450 kg python found on JCB:জঙ্গল কাটার কাজ চলছিল জোরকদমে। জেসিবি মেশিন মাটি খুঁড়ে তুলছিল গভীর স্তর থেকে একের পর এক স্তর। হঠাৎই দেখা গেল, মাটির গহ্বর থেকে উঠছে কিছু যেন অস্বাভাবিকভাবে মোটা, লম্বা আর ছটফট করতে থাকা। মুহূর্তের মধ্যেই চেনা গেল—এটা কোনও গাছের ডাল নয়, মাটি থেকে বেরিয়ে আসছে এক ভয়ঙ্কর বিশাল সাপ! সেই সাপটিকে যখন সম্পূর্ণভাবে তোলা হল, তখন গোটা দল থমকে গেল। কারণ এমন আকৃতির সাপ সাধারণত দেখা যায় না, এমনকি কল্পনাও করা কঠিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও অনুসারে, দৈত্যাকার এই সাপটি প্রায় ৩৪ ফুট লম্বা এবং ওজন প্রায় ৪৫০ কেজি!এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে, তবে ভিডিওটির স্থান বা সময়ের সত্যতা এখনও যাচাই করতে পারেনি ‘খবর বাংলা’। ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে ও এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে ‘রাইট সিংহ’ নামে এক হ্যান্ডল থেকে এটি প্রথম পোস্ট করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, জেসিবি-র ফর্কলিফটের সঙ্গে আটকে থাকা সাপটি এক পর্যায়ে ছটফট করছে, মাথা নাড়াচ্ছে এবং তার অতিকায় শরীর ঝাঁকিয়ে যাচ্ছে—যেন সে বুঝিয়ে দিচ্ছে, মানুষ যেমনই শক্তিশালী হোক, প্রকৃতির শক্তিকে খাটো করে দেখা যায় না।ভিডিওর নিচে বহু মানুষ মন্তব্য করেছেন একরাশ অবাক হয়ে, কেউ লিখেছেন, “এটা কোনো সাপ নয়, যেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের দানব!” আবার কেউ বলছেন, “এই কারণেই জঙ্গল কাটা বন্ধ করা দরকার, কারণ আমরা জানিই না প্রকৃতির গভীরে কী লুকিয়ে আছে।”বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই সাপটি অ্যানাকোন্ডা নয়, যেমনটা প্রাথমিকভাবে অনেকেই ভেবেছিলেন।
বরং এটি একটি ‘রেটিকুলেটেড পাইথন’, যা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সাপগুলির মধ্যে একটি। এই প্রজাতির পাইথন সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গল, বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, তবে আমাজন বনের কাছাকাছি এলাকায়ও এদের বড় আকারের কিছু নজির রয়েছে বলে গবেষকরা জানাচ্ছেন।বিশিষ্ট সরীসৃপ গবেষক ডঃ সৌভিক হালদার বলেন, “রেটিকুলেটেড পাইথনের লম্বা হওয়া নতুন কিছু নয়, তবে এই আকারের পাইথনের খোঁজ পাওয়া খুবই বিরল। এর মানে, হয়তো এমন অনেক প্রাণী এখনও জঙ্গলের গভীরে রয়েছে যাদের আমরা চিনি না বা দেখিনি। জঙ্গল কেটে, বন্য প্রাণীর বাসস্থান ধ্বংস করে আমরা নিজেরাই এমন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছি যেখানে এই ধরনের প্রাণী মানুষের চোখে পড়ছে, যা একদিকে বিপদ ডেকে আনছে, অন্যদিকে এমন বিশাল জীবগুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন করছে।”ঘটনার পর থেকেই আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতেও আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। কেউ বলছে এটি ব্রাজিলের অ্যামাজন রিজার্ভ ফরেস্টের ভেতরে মাইনিং প্রকল্পের অংশ, আবার কেউ বলছে এটি একটি নির্মাণস্থলের পাশের জঙ্গল। ভিডিওতে দেখা যায়, আশপাশে নিরাপত্তার কোনও সুরক্ষা বলয় নেই, এমনকি জীবিত অবস্থায় এমন সাপ পাওয়ার পরও কোনও পশু চিকিৎসক বা বন দফতরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকৃতি রক্ষা ও জঙ্গল সুরক্ষার প্রশ্ন আবারও সামনে উঠে এসেছে।

পরিবেশকর্মীদের দাবি, জঙ্গলের গভীরে অনিয়ন্ত্রিত খনন, বনাঞ্চলের মধ্যে বড় প্রকল্পের অনুমোদন ও মনুষ্য হস্তক্ষেপ আজ প্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। একসময় যেসব প্রাণী গভীর জঙ্গলে থাকত, এখন তারা মানুষের মুখোমুখি হচ্ছে।এই ভিডিও দেখে অনেকেই চিন্তিত—“এইবার যদি মানুষ না থামে, তাহলে হয়তো আগামী কয়েক দশকে এমন দানবীয় সাপকেও হারিয়ে যেতে হবে।” কারণ জঙ্গল না থাকলে এই প্রাণীদের টিকে থাকার সম্ভাবনাও থাকবে না।অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে বিস্ময়ের পাশাপাশি কিছুটা আতঙ্কও দেখা দিয়েছে। কারও কারও আশঙ্কা, যদি এই ধরনের সাপ মানুষের বাসস্থান ঘেঁষে চলে আসে, তাহলে প্রাণনাশের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও রেটিকুলেটেড পাইথন সাধারণত মানুষের দিকে আক্রমণ করে না এবং প্রয়োজনে পালানোর পথ খোঁজে।তবে এই ভিডিও আর একটি বড় শিক্ষা দিচ্ছে—মানুষ যতই উন্নয়নের নামে প্রকৃতিকে ছিন্নভিন্ন করুক না কেন, প্রকৃতি মাঝে মাঝে তার অজানা শক্তি দেখিয়ে মানুষকে থামিয়ে দেয়, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এই পৃথিবী কেবল মানুষের নয়, অন্যান্য জীবজন্তুরও সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে।