার, কারও চোখে কান্নার রেখা। মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে ধরেই অনেকে বলতে থাকেন, “দিদি, আমাদের কিছু নেই। বাড়ি ভেঙে দিয়েছে। দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে। কোথায় যাবো?” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে শান্ত হতে বলেন। শামশেরগঞ্জের বিডিও অফিসে বসেই তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সমস্যা শোনেন। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন। প্রত্যেকের সমস্যার কথা মন দিয়ে শোনেন। এরপরই তিনি আশ্বাস দেন, “আমি আপনাদের পাশে আছি। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে সরকার সাহায্য করবে। বাড়ি ভেঙে গিয়েছে? নতুন বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। দোকান পুড়ে গিয়েছে? ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।
আর যে সমস্ত পরিবার এখনও আতঙ্কে রয়েছেন, তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।” সামশেরগঞ্জের পরে মুখ্যমন্ত্রী সোজা চলে যান সুতিতে। সেখানে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তিনি। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন তেহট্টের নিহত জওয়ানের পরিবার এবং সামশেরগঞ্জের দাঙ্গায় নিহতদের পরিবার। মুখ্যমন্ত্রী তাদের সান্ত্বনা দেন এবং বলেন, “জীবন হারানো ফিরে আসবে না। কিন্তু সরকার আপনাদের পাশে থাকবে। আমাদের প্রিয় জওয়ান, আমাদের প্রিয় মানুষরা যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের পাশে সরকার থাকবে।” প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। শুধুমাত্র ভোটে জিতে বসে থাকলে হবে না। জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় যেতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “যে সমস্ত প্রশাসনিক আধিকারিকরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’ সামশেরগঞ্জের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির মধ্যে আতঙ্ক এখনো কাটেনি। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাসান জানান, “আমাদের পাড়ার পাঁচটি বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। দোকান লুট হয়েছে।
আমার স্ত্রী এখনও আতঙ্কে কাঁদছে। রাতের বেলায় ঘুমোতে পারছি না।’’ এদিকে সামশেরগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইমরান শেখ বলছেন, “দাঙ্গার পর থেকে ব্যবসায় লাটে উঠেছে। বাজারে কেউ আসছে না। লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন, আমরা আশা করছি এবার হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে এলাকাজুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তা। সামশেরগঞ্জ ও সুতির বিভিন্ন প্রবেশপথে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। রাস্তায় চলছে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের টহল। সামশেরগঞ্জের পর সুতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সতর্কবার্তা দেন। তিনি বলেন, “আপনারা যে শুধুমাত্র ভোটে জিতে বসে থাকবেন তা হবে না। এলাকার মানুষ যদি কাঁদে, তাহলে আপনাদেরও কাঁদতে হবে। যদি কোনও বাড়ি জ্বলে, তাহলে আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। তাদের সমস্যা শুনতে হবে।’’ মমতার এই সফরের প্রেক্ষিতে রাজ্য রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নতুন জল্পনা। শাসক দলের একাংশ মনে করছেন, মমতার এই সফর আসলে দাঙ্গায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা।
তবে বিরোধীরা বলছে, এটি লোকদেখানো। বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহ বলেন, “দাঙ্গা হওয়ার আগেই যদি প্রশাসন সক্রিয় থাকত, তাহলে আজ মুখ্যমন্ত্রীকে এখানে এসে নাটক করতে হতো না। মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা প্রতারিত বোধ করছে।’’ অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা মনোজ বিশ্বাসের কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী দাঙ্গার পর এসে শুধু আশ্বাস দেন। কিন্তু বাস্তবে কতজনের ক্ষতিপূরণ পাওয়া হয়েছে? সরকার শুধু কথা বলে, কাজ করে না।’’ সামশেরগঞ্জের দাঙ্গার পেছনে কোন গোষ্ঠী জড়িত, তা নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। গোটা এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। বিশেষ করে যেসব এলাকায় দাঙ্গা ছড়িয়েছিল, সেখানে পুলিশের পাশাপাশি আধাসেনাও মোতায়েন করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুতির সভায় আরও বলেন, “আমাদের রাজ্যে কোনও অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। যারা সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াতে চাইছে, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’’ তবে সামশেরগঞ্জের সাধারণ মানুষ এখনো আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকেই বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন, এটা ভালো। কিন্তু আমাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা লুট হয়েছে। সেই ক্ষতি কি পূরণ হবে? আমরা আবার কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব?’’ সামশেরগঞ্জ ও সুতির পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি প্রশাসনের নজরদারিতে। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের পরিপ্রেক্ষিতে এখন অপেক্ষা, তিনি কিভাবে বাস্তবায়িত করবেন তার প্রতিশ্রুতি। মানুষ চাইছে, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি যেন শুধু কথার ফুলঝুড়ি না হয়। বরং তার বাস্তবায়ন দেখা যায় মাঠে-ময়দানে।