4 policemen martyred in five-day anti-militancy operation in Kashmir:কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় চলা পাঁচদিনব্যাপী সন্ত্রাসদমন অভিযানে চারজন বীর পুলিশকর্মীর শহিদ হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনাটি সমগ্র দেশকে শোকাহত করেছে। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গিদের খোঁজে পুরো এলাকা তল্লাশি করা এবং তাঁদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ইতি টানা। কিন্তু এই অভিযান শেষ হওয়ার আগেই ঘটে যায় হৃদয়বিদারক ঘটনা। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে নিহত হয় দুই জঙ্গি। তবে, তাঁদের মোকাবিলা করতে গিয়ে শহিদ হন চারজন সাহসী পুলিশকর্মী। তাঁদের আত্মত্যাগ কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সেখানকার স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে।কাশ্মীর পুলিশের একটি বিশেষ দল গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কাঠুয়া জেলার একটি গ্রামে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছিল। খবর ছিল, ওই এলাকায় কয়েকজন জঙ্গি লুকিয়ে রয়েছে এবং তারা বড় ধরনের নাশকতার ছক কষছে। এর পরই পাঁচদিন ধরে চলে এই অভিযান। জঙ্গিরা একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে তারা গুলি চালাতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ সংঘর্ষ।এই অভিযানে শহিদ হওয়া পুলিশকর্মীরা হলেন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের বিশেষ বাহিনীর সদস্য।
তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইন্সপেক্টর আসিফ আহমেদ, কনস্টেবল ইমরান খান, এসআই মনজুর আলি এবং এসএইচও ফারহান আনসারি। শহিদদের পরিবার এবং সহকর্মীরা এই ঘটনায় গভীর শোকে ভেঙে পড়েছেন। ইন্সপেক্টর আসিফ আহমেদের স্ত্রী জানান, “আমার স্বামী দেশকে রক্ষা করতে গিয়েছিলেন। আমি গর্বিত, কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের পৃথিবী আজ শূন্য হয়ে গেল।”এই সংঘর্ষের কারণে পুরো কাঠুয়া জেলায় এক আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বহু দোকানপাট বন্ধ রয়েছে, আর রাস্তা প্রায় জনশূন্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্রদের উপস্থিতি একেবারেই কম, কারণ অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের বাইরে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। প্রশাসনের তরফে সাধারণ মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, কারণ তল্লাশি অভিযান এখনও সম্পূর্ণ শেষ হয়নি।স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, জঙ্গিদের পরিকল্পনা ছিল ওই অঞ্চলে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা চালানোর। তাঁদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক পাওয়া গিয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় যে তাঁরা বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশ্মীরে এই ধরনের সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারে। নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যা কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।এই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত এবং ক্ষুব্ধ। কাঠুয়ার এক দোকানদার জানান, “আমরা প্রতিদিন ভয় নিয়ে বেঁচে আছি। কখন কী হয়, সেটা কেউ জানে না। আমাদের দোকান বন্ধ করতে হয়েছে, কারণ চারদিকে শুধু সেনা আর পুলিশের গাড়ি চলছে।” আরেকজন বাসিন্দা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা শুধু আমাদের জীবনে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। আমরা চাই কাশ্মীরে শান্তি ফিরুক।”কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সন্ত্রাস দমনে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ বাহিনীকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং শহিদ পুলিশকর্মীদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “শহিদদের এই আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যাবে না। আমাদের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আরও জোরদার হবে।”