19 killed in clash between security forces and Maoists in Chhattisgarh:-ছত্তিশগড়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের সংঘর্ষে নিহত ১৯
ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষ করে দান্তেওয়াড়া ও বিজাপুর সীমান্তের জঙ্গলে বৃহস্পতিবার ভোরে ঘটে গেল এক ভয়াবহ সংঘর্ষ। এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ জন। নিহতদের মধ্যে একজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ১৮ জন মাওবাদী বিদ্রোহী। সংঘর্ষের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে পুরো এলাকাটি এখন উত্তপ্ত এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে গভীর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সংঘর্ষস্থল থেকে প্রচুর বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল মাওবাদীদের উপস্থিতির খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অভিযানে নামলে। গভীর জঙ্গলের মধ্যে মাওবাদীরা আগে থেকেই শক্তিশালী অবস্থানে ছিল এবং সেই মুহূর্তে শুরু হয় গুলি বিনিময়। সংঘর্ষ দীর্ঘ সময় ধরে চলে, যেখানে মাওবাদীরা তাদের বিশেষ কৌশল এবং অস্ত্রের মাধ্যমে আক্রমণ চালায়। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তিশালী পাল্টা আক্রমণে একে একে ১৮ জন মাওবাদী নিহত হয়।এই সংঘর্ষের পর গোটা এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। বিজাপুর এবং দান্তেওয়াড়া জেলার বহু মানুষ নিরাপত্তার কারণে ঘর থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এমন পরিস্থিতি বহুদিন ধরে চললেও সাম্প্রতিক সংঘর্ষটি ছিল খুবই ভয়ঙ্কর। গ্রামের মানুষজন বলছেন, “রাত হলেই জঙ্গলের দিকে গুলি চালানোর আওয়াজ শুনতে পাই। কখন কী ঘটে যায় তার ঠিক নেই। প্রাণ হাতে নিয়ে বেঁচে আছি।”
জঙ্গলে মাওবাদীদের এই উপস্থিতি ও সরকারি অভিযানের ফলে সাধারণ মানুষও মাঝেমধ্যে সমস্যার সম্মুখীন হন। একদিকে মাওবাদীদের হুমকি, অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া অভিযান— সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। মাওবাদী সমস্যা ভারতের জন্য নতুন নয়। বিশেষ করে ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে মাওবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। মাওবাদীরা মূলত তাদের আদর্শগত লড়াইয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আসছে। তাদের দাবি, ভূমিহীন কৃষক, গরিব শ্রমিক, এবং আদিবাসীদের অধিকারের জন্য তারা লড়াই করছে। কিন্তু বাস্তবে এই লড়াই কেবল সহিংসতা আর রক্তপাতকেই বাড়িয়ে চলেছ
ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চলটি মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলটি জঙ্গলে ঢাকা, যেখানে মাওবাদীরা গোপন ঘাঁটি তৈরি করে রেখেছে। নিরাপত্তা বাহিনী বহু বছর ধরে এই অঞ্চলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান আজও হয়নি।
এই ঘটনার পর ছত্তিশগড় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাওবাদী দমনে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী অভিযান চালানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল জানিয়েছেন, ‘‘আমরা আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সাহসী সদস্যদের কুর্নিশ জানাই। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরও জোরদার হবে এবং এই ধরনের সহিংসতা দমন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’
তবে মাওবাদী সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগ করে করা সম্ভব নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অজয় কুমার বলেন, ‘‘মাওবাদীদের মূল সমস্যাগুলো— যেমন ভূমি অধিকার, আদিবাসীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা, এবং কর্মসংস্থানের অভাব— এই বিষয়গুলোর ওপর বেশি নজর দিলে সমস্যার মূলে আঘাত করা সম্ভব।’’চলতি বছরে ছত্তিশগড়ে মাওবাদী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান জোরদার হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৯ জন মারা গেছেন বস্তার অঞ্চলে। প্রতিটি সংঘর্ষের সঙ্গে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হচ্ছে। মাওবাদী গোষ্ঠীগুলিও পাল্টা আক্রমণ চালাতে পিছপা হচ্ছে না।
এই ধরনের সংঘর্ষ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। অনেকেই বাধ্য হয়ে নিজেদের গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে, এমনকি স্থানীয় ছোটখাটো ব্যবসাও বন্ধ হতে বাধ্য হচ্ছে। ছত্তিশগড়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের এই সংঘর্ষ শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি আসলে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার বহিঃপ্রকাশ। মাওবাদী বিদ্রোহ দমন করতে হলে শুধু সামরিক অভিযানই নয়, আদিবাসী ও গ্রামবাসীদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো জরুরি। একদিকে অস্ত্রের লড়াই, অন্যদিকে দারিদ্র্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই— এই দুই ফ্রন্টেই সফল হতে পারলে তবেই ছত্তিশগড় এবং বাকি প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে শান্তি ফিরতে পারে।