5 arrested with huge quantity of ganja in Bhangarh: ভাঙ্গড় যেন আবারও মাদক চক্রের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে — এমনই উদ্বেগজনক ছবি উঠে এলো বুধবার সকালে, যখন পোলারহাট থানার পুলিশ এক অভিযান চালিয়ে হাতিশালা এলাকা থেকে একটি হলুদ ট্যাক্সি আটক করে এবং সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রায় পাঁচটি বড় ব্যাগ ভর্তি গাঁজা, যার আনুমানিক বাজারমূল্য কয়েক লক্ষ টাকা, এমনকি কোটি ছাড়াতে পারে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। এই ঘটনার জেরে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন ট্যাক্সি চালকও। গোটা ঘটনাটির সূত্রপাত এক গোপন খবরে, যা পুলিশকে জানানো হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে, আর সেই সূত্র ধরেই ভোরবেলা হাতিশালায় ফাঁদ পাতেন পোলারহাট থানার অফিসাররা। জানা গেছে, ধৃতরা কোচবিহার থেকে ট্রেনে করে শিয়ালদহ আসে, তারপর নিউটাউনের অ্যাকোয়াটিকায় যাওয়ার নাম করে একটি হলুদ ট্যাক্সি ভাড়া নেয়। কিন্তু চালককে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তারা ভাঙ্গড়ের দিকে রওনা হয় — আর এখানেই পুলিশ আগে থেকেই ছক কষে রেখেছিল পুরো ফাঁদ। হঠাৎ করেই হাতিশালা এলাকায় ট্যাক্সিটিকে থামানো হয়, এবং দুঘণ্টা ব্যাপী তল্লাশির পর পাঁচটি ব্যাগ ভর্তি গাঁজা পাওয়া যায়, প্রতিটি ব্যাগেই প্রায় ১৫-২০ কেজি করে গাঁজা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে এই গাঁজা উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে এনে ভাঙ্গড়ের মধ্য দিয়ে কলকাতায় পাচার করা হতো। ধৃতদের নাম এখনও পুলিশ প্রকাশ করেনি, তবে জানা গেছে তাদের মধ্যে দু’জন কোচবিহারের বাসিন্দা, এক জন মালদহের, এবং বাকি দু’জন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা।
গোটা ঘটনায় পুলিশি তৎপরতা ও গোয়েন্দা নজরদারি যে কীভাবে বড় এক মাদক চক্রের পরিকল্পনা ভেস্তে দিল, তা নিয়েই এখন আলোচনা তুঙ্গে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু ফোন নম্বর, রুট ম্যাপ এবং আরও কয়েকটি গন্তব্যের নাম পাওয়া গেছে — যা থেকে আগামী দিনে আরও বড় চক্র ভাঙার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে। পোলারহাট থানার এক সিনিয়র অফিসার বলেন, “আমরা কিছুদিন ধরেই এই চক্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। গোপন সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী হাতিশালা এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল। পরিকল্পনামাফিক আমরা অভিযানে নামি, এবং সন্দেহজনক ট্যাক্সিটিকে আটকে এই বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করি।’’ তিনি আরও বলেন, “এই চক্রের সঙ্গে আরও বড় কোনো গ্যাং যুক্ত রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ধৃতদের মোবাইল কল রেকর্ড, যোগাযোগের সূত্র সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এই ঘটনার পর ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। হাতিশালা গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা বাবুলাল শেখ বলেন, “এখানে আগে এসব তত দেখা যায়নি। এখন মাদকের কারবার শুরু হলে আমাদের ছেলেমেয়েরা বিপথে চলে যাবে। পুলিশ সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিয়েছে, না হলে জানি না কী হত!” একইভাবে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান সুমনা বিবি জানান, “আমরা পুলিশ প্রশাসনের পাশে আছি। এই ধরণের বেআইনি কাজে যারা যুক্ত, তাদের যেন কঠিন শাস্তি হয়।” প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে, ভাঙ্গড় এবং আশপাশের অঞ্চলে নজরদারি আরও জোরদার করা হবে। বিশেষ করে, উত্তরবঙ্গ থেকে আসা যানবাহনের ওপর বাড়তি নজর থাকবে যাতে মাদকের প্রবেশ রোখা যায়। শিক্ষামহল ও সমাজকর্মীরাও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সমাজকর্মী রেজাউল হক বলেন, “ভাঙ্গড় এমনিতেই রাজনৈতিক সংঘাতের জন্য চর্চায় থাকে। তার ওপর মাদক কারবার শুরু হলে এলাকায় সামাজিক অবক্ষয় বাড়বে। এটা বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।” ভাঙ্গড় এর আগেও বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, জমি আন্দোলন কিংবা অবৈধ নির্মাণের জন্য। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল মাদক পাচার কাণ্ড। পুলিশের সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে, তবে এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে — এই চক্রের শিকড় কতটা গভীরে বিস্তৃত? আগামী দিনে এর পিছনে থাকা মূল মাথাদের খুঁজে বের করা এবং রুট পুরোপুরি বন্ধ করা ছাড়া মাদকের এই করাল ছায়া কাটবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ধৃতদের আদালতে তোলা হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই র্যাকেট ভেঙে আরও কোন কোন নাম উঠে আসে এবং এই গ্যাং কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে নেটওয়ার্ক বিস্তার করেছিল তা কীভাবে সামনে আসে। একমাত্র পুলিশি দক্ষতা ও জনসচেতনতা মিলেই এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে ভাঙ্গড়ের মতো এলাকা।