21 billion euros in arms aid to Ukraine : গত শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ইউরোপের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হলো এক ঐতিহাসিক সম্মেলন—ইউক্রেন ডিফেন্স কনটাক্ট গ্রুপের ২৭তম বৈঠক, যেখানে প্রায় ৫০টি দেশ একত্রিত হয়ে ইউক্রেনকে ২১ বিলিয়ন ইউরোর, অর্থাৎ প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল। এই বিশাল অঙ্কের সহায়তা শুধু মাত্র টাকা নয়, এর পেছনে আছে এক বিশাল বার্তা—ইউক্রেনকে একা ফেলে দেওয়া হবে না, রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা একযোগে লড়াই চালিয়ে যাবে। জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস জানিয়েছেন, শুধু এই মুহূর্তের জন্য নয়, আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত জার্মানি আরও ১১ বিলিয়ন ইউরোর সাহায্য করবে ইউক্রেনকে, যা আগেই প্রতিশ্রুত সহায়তার বাইরে অতিরিক্ত।

এই ঘোষণার পরেই গোটা সম্মেলনে একটা আলোড়ন পড়ে যায়, অনেকেই বলছেন এই সহায়তা আসলে যুদ্ধের স্থায়ীত্ব বাড়াবে, আবার অনেকেই মনে করছেন এই সহায়তা ইউক্রেনের আত্মরক্ষার জন্য একেবারে সময়োপযোগী। এই সম্মেলনের ঠিক পাশেই আরেকটা ঘটনা ঘটে যায়—প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ হঠাৎই রাশিয়া সফরে যান, এবং ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বিষয়টি নিশ্চিতও করেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়, আমেরিকা কি তাহলে দুই দিকেই খেলছে? একদিকে ইউক্রেনের পক্ষে থাকা পশ্চিমা জোট, আর অন্যদিকে ট্রাম্প শিবিরের রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা। ইউক্রেনের এই মুহূর্তের অবস্থা যেন এক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ নয়, বরং বিশ্বরাজনীতির এক কেন্দ্রীয় চরিত্র।
সম্মেলনে ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সামরিক আইন ৯ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে, যাতে জনগণকে প্রস্তুত রাখা যায় এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আরও জোরদার করা যায়। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেন, “আমরা জানি রাশিয়া থামবে না, তাই আমাদেরও থামা চলবে না। এই সহায়তা আমাদের সেনাদের মনোবল বাড়াবে, আমাদের প্রতিরক্ষা শক্তি আরও সুসংহত করবে।” এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাসেলসে উপস্থিত প্রতিটি দেশের প্রতিনিধির মুখে একরকম দৃঢ়তা ফুটে ওঠে, ইউক্রেনকে বাঁচাতেই হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সহায়তার পেছনে যেমন সামরিক হিসাব রয়েছে, তেমনি রয়েছে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক দিকও। এত বিপুল অর্থ দেওয়া মানে ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করছে। বিশেষ করে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য—এই দেশগুলোর ভেতরে বহুদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল এই যুদ্ধ নিয়ে, এখন তারা একজোট হয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোয় রাশিয়ার উপর চাপ আরও বাড়বে। তবে এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উদ্বিগ্ন। ইউরোপীয় দেশগুলোর সাধারণ নাগরিকরা প্রশ্ন তুলছেন—এই বিপুল পরিমাণ অর্থ যদি নিজেদের দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ব্যয় করা যেত, তাহলে কি ভালো হতো না? জার্মানির এক নাগরিক মার্টিন ব্ল্যাঙ্ক বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।
কিন্তু সরকার আমাদের করের টাকা অস্ত্র কেনার পেছনে ব্যয় করছে, এটা ভাবলেই মন খারাপ হয়।” অন্যদিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের এক বাসিন্দা এলিনা ওলেস্কা জানিয়েছেন, “যুদ্ধ আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছে, পরিবার ছিন্নভিন্ন। এই সহায়তা অন্তত আমাদের আশা দেয় যে আমরা একদিন আবার শান্তিতে ফিরতে পারব।” রাশিয়ার পক্ষ থেকে অবশ্য এই ঘোষণা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। তাদের মতে, পশ্চিমা জোট এই যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী করছে এবং বিশ্বকে এক নতুন ‘কোল্ড ওয়ার’-এর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, “এই সহায়তা শান্তির বার্তা নয়, বরং আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে।” বিশ্ব রাজনীতির এই উত্তাল সময়ে এই সামরিক সহায়তা শুধুই ইউক্রেনকে নয়, প্রভাব ফেলবে গোটা বিশ্বের কূটনৈতিক ভারসাম্যে। দক্ষিণ এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা থেকে লাতিন আমেরিকা—সব দেশই এখন নজর রাখছে এই যুদ্ধের গতিপথের দিকে। কারণ এই যুদ্ধ শুধু একটি দেশের উপর আগ্রাসন নয়, এটা একধরনের আদর্শগত লড়াই—স্বাধীনতা বনাম দখলদারিত্ব, গণতন্ত্র বনাম কর্তৃত্ববাদ। এই লড়াইয়ের পরিণতি ঠিক করবে আগামী দশকের বিশ্ব রাজনীতি কোন পথে হাঁটবে।