5 dead in collision between lorry and auto in Kanthi:-এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি মহকুমায়। 116 বি জাতীয় সড়কের ইরিঞ্চি ব্রিজের কাছে শুক্রবার দুপুরে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় লরি ও অটোর সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও তিনজন। জানা গিয়েছে, মৃতরা সকলেই কাঁথির বসন্তিয়া এলাকার বাসিন্দা। দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রয়েছে তিনজন মহিলা ও দুইজন পুরুষ। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গোটা এলাকা জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। চোখের জল আর হাহাকার যেন ছেয়ে গেছে চারপাশে।ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার দুপুরে, যখন বৃষ্টি ভেজা রাস্তা ধরে একটি অটো কাঁথির দিকে ফিরছিল। জানা যায়, দিল্লিতে থাকা দুই বোন পরিবার নিয়ে মেছেদা স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে, সেখান থেকে অটোতে করে কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের চালতি এলাকায় বাপের বাড়ি ফিরছিলেন। অটোতে ছিলেন দুই বোনের পরিবারের আটজন সদস্য এবং অটোর চালক—মোট ৯ জন। সেই সময় ইরিঞ্চি ব্রিজের কাছে আচমকা পিছন থেকে একটি ডাম্পার লরি ওই অটোতে সজোরে ধাক্কা মারে। প্রচণ্ড ধাক্কায় অটোটি সামনের দিকে ছিটকে গিয়ে আরেকটি ডাম্পারে ধাক্কা মারে। মুহূর্তের মধ্যে অটোটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনার তীব্রতা এতটাই ছিল যে অটোয় বসা যাত্রীদের রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত দেহ চারদিকে ছিটকে পড়ে।

স্থানীয়রা এবং পথচারীরা দ্রুত এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করতে শুরু করেন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় খেজুরি ও মারিশদা থানার পুলিশ। হেঁড়িয়া থানার পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, পাঁচজনকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। আহত তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সৌমিত্র মাইতি বলেন, “আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, তবে মাথায় গুরুতর আঘাত এবং রক্তক্ষরণের কারণে জটিলতা বেড়েছে।”মৃতদের মধ্যে রয়েছেন দুই বোনের পরিবারের তিনজন মহিলা এবং দুইজন পুরুষ। দুর্ঘটনায় নিহত প্রমিলা দাস (৪৫), মঞ্জু দাস (৩৮), দীপক দাস (৫০), শচীন দাস (৪২), এবং লক্ষ্মী দাস (৬৫)। আহতদের নাম জানা গিয়েছে—রিমা দাস (১২), পল্লবী দাস (১৪) এবং অটো চালক সুশান্ত জানা (৩২)। এক মুহূর্তেই স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় বিধ্বস্ত হয়েছে দুই পরিবারের স্বপ্ন। গ্রামের মানুষজন স্তব্ধ, এক অজানা শূন্যতা ঘিরে ফেলেছে সবাইকে। নিহতদের বাড়িতে কান্নার রোল উঠেছে। নিহত দীপক দাসের স্ত্রী রেখা দাস বলেন, “আমার স্বামী কাজে যাচ্ছিল, কে জানতো এমন দুর্ঘটনা ঘটবে! আমাদের সংসার শেষ হয়ে গেল।” একইসঙ্গে নিহত প্রমিলা দাসের মেয়ে পায়েল কান্না গলায় বলে, “মা সকালে ফোন করেছিল, আসছে বলেছিল। আমরা অপেক্ষা করছিলাম… এখন কী হবে আমাদের!”
এই ঘটনার পর ইরিঞ্চি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় যান চলাচল প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে। ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডাম্পার গুলোর বেপরোয়া গতিই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তারা জানিয়েছেন, প্রায়ই এই এলাকায় বড় গাড়িগুলি নিয়ন্ত্রণহীন গতিতে চলে, এবং কোনও নিয়মকানুন মানে না। স্থানীয় ব্যবসায়ী সঞ্জয় জানা বলেন, “এই রাস্তায় নিয়মিত বড় গাড়ি চলে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। প্রশাসন যদি নজর দিত, তাহলে এই দুর্ঘটনা হয়তো হত না।”এদিকে, কাঁথি মহকুমা শাসক (SDO) অনন্যা দত্ত জানিয়েছেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে আছি। নিহতদের পরিবারকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার সমস্ত খরচ সরকার বহন করবে।” পুলিশ সুপার অমিত কুমার রায় জানান, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনায় দোষী ডাম্পার চালক পলাতক। তাকে খুঁজতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ট্রাফিক নিয়ম ভাঙা গাড়ি এবং গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
)
এই দুর্ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাস্তাঘাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। বিশেষ করে বৃষ্টির মধ্যে বড় গাড়িগুলোর নিয়ন্ত্রণহীন গতিবিধি এবং অতি দ্রুতগতির কারণে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। স্থানীয়রা চাইছেন, দ্রুত এলাকায় স্পিড ব্রেকার বসানো, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বুথ তৈরি, এবং নজরদারি বাড়ানো হোক, যাতে আর কোনও পরিবারকে এভাবে প্রিয়জন হারাতে না হয়।সবশেষে বলা যায়, কাঁথির ইরিঞ্চি ব্রিজের এই দুর্ঘটনা শুধুই পাঁচটি প্রাণের মৃত্যু নয়, এটা প্রশাসনিক গাফিলতি, অসাবধানতা, আর নিয়ম না মানার মূর্ত প্রতিফলন। সাধারণ মানুষ চাইছে, এই শোকের আবহ যেন কোনও রাজনৈতিক নাটকে পরিণত না হয়, বরং সরকার এবং প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে প্রয়াতদের আত্মার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে যেন সকলে দাঁড়ায়, এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।