Monday, July 28, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যইরানের আদালতে জঙ্গি হামলায় নিহত ৮, আহত ১৩

ইরানের আদালতে জঙ্গি হামলায় নিহত ৮, আহত ১৩

8 killed, 13 injured in terrorist attack on Iranian court : ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের এক শান্ত শহর, জাহেদান। সাধারণত এই শহরের সকালগুলো যেমন শান্তিপূর্ণ, আজ তা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। আদালতের চত্বরে আচমকাই ছড়িয়ে পড়ে গোলাগুলির শব্দ, ধোঁয়া, চিৎকার আর আতঙ্ক। ঘটনাটি ঘটে সিসতান-বালুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী জাহেদানে, যেখানে সকালবেলায় একটি বিচারালয়ে জইশ আল-আদল নামক সুন্নি জঙ্গি সংগঠনের ভয়াবহ হামলায় কেঁপে উঠেছে গোটা অঞ্চল। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, একদল জঙ্গি আচমকাই প্রবেশ করে আদালতের মূল ভবনে, এবং সরাসরি বিচারকদের চেম্বার লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। মুহূর্তেই রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়ে করিডোর, চারদিকে ছুটোছুটি, আর্তনাদ। প্রথমদিকে মানুষ কিছু বুঝে উঠতে পারেনি, ভাবছিল ছোটখাটো কোনও গোলযোগ। কিন্তু দ্রুত পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়, যখন একের পর এক গুলির শব্দ, মানববোমার বিস্ফোরণ, আর আহতদের চিৎকার courtroom-এর পরিবেশকে রণক্ষেত্রে পরিণত করে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এই হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ৩ জন হামলাকারী বলেই শনাক্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৩ জন, যাঁদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। আহতদের মধ্যে বিচার বিভাগীয় আধিকারিক ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জঙ্গিদের টার্গেট ছিল বিচারপতির ঘর, যেখানে তারা প্রবেশ করেই নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। বালুচ অধিকার রক্ষা গোষ্ঠী “হালভস” জানিয়েছে, এই হামলার জন্য মূলত দায়ী সুন্নি চরমপন্থী সংগঠন জইশ আল-আদল, যারা ইতিমধ্যেই এই ভয়াবহ কাজের দায় স্বীকার করেছে। এই গোষ্ঠীটি বহুদিন ধরেই ইরানের সংখ্যালঘু সুন্নি সম্প্রদায়ের হয়ে কথিত ভাবে লড়াই করছে এবং অতীতে বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। তবে এবার তারা বিচার বিভাগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে গোটা দেশকে হতবাক করে দিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্রে খবর, একাধিক বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তারা আদালতে প্রবেশ করে, এবং একটি মানববোমা বিস্ফোরণ ঘটায় আদালতের মূল ভবনের কাছেই। আশেপাশের মানুষ গুলির শব্দ শুনে আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে পড়েন, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, রাস্তাঘাট প্রায় শুনশান। হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ইরানের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে তারা তল্লাশি অভিযান শুরু করে এবং আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা হামিদ রেজা বলেন, “আমি দোকানে ছিলাম, হঠাৎ বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনে বাইরে বের হই। দেখি মানুষ দৌড়াচ্ছে, কেউ কান্নাকাটি করছে, কেউ চিৎকার করছে—মনে হচ্ছিল যুদ্ধ শুরু হয়েছে।” অন্যদিকে আদালতের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জঙ্গিরা এত দ্রুত ভিতরে ঢুকেছিল যে আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।

eisamay 2025 07 26 oz4jw85y 26 Iran 1 1 2507261715

শুধু গুলির শব্দ শুনে সবাই পড়ে গিয়েছিল মেঝেতে। আমি নিজের জীবন নিয়ে কোনও মতে পালাতে পেরেছি।” ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করা এবং বিচার বিভাগের কাজে বিঘ্ন ঘটানো। তবে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং হামলাকারীদের বেশিরভাগকেই নিকেশ করেছে। আহতদের চিকিৎসা চলছে, এবং শহরের সমস্ত হাসপাতালগুলিতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এই ঘটনার পরে দেশের সর্বত্র নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে বিচারালয়, পুলিশ স্টেশন এবং অন্যান্য সরকারি দপ্তরগুলিতে কঠোর নজরদারি শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলা শুধুমাত্র জইশ আল-আদলের একটি উগ্র পদক্ষেপ নয়, বরং এর পিছনে বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা, সংখ্যালঘুদের অবহেলা, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা—সব মিলিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, ইরানের এই সন্ত্রাসী হামলা শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেই নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

iran cover

একদিকে সিরিয়া, অন্যদিকে ইরাক, এবং এখন ইরান—চরমপন্থীদের ক্রমবর্ধমান হামলা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে এবং ইরান সরকারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, “নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরণের হামলা আন্তর্জাতিক শান্তির পরিপন্থী।” হামলার পর ইরান সরকার তদন্ত শুরু করেছে এবং কিছু সন্দেহভাজনকে আটকও করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সিসতান-বালুচিস্তান প্রদেশ এমনিতেই ইরানের একটি সংবেদনশীল এলাকা, যেখানে বহু বছর ধরেই ধর্মীয় সংঘর্ষ, গরিবি এবং সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চলছে। তাই এই অঞ্চলে বারবার হামলার ঘটনা ঘটছে। তবে এবার আদালতের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এই ধরনের হামলা গোটা দেশকে স্তম্ভিত করেছে।

Gaza 5

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—এত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে জঙ্গিরা ভিতরে প্রবেশ করতে পারল? আর কতদিন সাধারণ মানুষ এইভাবে আতঙ্কে দিন কাটাবে? কতজন বিচারক, সরকারি কর্মচারী, বা সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারাবে এই ধর্মীয় উন্মাদনার বলি হয়ে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর এখন খুঁজছে ইরান প্রশাসন। জাহেদানের মানুষজন এখন আতঙ্কে ভুগছেন। শহরের স্কুল, কলেজ, এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই শহর ছাড়তে চাইছেন, আবার কেউ কেউ সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তবে প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, অতিশীঘ্রই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং শহরের শান্তি ফিরিয়ে আনা হবে। শেষ কথা, এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল—সন্ত্রাসবাদ এখনও বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ। ধর্ম, রাজনীতি, বিভাজন, আর প্রতিহিংসা যখন একসাথে মিশে যায়, তখন আদালতের গ্যালারিও যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। আর সেই যুদ্ধের বলি হয় সাধারণ নিরপরাধ মানুষ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments