44th Kalpataru Mela started in Durgapur : বুধবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের গামন ব্রিজ ফুটবল মাঠে ৪৪তম কল্পতরু উৎসবের শুভ সূচনা হলো। এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব শুধু দুর্গাপুর নয়, দক্ষিণ বাংলার অন্যতম বড় সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় মিলনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য এবং মেলা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব “কল্পতরু” হন। সেই দিনটি স্মরণে প্রতি বছর কল্পতরু উৎসব পালিত হয়। এই দিনটিকে বলা হয় আত্মজাগরণের দিন, যেখানে ঠাকুর তাঁর শিষ্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, “সবার চৈতন্য হোক।” সেই ঐতিহ্যকে সামনে রেখে দুর্গাপুরের এই মেলা প্রতিবছরেই এক অন্য মাত্রা পায়।
এবারের কল্পতরু উৎসবে দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত বিষ্ণু মন্দিরের আদলে তৈরি গেট বিশেষ আকর্ষণ। মেলায় ২৫০টির বেশি স্টল বসেছে, যেখানে রয়েছে খাবার, পোশাক, খেলনা, এবং স্থানীয় হস্তশিল্প। এর পাশাপাশি বইমেলাও বসেছে, যা জ্ঞানপিপাসুদের জন্য বড় আকর্ষণ। মেলায় নিরাপত্তার জন্য আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। ড্রোনের মাধ্যমে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেলা কমিটির পক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকার চেক রাজ্য সরকারের ত্রাণ তহবিলে প্রদান করা হয়। মেলা কমিটির সদস্য দীপঙ্কর লাহা বলেন, “এই উৎসব কেবল মেলা নয়, এটি মানুষের সাহায্য এবং উন্নয়নের জন্য একটি বড় মাধ্যম। আমরা চাই এই কল্পতরু উৎসব সর্বস্তরের মানুষের এক মহামিলন ক্ষেত্র হয়ে উঠুক।”
এই বছর মেলায় উপস্থিতির সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আশেপাশের জেলার মানুষজনও এই মেলায় অংশগ্রহণ করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মেলা ঘিরে তাঁদের ব্যবসার ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “কল্পতরু মেলা আমাদের জন্য বছরে একটি বড় সুযোগ। এই মেলার মাধ্যমে আমাদের পণ্য বিক্রি হয় এবং নতুন ক্রেতার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাই।”মেলার সাংস্কৃতিক দিকটিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। স্থানীয় শিল্পী থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরাও তাঁদের প্রতিভা প্রদর্শন করছেন।

কল্পতরু মেলার মতো এই ধরনের উৎসব শুধুমাত্র ধর্মীয় দিক থেকে নয়, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষের মিলন এবং সহমর্মিতার একটি বড় উদাহরণ। দুর্গাপুরের এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব বাংলার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে।